আশার আলো ছড়িয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট নিষ্প্রাণ ড্র
প্রথম সেশনে জয়ের রেনু ছড়াচ্ছিল বাংলার আকাশে। দ্বিতীয় সেশনে তা ফিকে হয়ে আসে। তৃতীয় সেশনে গিয়ে হয় নিরুত্তাপ ড্র।
দ্বিতীয় সেশনে ধনাঞ্জায়াকে মুমিনুলের দশর্ণীয় ক্যাচে সাকিব আউট করার পর বাংলাদেশের জয়ের আশা আলো ঝলমল হয়ে উঠে বেশি করে। কিন্তু এরপর দিনেশ চান্দিমাল (৩৯*) ও নিরোশান ডিকাভেলা (৬১*) যে জুটি গড়েন, সেই জুটি পরে আর ভাঙাই সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের বোলারদের। অগত্যা দিনের খেলা শেষ হওয়ার প্রায় একঘণ্টা আগেই আম্পায়াররা ম্যাচের ইতি টেনে দেন।
শ্রীলঙ্কার রান তখন ছয় উইকেটে ২৬০। প্রথম ইনিংসে তারা করেছিল ৩৯৭। রান বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ছিল ৪৬৫। টেস্ট ড্র করে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার পয়েন্ট পেল।
এই ম্যাচে দুই দলই পেয়েছে চার পয়েন্ট করে। বাংলাদেশের পয়েন্ট সাত ম্যাচে ১৬। প্রথম পয়েন্ট তারা পেয়েছিল এ বছরই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে। শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট পাঁচ ম্যাচে ২৮। ২৩ মে ঢাাকয় শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
চতুর্থ দিনের শেষ বেলাতে লঙ্কানদের দুই উইকেট তুলে নেয়ার পর বাংলাদেশ দল আজ শেষ দিন প্রথম সেশনে আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিল। লঙ্কানরা তখন মাত্র ৬০ রানে এগিয়ে। ম্যাচে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। দ্বিতীয় শেসনে বাংলাদেশ দল যদি দ্রুত আঘাত হেনে আরও কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পারে, তা’হলে জয়ের পাল্লা তাদের দিকেই হেলে পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা প্রথম শেসন পর ম্যাচের যে আবহ তৈরি হয়েছিল তাতে করে একটি টানটান পরিসমাপ্তিরই পূর্বাভাসই দিচ্ছিল। কিন্তু তার কোনো কিছুই হয়নি। সেখানে ম্যাচটি হয়েছে ম্যাড়ম্যাড়ে নিরুত্তাপ ড্র ।
ক্রিকেট এমনই। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেট। যখন-তখন রঙ বদলায়। কখনো সৃষ্টি করে উত্তেজনা। কখনো শুনায় ঘুম পাড়ানি মাসিপীষি গান। এবার চট্টগ্রাম টেস্টে যেটি শুনিয়েছেন দিনেশ চান্দিমাল ও নিরোশান ডিকাভেলা। ম্যাচের চিত্রনাট্য যখন উত্তেজনার রেনু আরও উত্তপ্ত হওয়ার অপেক্ষায়, সবাই গা ঝাড়া দিয়ে বসেছেন। লঙ্কানদের রান ছয় উইকেটে ১৬১। দ্বিতীয় শেসনের প্রথম ঘণ্টাও যায়নি। বাংলাদেশের স্পিনাররা একের পর পর হাত ঘুরিয়ে লঙ্কানদের চেপে ধরেছেন, উইকেটের জন্য ক্ষুধার্থ। ছয়টি পেয়েছেন। আরও পাওয়ার জন্য লোভাতুর হয়ে উঠেছেন, তখন চান্দিমালের সঙ্গে জুটি বাঁধেন নিরোশান ডিকাভেলা। এই জুটিই সব উত্তেজনায় পানির ঢেলে দেন। এরা জুটি বাঁধার পর তাদের আর আউটই করা সম্ভব হয়নি। তাদের এক একটি রান বাংলাদেশের আশার আলো ক্রমেই নিভে যেতে থাকে। আর যারা চাঙ্গা হয়ে বসেছিলেন উত্তেজনার বারুদ দেখতে, তাদের ঘুম পাড়িয়ে দেন। নিরোশান ডিকাভেলা ৮৩ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ২০তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬১ রানে। দিনেশ চান্দিমাল খেলেন ১৩৫ বলে ৩৯ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস। যদিও তার এই ধৈর্যশীল ইনিংসে চারটি চরের সঙ্গে একটি ছক্কা ছিল, তবে ছক্কাটি ছিল শেষের দিকে। জুটিতে তারা ৩৩.৫ ওভারে যোগ করেন ৯৯ রান। তাদের এই প্রতিরোধে আড়ালে পড়ে যায় তাইজুলের চমৎকার বোলিং। যে বোলিংয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছিল লঙ্কান শিবির। সৃষ্টি হয়েছিল উত্তেজনা। ৩৪ ওভারে ৮২ রান দিয়ে নেন চার উইকেট। একটি উইকেট নেন সাকিব। প্রথম ইনিংসে ১৯৯ করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।
চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হয়েছে সত্য। জয়-পরাজয়ের আবহ তৈরি হয়েছিল চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে আর পঞ্চম দিনের প্রথম শেসনে। বাকি সময়টুকু ছিল শুধুই খেলার জন্য খেলা আর ব্যক্তিগত রেকর্ডের মালা পড়া। খেলা শুরু হওয়ার আগে পিচ বলা হয়েছিল ব্যাটিং সহায়ক। যে কারণে দুই দলই ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে সাতজন করে নিয়ে খেলতে নামে। কিন্তু দুই দলের ব্যাটিং দেখে কিন্তু মনে হয়নি ব্যাটিং বান্ধব পিচে তারা খেলছেন। রান করতে সংগ্রাম করেছেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন অতি সাবধানী। ব্যাটিং সহায়ক পিচে এক ঘন্টা কম প্রায় পুরো পাঁচদিনই খেলা হয়েছে। সেখানে মোট রান উঠেছে ১১২২। উইকেট পড়েছে ২৬টি। ৪৫০ ওভারের মাঝে খেলা হয়েছে ৪১৩.২ ওভার। ওভার প্রতি রান ২.৭১। ব্যাটিং বান্ধব পিচে ওভার প্রতি এই রকম সংগ্রহ অবাক করার মতোই। আবার শ্রীলঙ্কার ইনিংসে বাংলাদেশের স্পিনাররা সাফল্য পেয়েছেন। ১৬ উইকেটের ১৫টিই নিয়েছেন তিন স্পিনার নাঈম-সাকিব-তাইজুল। একটি ছিল রান আউট। বিপরীতে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের সাতটিই গিয়েছে লঙ্কান পেসারদের পেটে। স্পিনাররা পেয়েছেন মাত্র দুই উইকেট। পিচের চরিত্র ছিল এমনই ত্রিমুখি।
এমপি/এমএমএ/