উরুগুয়েকে হারিয়ে দুই যুগ পর কোপার ফাইনালে কলম্বিয়া

ছবি: সংগৃহীত
সেমিফাইনালে শক্তিশালী উরুগুয়েকে হারিয়ে দুই যুগ পর কোপা আমেরিকার ফাইনালের মুখ দেখল কলম্বিয়া। কোপা আমেরিকার ১০৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বারের মত এমন সাফল্য অর্জন করলো লস ক্যাফেতেরোসরা; যার মূল কারিগর তাদের প্রাণভোমরা হামেস রদ্রিগেজ ও নতুন আর্জেন্টাইন কোচ নেস্তোর লরেঞ্জো।
ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার উন্মাদনা ছাপিয়ে এবারের আসরে সবচেয়ে আলোচিত দুই দল ছিল কলম্বিয়া এবং উরুগুয়ে। ২০১১ সালে নিজেদের ১৫তম কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ের পর থেকে তেমনভাবে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না উরুগুয়েকে। কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েই আটকে যাচ্ছিল প্রতিযোগিতার সফলতম দলটি। কিন্তু মার্সেলো বিয়েলসার দায়িত্ব গ্রহণের পর বদলে যেতে থাকে সবকিছু; সাম্প্রতিক রেকর্ড সেটাই বলে। ১৯৬০ সালের পর একই বছরে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে হারানো একমাত্র দল ছিল উরুগুয়ে। এবারের আসরেই তারা বিদায় করেছে ব্রাজিলকে।
অন্যদিকে নেস্তোর লরেঞ্জো ছোঁয়ায় গেল দেড় বছর ধরেই দারুণ ছন্দে কলম্বিয়া। ২০২২ সালের ৯ জুলাই দায়িত্ব নেন লস ক্যাফেতেরোসদের। এর মাত্র এক বছর আগে প্রধান কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হয় তার। সামান্য এ অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই এখন কলম্বিয়ার অন্যতম সফল কোচ তিনি। নতুন এ আর্জেন্টাইন কোচের অধীনে দুই বছরে একটাও ম্যাচ হারেনি লস ক্যাফেতেরোসরা। আজকের ম্যাচের আগে টানা ২৭ ম্যাচ অপরাজিত ছিল তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় তাই দারুণ এক ফুটবল দ্বৈরথের অপেক্ষাতেই ছিল ফুটবলের ভক্তরা। কিন্তু দুই দলের কারো খেলাতেই দেখা গেল না সুস্পষ্ট পরিকল্পনার ছাপ। লাতিন আমেরিকান ফুটবলীয় শিল্পের কোনো ছোঁয়াই ছিল আজকের ম্যাচে। শরীরনির্ভর ফুটবল খেলতে গিয়ে দুই দলই ফাউল করেছে সমানে, হজম করেছে কার্ড। তবে, ম্যাচে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেন এবারের আসরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হামেস রদ্রিগেজ। ৩৯তম মিনিটে তার দারুণ এক কর্ণার কিকে মাথা ছুঁইয়ে কলম্বিয়ার জন্য গোল এনে দেন মিডফিল্ডার জেফারসন লারমা। এবারের কোপা আমেরিকা আসরে এটাই তার প্রথম গোল। আর রদ্রিগেজের ৬ষ্ঠ অ্যাসিস্ট।
অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই বড় ধাক্কা খায় লস ক্যাফেতেরোসরা। প্রথমার্ধ শেষের আগ মুহূর্তে মেজাজ হারান ডিয়েগো মিউনোজ। কনুই দিয়ে ধাক্কা মারেন উরুগুয়ের ডিফেন্সিভ মিড ম্যানুয়েল উগার্তেকে। ফলস্বরূপ মাত্র ১৪ মিনিটের ব্যবধানে দুই হলুদ কার্ড হজম করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। আর প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার আগে ১০ জনের দলে পরিণত হয় কলম্বিয়া।
যোগ করা সময়সহ দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় ৫২ মিনিট ১০ জনের দল নিয়ে খেলে লরেঞ্জো শিষ্যরা। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে একটা গোলও আদায় করতে পারেনি নুনেজ-ভালভার্দেরা। কেবল বল দখলেই যা এগিয়ে ছিল বিয়েলসা শিষ্যরা। গোল মিসের মহড়া আর ক্রসবারে গোল বঞ্চিত হওয়ার হতাশা; দুই দলের পক্ষ থেকেই পুরো ম্যাচে ভক্তদের জন্য উপহার ছিল এই। দুই অর্ধ মিলিয়ে দুদলই প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের দিকে শট করে ১১টি করে, যেখানে কলম্বিয়ার চারটি অন-টার্গেট শটের বিপরীতে মাত্র দুটি অন-টার্গেট শট ছিল নুনেজ-সুয়ারেজদের। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধের এক গোল লিডই নির্ধারণ করে দিল ম্যাচের ফল। উরুগুয়ের স্বপ্ন গুড়িয়ে ২৩ বছর পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে পা রাখলো লস ক্যাফেতেরোসরা।
বাংলাদেশ সময় আগামী সোমবার মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারনী আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে তারা। এর আগে একবারই দুই দলের দেখা হয়েছিল কোপা আমেরিকার ফাইনালে। ১৯৯১ সালে আসরের ফাইনাল রাউন্ডের সেই ম্যাচে জয়ের মুখ দেখে আলবিসেলেস্তেরা। সেবার কোপার শিরোপাও জেতে তারা। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে উরুগুয়ের পাশাপাশি ১৫টি শিরোপা জয়ের রেকর্ড আছে আর্জেন্টিনারও। পরপর দুই ম্যাচে প্রতিযোগীতার সফলতম দুই দলকে হারিয়ে শিরোপা জিততে পারলে দারুণ এক ইতিহাসই রচনা করবেন রদ্রিগেজ-ডিয়াজরা।
