চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের টুকিটাকি
সায়মন্ডস স্মরণে এক মিনিট নীরবতা
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুই দলের ক্রিকেটাররাই রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলেন পরের দিন শুরু হওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টকে মাথায় রেখে। কিন্তু ঘুম ভাঙার পরই তারা জানতে পারেন দুইবারের বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য এন্ড্রু সায়মন্ডস অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের টাউন্সভিলে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন।
২০০৩ ও ২০০৭ সালে পরপর দুইটি বিশ্বকাপ জেতা অস্ট্রেলিয়া দলের গর্বিত সদস্য সায়মন্ডস স্মরণে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু হওয়ার পর ১১ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২৬ টেস্ট ও ১৯৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন। তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন ২০০৯ সালে। আর দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন ২০২২ সালে।
প্রথম সেশনেই চার রিভিউ
টেস্ট ক্রিকেটে এক একটি দল প্রতি ইনিংসে তিনটি করে রিভিউ নেওয়ার সুযোগ পায়। প্রয়োজন হলে তারা রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকুলে নেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। এখানে কখনো সফল হয়, কখনো হয় ব্যর্থ। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্টে আজ চট্টগ্রামে দুই দলই প্রথম সেশনেই দুইটি করে চারটি রিভিউ নিয়ে নেয়। যেখানে কোনো দলই একটিতেও সফল হতে পারেনি। প্রথমে রিভিউ নেন বাংলাদেশ । তখন ওভার চলছিল ৪.১ । বোলার ছিলেন শরিফুল ইসলাম। তার বল ব্যাটসম্যান ওসাদা ফার্নান্ডোর প্যাডে গিয়ে আঘাত হানে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে মুমিনুল রিভিউ নেন। তাতে দেখা যায় বল লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করেছে। ফলে খেলার শুরুতেই বাংলাদেশ হারায় একটি রিভিউ। পরের রিভিউ নেওয়া হয়েছিল শরিফুলের ওভারে।
ইনিংসের ২২.২ ওভারে তিনি বল করেছিলেন ম্যাথিউসকে। তার অফ স্ট্যাম্পের বাইরে করা বলে হঠাৎ করে ভেতরে ডুকে ম্যাথিউসের প্যাডে আঘাত করে।এবারও বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার শরফউদ্দৌল্লাহ ইবনে সৈকত। ফলে মুমিনুল নেন রিভিউ। দেখা যায় বল স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে গেছে। ফলে প্রথম সেশন শেস হওয়ার আগেই বাংলাদেশ হারায় দুই উইকেট। লঙ্কানদের দুইটি রিভিউ ছিল আউট হওয়ার দুই ব্যাটসম্যান দিমুথ করুনারত্নে ও ওসাদা ফার্নান্ডোর। কিন্তু রিভিউ নিয়ে তারা বাঁচতে পারেননি। রিভিউ নিয়ে প্রথম সফল হন ম্যাথিউস। দ্বিতীয় সেশনে ৪৪.৩ ওভারে তাইজুলের বলে ম্যাথিউসকে কট বিহাইন্ড আউটচ দিয়েছিলেন আম্পায়ার শরফউদ্দৌল্লাহ ইবনে সৈকত। তখণ তার রান ছিল ৩৮। কিন্তু তিনি নেন রিভিউ। এতে আল্ট্রা এজে দেখা যায় বল তার ব্যাট স্পর্শ করেনি। বেঁচে যান তিনি। বেঁচে যায় লঙ্কানদের শেষ রিভিউ। বাংলাদেশ দলও তৃতীয় রিভিউতে এসে সফল হয়। সাকিবের বলে ধনাঞ্জায়া ডি সিলভাকে পথম স্লিপে মাহমুদুল। হাসান জয় ক্যাচ নিলে আম্পায়ার আউট দেননি। বল ধনাঞ্জায়ার ব্যাট-প্যাড হয়ে গিয়েছিল। পরে মুমিনুল রিভিউ নিলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়।
কুশালের ব্যাট লিটনের হেলম্যাটে
যে কেউ অবাক হয়ে যাবেন কী করে কুশাল মেন্ডিসের ব্যাট উইকেটের ঈয়নে দাঁড়ানো লিটন দাসের হেলম্যাটে গিয়ে আঘাত করতে পারে! কিন্তু সেই অবাক করা ঘটনাটাই ঘটেছে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন। নাঈম হাসানের বলে লেগে গিয়ে পুল করতে চেয়েছিলেন কুশাল মেন্ডিস। কিন্তু তিনি ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটাতে পারেননি। কিন্তু ব্যাট হাত থেকে ছুটে গিয়ে আঘাত করে লিটনের হেলম্যাটে। এ সময় লিটনও একটু লেগে সরে গিয়েছিলেন। তবে মাথায় হেলম্যাট থাকায় কোনো আঘাত পাননি লিটন। পরে তিনি যথারীতি কিপিং করে যান।
অবশষে বোলিংয়ে সাকিব
সচরাচর এমনটি হতে দেখা যায় না। সাকিব দলে আছেন, আর বল হাতে নিতে বিলম্ব হবে এটা হয়নি আগে কখনো। কিন্তু আজ চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে এমনটিই হয়েছে। প্রথম সেশনে তিনি বলই হাতে তুলে নেননি। তিনি যখন প্রথম বল হাতে তুলে নেন, তখন ইনিংসের ৩৬তম ওভার সেটি। সাকিবের এ রকম বল বিলম্বে হাতে তুলে নেওয়ার কারণ তার অসুস্থতা। মাত্রই তিনি করোনা থেকে মুক্ত হয়ে শুক্রবারে চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে পরের দিন ২৫ মিনিটের ব্যাটিং অনুশীলনই ছিল সম্ভবল।
কোনো রকমের বোলিং কিংবা ফিল্ডিং তিনি অনুশীলন করেননি। হয়তো সে কারণেই তার উপর লোড কমাতেই অধিনায়ক মুমিনুল বিলম্বে বলহাতে তুলে দিয়েছিন। চা বিরতির আগে তিনি ১০ ওভারে পাঁচটি মেডেন নিয়ে মাত্র নয় রান দিয়েছিলেন। পরে আরো ৯ ওভার বোলিং করে তিনি ধনাঞ্জায়া ডি সিলভার উইকেট তুলে নেন। তবে উইকেটটি নিতে তাকে রিভিউর সহায়তা নিতে হয়েছিল। প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে তার ক্যাচ ধরেছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। কিন্তু আম্পায়ার ব্যাটে না লেগে প্যাডে লেগেছে মনে করে আউট দেননি। পরে মুমিনুল হক রিভিউ নিলে সফল হয় বাংলাদেশ। দুইটি রিভিউ ব্যর্থ হওয়ার পর তৃতীয় রিভিউতে এসে বাংলাদেশ প্রথম সফল হয়।
এমপি/এমএমএ/