ভারতীয় ভিসা নীতিতে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এখন প্রায় যাত্রীশূন্য। যেখানে আগে প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ হাজার যাত্রী পারাপার হতো, সেখানে এখন এই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র এক হাজারে। ফলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিন কাটাচ্ছেন ফাঁকা বসে, আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, ২২ থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে মাত্র ১৫,০১৮ জন যাত্রী এই চেকপোস্ট দিয়ে পারাপার করেছেন। এর মধ্যে ৭,৫৭৯ জন গেছেন ভারতে, আর ফিরে এসেছেন ৭,৪৩৯ জন।
প্রতিদিনের যাত্রী চলাচলের চিত্র—
২২ জানুয়ারি: ১,৮২৪ জন (ভারতে গেছেন ৯৭৩, ফিরেছেন ৮৫১)
২৩ জানুয়ারি: ১,৮২৮ জন (ভারতে গেছেন ৯৩৭, ফিরেছেন ৮৯১)
২৪ জানুয়ারি: ১,৮৪৭ জন (ভারতে গেছেন ৯৫৪, ফিরেছেন ৮৯৩)
২৫ জানুয়ারি: ১,৫১৩ জন (ভারতে গেছেন ৬৬৮, ফিরেছেন ৮৪৫)
২৬ জানুয়ারি: ১,৮১১ জন (ভারতে গেছেন ৮৭০, ফিরেছেন ৯৪১)
২৭ জানুয়ারি: ১,৯৭১ জন (ভারতে গেছেন ১,০৭৪, ফিরেছেন ৮৯৭)
২৮ জানুয়ারি: ১,৯৪৩ জন (ভারতে গেছেন ৯৮২, ফিরেছেন ৮৯৭)
২৯ জানুয়ারি: ২,২৮১ জন (ভারতে গেছেন ১,১২১, ফিরেছেন ১,০৬০)
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যান, তাদের প্রত্যেককে ১,০০০ টাকা 'ভ্রমণ কর' ও ৫৫ টাকা 'প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ফি' দিতে হয়। তবে ফেরত আসা যাত্রীদের জন্য কোনো কর নেই।
সরকারের রাজস্ব আয়ে ব্যাপক পতন হয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, বেনাপোল বন্দর থেকে বছরে ভ্রমণকর থেকে গড়ে ১৮২ কোটি টাকা আয় হতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে এটি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আগে যেখানে মাসে গড়ে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব আসত, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৩ কোটি টাকায়।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রফিউজ্জামান জানান, "বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে যাওয়া। বর্তমানে ভারত ভিসা দিচ্ছে না বললেই চলে। যাঁরা সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ করেছেন, তাদের বেশির ভাগেরই আগেই ইস্যু করা ভিসা ছিল। ভিসা সীমিত থাকায় সামনের দিনগুলোতে যাত্রী সংখ্যা আরও কমতে পারে।"
বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, এখন ভিসাকেন্দ্রগুলো কেবল জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সীমিত স্লট দিচ্ছে। ব্যবসা ও পর্যটন ভিসা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
ফরিদপুরের রনধীর সাহা ও ঢাকার রমেশ শীল তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে ভারত সফর করেছেন।
রনধীর সাহা বলেন, "ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল, তাই দ্রুত ভারতে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করে এলাম।"
রমেশ শীল জানান, "ভিসার মেয়াদ এই মাসেই শেষ, তাই চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে বাধ্য হলাম।"
অন্যদিকে, বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় নাগরিক আবুল কাশেম বলেন, "আগে বেনাপোল চেকপোস্টে প্রচণ্ড ভিড় থাকত, এবার কোনো ভিড় নেই। আল্লাহর রাস্তায় যাচ্ছি, ভালো লাগছে।"
বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঁইয়া জানান, "স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী ভারতে যেত। এখন সেটি নেমে মাত্র ৮০০ থেকে ১,০০০-এ দাঁড়িয়েছে। ভিসা জটিলতা না কাটলে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যাত্রী পারাপার শূন্যের কোটায় চলে যেতে পারে।"
বর্তমানে যারা যাতায়াত করছেন, তাদের বেশিরভাগেরই ভিসার মেয়াদ শেষের পথে। ভিসা ইস্যুর বিষয়টি শিগগিরই স্বাভাবিক না হলে বাংলাদেশের সরকারি রাজস্ব কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়বে।