কুমিল্লার চার নাকি সিলেটের প্রথম
প্রকৃতিতে এখন ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তের সুশীতল বাতাসে ফাগুনের র্স্পশে দেহমনে অন্য রকম এক দোলা দিয়ে যায় সর্বত্র। প্রকৃতির দিকে থাকলেই মনে হবে দুঃখ বলে নেই কোনো কিছু। কান পাতলেই শোনা যায় সুখের স্বর্গ রাজ্য। অপরিমেয় এক সুখ বিরাজ করছে সর্বত্র। ফাগুনের এই ঢেউ কিন্তু লেগেছে বিপিএলেও। ঋতু রাজের প্রথম দিন অনেকেই মাঠে এসেছিলেন ফাগুনের পরিবেশে। কিন্তু আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড় ৬ টায় সিলেট স্ট্রাইকার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের যে শিরোপা নির্ধারণী চূড়ান্ত খেলা অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে কিন্তু ফাগুনের হাসিমাখা পরিবেশ সর্বত্র থাকবে না। সুখের পাশাপাশি থাকবে দুঃখও। জয়ী দল সুখের পায়রা হয়ে উড়বে আকাশে। হেরে যাওয়া দলকে হয়ত খুঁজেই পাওয়া যাবে না। অন্তরে জ্বলবে তাদের তুষের আগুন!
চরম বিশৃঙ্খলা আর বিতর্কের মধ্য দিয়ে যে বিপিএলের নবম আসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার সমাপ্তি হতে যাচ্ছে সবার অন্তর ছুঁয়ে। এই যে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সমাপ্তি হতে যাচ্ছে, সেখানে কিন্তু নেই আয়োজকদের কোন কৃতিত্ব! কুড়ি ওভারে ম্যাচ মানেই হবে চার-ছক্কার ফুলঝরি। হবে রান ফোয়ার ম্যাচ। যা এবারের আসরে ব্যাপকভাবে প্রদর্শীত হয়েছে। এই প্রদশর্নই দর্শকদের অন্তর ছুঁয়ে গেছে। কারণ তারা বোলারদের উইকেট প্রাপ্তির চেয়ে ব্যাটসম্যানদের চার-ছক্কাই দেখতে বেশি পছন্দ করেন। আজকের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও কী থাকবে সেই চার-ছক্কার বাহারি প্রদর্শন? দর্শকদের চাহিদা কিন্তু সে দিকেই ভারী বেশি!
বিপিএল কী নতুন চ্যাম্পিয়ন সিলেট স্ট্রাইকার্সকে পাবে, নাকি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে চতুর্থ শিরোপা উপহার দেবে? মাশরাফি পঞ্চমবার তার নেতৃত্ব শিরোপা জিতবেন, নাকি ইমরুল কায়েস তৃতীয়বার (এ ছাড়া একবার জিতেছেন খেলোয়াড় হিসেবে মাশরাফির নেতৃত্বে) জিতবেন অধিনায়ক হিসেবে? কে হাসবেন শেষ হাসি?
বিপিএলের ফাইনালে এবার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দলই আজ ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে। ১২ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের পয়েন্ট ছিল ১৮। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসেরও পয়েন্ট ছিল ১৮। নেট রান রেটে সিলেট এক-এ উঠে যায়। কুমিল্লা চলে যায় দুইয়ে। এরপর প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ৬ উইকেটে সিলেটকে হারিয়ে ফাইনালে চলে যায়। সিলেটের বাড়ে অপেক্ষা। পরে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তারা রংপুর রাইডার্সকে ১৯ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মত জায়গা করে নেয় ফাইনালে। বিপিএলের শুরু থেকে এবার সিলেট শীর্ষ স্থান ধরে রেখেই ফাইনালে উঠে আসে। কুমিল্লার অবস্থা ছিল নাজুক। তারা প্রথম তিন ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল। পরে টানা ৯ ম্যাচ জিতে প্লে অফে উঠে আসে। পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে তারা জায়গা করে নিয়েছিল ১০ম্যাচ পর শেষ দুই ম্যাচে। তার আগ পর্যন্ত দুইয়ে ছিল ফরচুন বরিশাল। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে হেরে তারা পয়েন্ট টেবিলের চারে নেমে যায়। কুমিল্লা উঠে আসে দুইয়ে।
