রাঙামাটির মেয়েদের দক্ষিণ এশিয়া জয়
১৯ বছর পর সাফ ফুটবলে দেশের পতাকা উঁচু করেছে নারী ফুটবল দল। দেশের সম্মান বাড়ানো এই দলের জয়ে খুশির জোয়ারে ভাসছে হ্রদ-পাহাড়ের জেলা রাঙামাটি। নেপালের জন্য কঠিন দেয়াল হয়ে থাকা রুপ্না চাকমার রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা। অন্যদিকে ঋতুপর্ণার বাড়ি কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে রাঙামাটির আবহটা অন্যরকম। নেপালে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিকদের হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে বাংলাদেশ দল। দলের পাঁচজনই পার্বত্য চট্টগ্রামের মেয়ে। এ জয় যেন শুধু দেশের নয়, রাঙামাটিরও বিশাল জয়।
অথচ দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা রুপনার ফুটবল জীবন সহজ ছিল না। অনেক কষ্ট করে পরিবারের সমর্থনে পাহাড় থেকে উঠে দেশ জয় করেছেন। ম্যাচ শেষে ঋতুপর্ণা চাকমা, আনাই মগিনি, মনিকা চাকমা, রুপ্না ও আনুচিংদের বাড়িতে গিয়েও স্বজনদের কেউ কেউ শুভেচ্ছা জানান। ঋতুপর্ণাদের এ জয়ে খুশি তাদের স্বপ্ন দেখানো শিক্ষক ও প্রশিক্ষকরাও।
জাতীয় দলের অন্যতম সেরা এই পাঁচ নারী ফুটবলারের মধ্যে আনাই মগিনি, আনুচিং মগিনি ও মনিকা চাকমা ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। অন্য দুজনের মধ্যে ঋতুপর্ণা চাকমা ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বিকেএসপিতে চলে যান।
রাঙামাটিতে ঘাগড়ার ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন স্থানীয় কোচ শান্তি মনি চাকমা। শিষ্যদের বিজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, খেলার আগে ঋতুর সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাকে আশ্বস্ত করি ভালো কিছু হবে। পরে মোবাইলে খেলাটি উপভোগ করেছি। তাদের এ বিজয়ের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
আনাই মগিনিদের জয় নিয়ে কথা হয় বিরসেন চাকমার সঙ্গেও। তিনি বলেন, সকালে ঋতুপর্ণার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে নিজে ফোন করেছে। মনোবল না হারানোর জন্য সাহস দিয়েছিলাম। অবশেষে তাদের বিজয় হয়েছে। এ বিজয় দেশের, জাতির সেরা অর্জন।
বিরসেন চাকমা বলেন, ২০১২ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঘাগড়ার মগাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু জেলা পর্যায়ে কোনো ক্লাবই তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। রুপ্নাকে প্রথমে ২০১২ ও পরে ২০১৩ সালে খেলায় ডেকেছিলাম। কিন্তু সে আসেনি। পরে ২০১৪ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালে তাকে নিয়ে এসেছি।
রুপ্নার উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রিপন দাশ বলেন, আমরা নানিয়ারচরবাসী এ জয়ে খুবই খুশি। তাদের অভিনন্দন জানাই। আমরাও তাদের সম্মানিত করার চেষ্টা করব।
রুপ্নার আরেক কোচ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার বিকাশ দেওয়ান বলেন, এ গর্ব আমাদের সবার। আমাদের মেয়েরা দেশের মুখ আরও উজ্জ্বল করবে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের প্রতি শুভকামনা রইল। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই রাঙামাটির ঋতুপর্ণা চাকমা, আনাই, মনিকা, রুপ্না ও আনুচিংকে। তারা রাঙামাটি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের নাম উজ্জ্বল করেছে। তাদের পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এসজি