প্রতিশোধ নিয়ে সিলেটকে প্রথম হারাল কুমিল্লা
ঢাকায় সিলেট স্ট্রাইকার্সের দুর্দান্ত খেলার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু ঢাকার শেষ ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আহত হয়ে তিনি দুই সপ্তাহের জন্য মাঠ থেকে ছিটকে পড়েন। তার অনুপস্থিতিতে প্রথমে ভাবা হয়েছিল খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কিন্তু চট্টগ্রামে ঢাকা ডমিনেটরসের করা ১২৮ রান পাড়ি দিয়েছিল হোঁচট খেতে খেতে।
আজ (১৭ জানুয়ারি) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে তাদের ব্যাটিং লাইন একেবারে ভেঙে পড়ে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তারা সংগ্রহ করেছে ৭ উইকেটে মাত্র ১৩৩ রান সংগ্রহ করে আর জেতা সম্ভব হয়নি সিলেটের। নিতে হয়েছে প্রথম হারের স্বাদ। হার মেনেছে ৫ উইকেটে। ৬ ম্যাচে গিয়ে সিলেট পেল প্রথম হারের স্বাদ। সেই সঙ্গে কুমিল্লা নিয়েছে ঢাকায় প্রথম সাক্ষাতে ৫ উইকেটে হারের বদলাও। ৫ ম্যাচে কুমিল্লার এটি ছিল দ্বিতীয় জয়।
সিলেটের ব্যাটসম্যানরা যে পিচে ধুঁকছেন রান করতে, সেই পিচে কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা ছিলেন সাবলীল। তবে পিচ যে তার চরিত্র বদলাতে শুরু করেছিল, তা বোঝা গেছে সিলেটের ইনিংসে ইমাদ ওয়াসিম ও থিসারা পেরেরার ব্যাটিংয়ের সময়। এই জুটি ১০.৩ ওভারে ৮০ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন। তাদের ব্যাটিং দেখে মনেই হয়নি কিছুক্ষণ আগেও এখানে সিলেটের নামী-দামী ব্যাটসম্যানরা ধুঁকেছেন।
লিটন দাস ফর্মে থাকলে তার ব্যাট যেন হয়ে উঠে তরবারি। সেই তরবারির আঘাতে প্রতিপক্ষের বোলারদের কচুকাটা করেন। আজ যেমন হয়েছে সিলেটের বোলাররা। মাশরাফির করা ইনিংসের প্রথম বলকেই সীমানা ছাড়া করে লিটনের শুরু। পরে আর তাকে থামানোই যায়নি। তার মারমুখী অথচ শৈল্পিক ব্যাটিং নান্দনিকতায় পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানও ছায়া হয়ে গিয়েছিলেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে আসে বিনা উইকেটে ৪৯ রান। লিটনের রান ছিল ২৪ বলে ৩৪, রিজওয়ানের ১২ বলে ১১। জুটিতে রান আসে ৫৭। ১৮ বলে ১৫ রান করে রিজওয়ান রানআউট হন। এসময় লিটনের রান ছিল ৩৮।
রিজওয়ান আউট হওয়ার পর ইমরুল বেশ ভালোই খেলছিলেন। ছিলেন মারমুখীও। এসময় লিটন আবার নিজেকে গুটিয়ে নেন। ১টি করে চার ও ছক্কা মেরে ১৯ বলে ১৮ রান করে শরিফউল্লাহর একটি বল বুঝতে না পেরে তারই হাতে ক্যাচ দিয়ে ইমরুল বিদায় নেওয়ার সময় লিটন কোনো চার কিংবা ছক্কা মারেননি।
ইমরুলের বিদায়ের পর লিটন আবার স্বরূপে ফিরেন। শরিফউল্লাকে ছক্কা মেরে এবারের আসরে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেন। পরের বলে মারেন আবারও ছক্কা। একই ওভারে পরে আরও একটি করে চার ও ছয় মেরে তিনি ২৪ রান তুলে নেন। বলা যায়, তার কারণেই সিলেটের বোলাররা ন্যূনতম কোনো লড়াই করার সুযোগ পাননি। পরের ওভারেই তিনি আউট হয়ে যান। মাশরাফির নিরামিষ একটি বল মিডঅফে পেরেরাকে ক্যাচ প্র্যাকটিস করে বিদায় নেন। ৪ ছক্কা ও ৭ চারে ৪২ বলে তিনি রান করেন ৭০। জিতে নেন টানা দ্বিতীয়বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
লিটন যখন আউট হন, তখন কুমিল্লা জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে। ৩৩ বলে প্রয়োজন ২৩ রানের। জনসন চার্লস ও খুশদিল শাহ কোনো রকমের ঝুঁকিতে না গিয়ে দেখে শুনে খেলছিলেন। যেভাবে খেলছিলেন তাতে করে মনে হচ্ছিল তারা আর কোনো উইকেটের পতন হতে না দিয়ে দলকে জয় এনে দেবেন। কিন্তু খুশদিল শাহ (৭ বলে ৩ রান) মাশরাফিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে থিসারা পেরেরার হাতে তালুবন্দী হন। জাকের আলী এসেই পরের বলে জাকিরের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হলে কুমিল্লার বড় জয়ের পথে আটকে যায়। পরে জনসন চার্লসের সঙ্গে জুটি বেঁধে মোসাদ্দেক আর কোনো উইকেটের পতন হতে না দিয়ে দলকে ৫ উইকেটে জয় এনে দেন ১ ওভার হাতে রেখে। চার্লস ১৮ বলে ১ ছক্কায় ১৮ ও মোসাদ্দেক ৯ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
সিলেটের হয়ে মাশরাফি ১৯ রানে নেন ২ উইকেট। শরিফউল্লাহর ১ উইকটে ছিল ৩১ রানের খরচায়। কোনো উইকেট না পেলেও ইমাদ ওয়াসিম ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দেন।
এমপি/এসজি