শেষ ম্যাচ জিততে পারল না বাংলাদেশ
হলো না। প্রয়োজন ছিল একটি জয়। তাতে করে লক্ষ্য পূরণ হতো তিনটি। কিন্তু বাংলাদেশ পায়নি সেই কাঙ্ক্ষিত জয়। তাই ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার লিগে পয়েন্ট হয়নি ১১০। আফগানিস্তানকে করা হয়নি ধবলধোলাই। আর র্যাঙ্কিংয়ে উঠা হয়নি ছয়ে। এ সবেরই জলাঞ্জলি হয়েছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশকে মাত্র ১৯২ রানে অলআউট করে রহমানউল্লাহ গুরবাজের অপরাজিত ১০৬ রানে আফগানিস্তান সেই ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছে ৭ উইকেটে জিতে। ৪০.১ ওভারেই ৩ উইকেট হারিয়ে তারা দেয় লক্ষ্য পাড়ি। এই ফলাফলে ওয়ানেড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো হের-ফের হয়নি। পয়েন্ট বাড়াতে না পারলেও ১০০ পয়েন্ট নিয়েই ধরে রেখেছে শীর্ষস্থান। আফগানিস্তান ১০ পয়েন্ট পেয়ে ফিরে পেয়েছে নিজেদের হারানো ষষ্ঠ স্থান। তাদের পয়েন্ট ৭০। আগেই সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশ শেষ ম্যাচ হেরে যাওয়াতে ব্যবধান কমে এসেছে ২-১ এ।
এই ম্যাচ যে আফগানিস্তান এতোটা সহজে নিজেদের করে নিতে পারবে তা কিন্তু ম্যাচের শুরুতে সে রকম কোনো আলামত ছিল না। সেখানে আলামত ছিল টস জিতে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিক বাংলাদেশের আরেকটি বড় সংগ্রহের। ২২ ওভারে ২ উইকেটে ১০৪। সেখানে ৫০ ওভার শেষে রান তিনশোর্ধ না হলেও কাছাকাছি হওয়ারই কথা। কিন্তু বাংলাদেশ পরে খেলতে পেরেছে ২৪.৫ ওভার। রান যোগ করে ৮ উইকেটে হারিয়ে ৮৮। আর এমনটা হয়েছে ইনিংসের মাঝ পথে আফগানিস্তানের বোলিংয়ের মূল খুঁটি স্পিন শক্তি জ্বলে উঠায়। স্পিন ত্রয়ী নয়, স্পিনার রশিদ-নবীর কারণে সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্তকে এবার আর মনের মতো করে সাজাতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১ উইকেটে ১০৪ রান থেকে ১৯২ রানে শেষ ইনিংস। ৮৮ রানে পড়ে ৯ উইকেট।
স্পিনের কাছে পরাস্ত বাংলাদেশের ইনিংসকে খুব সহজেই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি ২২ ওভার পর্যন্ত, অপরটি এর পরের। ২২ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশ সঠিক পথেই ছিল। এ সময় রান ছিল ২ উইকেটে ১০৪। এরপরই আফগানিস্তান স্পিন ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ে আক্রমণে শামিল হয়। উভয় প্রান্ত থেকে শুরু করে স্পিন আক্রমণ। রশিদ-নবী-মুজিব মিলে এ সময় ২২ ওভার বোলিং করে রান দেন মাত্র ৭৫। উইকেট পড়ে ছয়টি। রশিদ নেন তিনটি, নবী দুইটি। একটি ছিল রান আউট। শেষ চার উইকেট পড়ে আরও দ্রুত মাত্র ১৭ রানে। শেষ দুটি ছিল রানআউটও। ইনিংসে মোট তিনটি রান আউটও বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম একটি কারণ ছিল। একই সঙ্গে ৫০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে সেঞ্চুরি পিঠে সেঞ্চুরিও করা হয়নি লিটনের। দলের মোট ১৯২ রানের ৮৬ রানই আসে তার ব্যাট থেকে। তার মানে বাকি ৯ ব্যাটসম্যান মিলে করেন ১০৬ রান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের দলগত সর্বনিম্ন রান।
আগের ২ ওভারে ১২ রান দেওয়া রশিদ খান আবির্ভূত হন স্বরূপে। দ্বিতীয় স্পেলে ৬ ওভারে ২০ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট। ৭ ওভার পর তৃতীয় স্পেল করতে এসে ২ ওভারে ৫ রান দিয়ে নেন আরও এক উইকটে। তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ১০ ওভারে ৩৭ রানে ৩ উইকেট। মোহাম্মদ নবী প্রথমবারের মতো বল তুলে নিয়ে টানা ১০ ওভার বোলিং করে ২৯ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। একটি রান আউট ছিল তারই ওভারে। এ সময় মুজিব ৩ ওভার বোলিং করে কোনো উইকেট না পেলেও রান দেন ১৬। প্রথম ৪ ওভারে তিনি রান দিয়েছিলেন ১৮। আর এতেই বাংলাদেশ ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
টার্গেট খুব বেশি নয়। তাই আফগানরাও কোনো রকমের ঝুঁকিতে যায়নি। রহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে রিয়াজ হাসানের উদ্বোধনী জুটিতেই বড় জয়ের ভীত তৈরি হয়ে যায়। জুটিতে রান আসে ১৫.৩ ওভারে ৭০। রিয়াজ হাসান ৩৫ রান করে সাকিবের শিকার হওয়ার পর গুরবাজ ও রহমত শাহ মিলে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। জয় থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে হঠাৎ করে মিরাজ এসে পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন। প্রথমে রহমত শাহকে ৪৭ রানে, পরে অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদিকে ২ রানে। রহমত শাহকে মুশফিকুর রহিম স্ট্যাম্পিং করেন। হাসমতউল্লাহ হন এলবিডব্লিউর শিকার। তখনো ম্যাচ সেরা রহমানউল্লাহর সেঞ্চুরি হয়নি। এরপরই তিনি মোস্তাফিজের ওভারের প্রথম বলকে কভারে খেলে ২ রান নিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে শরীরকে শূন্যে ভাসিয়ে দেন। ১০৩ বলে ৪ ছক্কা ও ৬ চারে তিনি ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৯২/১০, ওভার ৪৬.৫ (লিটন ৮৬, সাকিব ৩০, মাহমুদউল্লাহ ২৯* তামিম ১১, মুশফিকুর ৭, শরিফুল ৭, মিরাজ ৬, আফিফ ৫, ইয়াসির আলী ১, মোস্তাফিজ ১, তাসকিন ০, রশিদ খান ৩/৩৭, মোহাম্মদ নবী ২/২৯, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ১/২৯, ফজলহক ফারকী ১/৩৩)।
আফগানিস্তান: ১৯৩/৭, ওভার ৪০.১ (রহমানউল্লাহ গুরবাজ ১০৬*, রহমত শাহ ৪৭, রিয়াজ হাসান ৩৫, হাসমতউল্লাহ শহিদী ২, নাজিবুল্লাহ জাদরান ১*, মিরাজ ২/৩৭, সাকিব ১/৪৭, ইয়াসির আলী ০/২, আফিফ হোসেন ০/৬, মোস্তাফিজুর রহমান ০/২৪, তাসকিন ০/৩৪, শরিফুল ০/৪১)।
এমপি/এমএমএ/আরএ/