দুই দলের এবারের আসরের আজ হবে চতুর্থ লড়াই। দুই দলের ম্যাচের একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল আগে ব্যাট করা দলের জয়। আগের তিনবারে প্রথমবার সিলেট জয়ী হয়েছিল। পরের দুইবার কুমিল্লা। কিন্তু কোনো ম্যাচই সেভাবে হাই স্কোরিং হয়নি। কুমিল্লার জয় পাওয়া দুইটি ম্যাচ ছিল লো-স্কোরিং। সিলেটের ৫ উইকটে জেতা ম্যাচে কুমিল্লা ৬ উইকেটে করেছিল ১৪৯ রান। ১৭.৪ ওভারে সিলেট রান টপকে গিয়েছিল ৫ উইকেট হারিয়ে। ফিরতি মোকাবিলাতে সিলেট এবার আগে ব্যাট করে অলআউট না হলেও পুরো ২০ ওভার খেলে ৭ উইকেটে মাত্র ১৩৩ রান করেছিল। যে রান পাড়ি দিতে গিয়ে কুমিল্লাকে হারাতে হয়েছিল ৫ উইকেট। খেলতে হয়েছিল ১৯ ওভার। প্রথম কোয়ালিফায়ারেও সিলেট আগে ব্যাট করে খুবই নাজুক অবস্থায় ছিল। ১৭.১ ওভারে মাত্র ১২৫ রানে অলআউট হয়েছিল। কুমিল্লা ১৬.৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে প্রথম সুযোগেই ফাইনালে উঠে আসে। সবারই চাওযা জয়-পরাজয় যাই হোক জমজমাট হাই স্কোরিং ম্যাচ যাতে হয়।
ব্যাটি-বোলিংয়ে সিলেট এক সময় সমান শক্তিশালী হলেও পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিম চলে যাওয়ার পর সেখানে ঘাটতি পড়ে যায়। সেই শূন্যতা তারা কিছুটা পূরণ করতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি স্পিনার জর্জ লিন্ডে ও ইংল্যান্ডের লুক উডকে এনে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দুই জনেই ভালো বোলিং করেছেন। লুক উডতো ৩৪ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। জর্জ লিন্ডে ৩৩ রান দিয়ে অবশ্য কোনও উইকেট পাননি। এদেরে সঙ্গে মাশরাফির নেতৃত্বে রুবেল হোসের, তানজিম হাসান সাকিব, রেজাউর রহমানরাতো আছেনই।
সিলেটের বড় শক্তি ব্যাটিং লাইন। দারুণ ফর্মে আছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর লড়াইয়ে থাকা দুই ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসনে শান্ত (৪৫২) ও তৌহিদ হৃদয় (৪০৩)। এই দু্ই জনের পরের দুইটি স্থানও দেশি ক্রিকেটারদের। মুশফিকুর রহিমের ২৮৩ ও জাকির হাসানের ২৫০। এরপর ১৬৫ রান করে পঞ্চম স্থান আছেন লঙ্কান থিসারা পেরেরা তবে ফাইনালে আসার লড়াইয়ে সবার ছিল ছোট ছোট কার্যকরী অবদান। এরা ছাড়াও জর্জ লিন্ডে, মাশরাফি, রায়ান বার্লও ক্যামিও ইনিংস খেলেছিলেন। মাশরাফিতো প্রথম কোয়ালিফায়ারে পাঁচে ও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তিনে ব্যাটিং করে ২৬ ও ২৮ রানের মহা মূল্যবান ইনিংস খেলেছিলেন।
কুমিল্লা ব্যাটিং-বোলিংয়ে দুই দিক দিয়েই সমান শক্তিশালী। বিশেষ করে তাদের দুই পাকিস্তানি মোহাম্মদ রিজওয়ান ও খুশদিল শাহ চলে যাওয়ার পর মঈন আলী, সুনিল নারিন, আন্দ্রে রাসেলকে এনে রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে যথাযথ। সুনিল নারিন ইনিংসের শুরুতেই এ যেভাবে বিধ্বংসি ব্যাটিং করেন, তা সিলেটের জন্য খুব বড় ধরনের সতর্কবাতা। আন্দ্রে রাসেলও একই ধারায় ব্যাটিং করতে পটু। মাত্র দুই ম্যাচ খেলে তারা তার প্রমাণ রেখছেন আরেকবার। মঈন আলীকে নিয়ে নতুন করে কিছু জানানোর নেই। এই তিন জনেরই ব্যাটিং বোলিং কুমিল্লার জন্য বড় সম্পদ। এ ছাড়া ব্যাটিংয়ে আছেন আসরের চতুর্থ সেঞ্চুরিয়ান জনসন চার্লসও।
কুমিল্লার ব্যাটিং লাইন বেশ লম্বা আর শক্তিশালী। চার বিদেশির সঙ্গে লিটন কুমার দাস, অধিনায়ক ইমরুল কায়েস, মোসাদ্দেক হোসেনতো আছেনই। বোলিংও আরও শক্তিশালী। সুনিল নারিন, আন্দ্রে রাসেল ও মঈন আলীর সঙ্গে মোস্তাফিজ, তানভীর আর মুকিদুল। এদের কারণেই সিলেট পরের দুইবার মোটেই সুবিধা করতে পারেনি।
ফাইনালে টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। আগের তিন বারের মোকাবিলাতে যে দল টস জিতেছে, সেই দলই আগে বোলিং বেছে নিয়েছে। পরে জিতেছে ম্যাচ।
এমপি/আরএ/