ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের জন্য কী অপেক্ষা করছে?
টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২১ বছর পার হয়ে গেছে। এখনো বাংলাদেশ দল ধুকছে। জয় আসে মাঝে মাঝে হঠাৎ করে। তা নিয়েই চলে সুখের কাব্য রচনা। উঠে প্রাপ্তির ঢেকুর। কিন্তু আসলে এই সব কখনোই উন্নতির মাপকাঠি হতে পারে না। তাইতো এখনো একটি হারের পর বলতে শুনা যায়, আরও এতো রান বেশি হলে ম্যাচটা জেতা যেতো, এই ক্যাচটা না ফেললে ফলাফল অন্য রকম হতে পারতো। পাঁচ দিন ম্যাচকে নিয়ে যেতে পারার মাঝেও খোঁজা হয় তৃপ্তি। এ সবই ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটিতে। যেখানে বাংলাদেশ হেরেছিল ৮ উইকেট।
একটা সময় ছিল যখন পাঁচদিন খেলতে পারার মাঝে তৃপ্তি পাওয়া যেতো। কারণ টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির শুরুর দিকে বাংলাদেশ দল খেলতে নামলেই তিন দিনে আর ইনিংস ব্যবধানে হার ছিল অবধারিত। সে সময় লড়াই করে হারা কিংবা পাঁচ দিন খেলতে পারা ছিল অনেক বড় প্রাপ্তি। কিন্তু ২১ বছর পরও সে দৃষ্টি ভঙ্গি বদলায়নি। একইভাবে বদলায়নি ম্যাচ শুরুর আগে কথা বলার ভঙ্গিতেও। যথারীতি জয়ের কথা বলা হয়, ভালো করার কথা বলা হয়। কিন্তু ম্যাচে গিয়ে সে সব কথার প্রতিফলন আর দেখা যায় না। এই যেমন আগামীকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট নিয়ে মুমিনুল জানালেন জয়ের কথাই। চট্টগ্রাম টেস্টে লড়াই করা, আর ঢাকা টেস্টে সাকিব আল হাসানের ফিরে আসাতেই; মুমিনুল এ রকম দিবা স্বপ্ন দেখছেন!
সাকিব দলে আসা মানেই দুই জন খেলোয়াড়ের কাজ দেয়া। ব্যাটিং-বোলিং দুই জায়গাতেই ব্যাপক শক্তি বৃদ্ধি ঘটে। বাংলাদেশের অনেক জয়ে আছে সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্য। কিন্তু সাকিবের কাছে এতোটা আশা করা কী ঠিক হবে? কারণ তিনি ফিরছেন ইনজুরি থেকে। তার সর্বশেষ টেস্ট ছিল জুলাই মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এদিকে মিরপুরে তিনি সর্বশেষ খেলেছিলেন ৩ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। যেখানে তিনি নিজেই ছিলেন দলপতি। ব্যাট হাতে ৮০ রান করার পর বল হাতে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। তবে ১১১ রানের জয়ে মুখ্য ভুমিকা রেখেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৭ ও ৫ উইকেট নিয়ে। তাই সাকিব জ্বলে উঠতে পারলে সেটা দলেরই লাভ। মুমিনুলের নির্ভার থাকার জায়গা। তিনি বলেন, 'উনি আসলে ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি নির্ভার থাকি। তার ব্যাটং-বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। টিম কম্বিনেশনে তার থাকাটা আমাদের জন্য ভালো ইতিবাচক দিক।’ কিন্তু পাকিস্তান দল কী তাই বলে পিছু হাঁটবে। তারা যে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার জন্য মুখিয়ে আছে। পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদীর কথায় ছিল সে রকমই ছাপ, তিনি বলেন, 'আমরা ভালোভাবে শেষ করতে চাই। এখান থেকে সিরিজ জিতে ফিরতে চাই। আমাদের মোমেন্টাম ভালো। কম্বিনেশন ভালো। সবাই দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত।'
টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ কেমন করবে তা অনেকটা নির্ভর করে উইকেটের চরিত্রের উপর। এ নিয়ে মুশফিক বলেন,'মিরপুরের উইকেট সম্পর্ক আমি আপনি সবাই জানি। খেলাটা কঠিন হয়। আমার কাছে মনে হয় না অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো উইকেট হবে।উইকেট দেখে যেমনটা মনে হলো।' সাকিব চলে আসাতে চট্টগ্রাম টেস্টের সেরা একাদশে পরিবর্তন অবধারিত। সেটা একাধিকও? কারণ সাইফ হাসান টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দল থেকে ছিটকে গেছেন। তার জায়গা মোহাম্মদ নাঈমের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও মাহমুদুল হাসান জয়ের অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ দল খেলেছিল ৪ জন স্পেশিয়াালিস্ট বোলার নিয়ে। সাকিব ফেরাতে মিরপুরে খেলবে পাঁচজন নিয়েই। সাইড লাইনে চলে যেতে হবে চট্টগ্রামে অভিষেক হওয়া ইয়াসির আলীকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করার পরও শাহীন শাহ আফ্রিদীর বল মাথায় লেগে মাঠ ছেড়েছিলেন। তার বদলি কনকাশন হিসেবে ব্যাট করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। পেস আক্রমণে তাসকিনকে মনে প্রাণে চাচ্ছেন দলপতি। কিন্তু এখনো নিশ্চিত নয় তাসকিনের খেলা। তবে খেলার আগ মুর্হুত পর্যন্ত মুমিনুল অপেক্ষা করবেন তাসকিনের জন্য। শেষ পর্যন্ত তাসকিন খেললে আবু জায়েদ রাহী বাদ পড়বেন।
এখন দেখার পালা মুমিনুলের বলা কথার সাথে মাঠের লড়াইয়ের কতোটা মিল খোঁজে পাওয়া যায়।
এমপি/কেএফ/