অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২২ বছর পর পাকিস্তানের সিরিজ জয়
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২২ বছর পর পাকিস্তানের সিরিজ জয়। ছবি: সংগৃহীত
সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরেও অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জিতে নিল পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ২২ বছর পর ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সব সংস্করণ মিলিয়ে এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সিরিজ জয়।
দীর্ঘ ২২ বছরের অপেক্ষার অবসান যে ঘটিয়েছে পাকিস্তান। পার্থ স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ১৪০ রানে গুটিয়ে ১৩৯ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা। ম্যাচটি ৮ উইকেটে জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে তারা।
অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এর আগে সবশেষ ২০০২ সালে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল তারা। সেবার প্রথম ম্যাচ হারের পর শোয়েব আখতারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পরের দুই ম্যাচ জিতেছিল তারা। দুই দশকের বেশি সময় পর এবার শোয়েবের ভূমিকায় যেন হারিস রউফ। তিনিও শেষ দুই ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে দলের সিরিজ জয়ের নায়ক।
সিরিজ নির্ধারণী লড়াইয়ে ম্যাথু শর্ট ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট নিয়ে রউফই জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তিন ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরার স্বীকৃতিও পেয়েছেন পাকিস্তানের গতিময় এই পেসার।
দীর্ঘ অপেক্ষা ঘোচানোর দিনে আরও একবার পাকিস্তানের জয়ের মঞ্চ সাজিয়ে দিয়েছেন চার পেসার। রউফের ২ উইকেটের পাশাপাশি নাসিম শাহ ও আফ্রিদি নেন ৩টি করে উইকেট। আরেক পেসার মোহাম্মদ হাসনাইনের শিকার ১টি। পঞ্চম বোলার ব্যবহারই করতে হয়নি রিজওয়ানকে।
ঘরের মাঠে আরও একবার অতিথি পেসারদের তোপে পোড়ে ৩১.৫ ওভারে মাত্র ১৪০ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। পরে ১৩৯ বল বাকি থাকতে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে পাকিস্তান। এর আগে দ্বিতীয় ম্যাচে তারা জিতেছিল ১৪১ বল বাকি রেখে।
সামনের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রস্তুতি নিতে নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের পাশাপাশি শেষ ম্যাচটি খেলেননি স্টিভেন স্মিথ, জশ হেইজেলউড, মিচেল স্টার্ক ও মার্নাস লাবুশেন। আর পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য পুরো সিরিজেই ছিলেন না মিচেল মার্শ ও ট্রাভিস হেড। দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে লড়াই জমাতেই পারেনি অস্ট্রেলিয়া। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে ড্রেসিং রুমে ফেরেন জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ও অ্যারন হার্ডি। দলের পঞ্চাশ হতে আউট হয়ে যান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জশ ইংলিস।
১৪তম ওভারে এক প্রান্ত আগলে রাখা শর্টকে ফেরান রউফ। মাত্র ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে কুপার কনোলির চোট। হাসনাইনের বাউন্সার গ্লাভসে আঘাত করায় হাতের ব্যথায় ব্যাটিং চালিয়ে নিতে পারেননি তিনি। কনোলি উঠে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে কিছুই করতে পারেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সিরিজে দ্বিতীয়বার খালি হাতে ফেরেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা মার্কাস স্টয়নিসও পারেননি সুযোগ কাজে লাগাতে।
সপ্তম উইকেটে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩০ রানের জুটি গড়েন জ্যাম্পা ও শন অ্যাবট। দলকে একশ পার করিয়ে ফেরেন ১৩ রান করা জ্যাম্পা। আর অ্যাবট খেলেন দলের সর্বোচ্চ ৩০ রানের ইনিংস। কনোলি আর ব্যাটিংয়ে নামতে না পারায় ৯ উইকেট পড়তেই শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
পরে ফিল্ডিংয়েও হতাশা ঝেড়ে ফেলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নামা পাকিস্তানের তিনটি ক্যাচ ছেড়ে দেয় তারা। সাইম আইয়ুব দুইবার ও আব্দুল্লাহ শাফিক একবার জীবন পেয়ে গড়েন ৮২ রানের উদ্বোধনী জুটি। ১৮তম ওভারে দুজনকেই ফেরান ল্যান্স মরিস। অস্ট্রেলিয়ার উদ্যাপনের উপলক্ষও ওখানেই শেষ। সাইম ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫২ বলে ৪২ এবং শাফিক ১টি করে চার-ছক্কায় ৫৩ বলে ৩৭ রান করেন।
পরে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৫৩ বলে ৫৮ রান যোগ করে দলের জয় নিশ্চিত করেন বাবর ও রিজওয়ান। বাবর ৩০ বলে ২৮ ও রিজওয়ান ২৭ বলে ৩০ রান করেন। নেতৃত্বের প্রথম অভিযানে সিরিজ জয়ের মুহূর্তটা ক্রিজে থেকে উপভোগ করতে পারা রিজওয়ানের জন্য নিশ্চিতভাবেই বিশাল এক প্রাপ্তি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৩১.৫ ওভারে ১৪০ (শর্ট ২২, ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ৭, হার্ডি ১২, ইংলিস ৭, কনোলি ৭ আহত আউট, স্টয়নিস ৮, ম্যাক্সওয়েল ০, অ্যাবট ৩০, জ্যাম্পা ১৩, জনসন ১২*, মরিস ০; আফ্রিদি ৮.৫-১-৩২-৩, নাসিম ৯-০-৫৪-৩, হাসনাইন ৭-০-২৪-১, হারিস ৭-১-২৪-২)
পাকিস্তান: ২৬.৫ ওভারে ১৪৩/২ (সাইম ৪২, শাফিক ৩৭, বাবর ২৮*, রিজওয়ান ৩০*; জনসন ৮-০-২৮-০, স্টয়নিস ৩-১-১১-০, অ্যাবট ৬-০-৪৯-০, মরিস ৬-০-২৪-২, হার্ডি ২-০-১৯-০, জ্যাম্পা ১.৫-০-১০-০)
ফল: পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: হারিস রউফ
ম্যান অব দা সিরিজ: হারিস রউফ