সিলেটের সাফল্যে মাশরাফির রেসিপি

বিপিএলের আয়োজকরা সিলেট স্ট্রাইকার্সকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন। চার দিনে শেষ হয়েছে ৮টি ম্যাচ। যেখানে প্রতিদিনই খেলতে নেমেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন সিলেট। প্রতিটি ম্যাচই তারা জিতেছে নান্দনিক খেলা উপহার দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে।
এবারের মানহীন বিদেশি ক্রিকেটারদের মাঝে সিলেটই একমাত্র দল যাদের শতভাগে জয় রয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় অবদানে। ৪টি ম্যাচেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন দেশি ক্রিকেটাররা। প্রথম ম্যাচে রেজাউর রহমান রাজা। পরের তিনটিতে তৌহিদ হাসান হৃদয়। দেশি ক্রিকেটারদের এমন নৈপুণ্য বিপিএল নিয়ে বেজায় আগ্রহ তৈরি হয়েছে দর্শকদের মাঝে। অথচ এবার নানা বিতর্ক আর সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিপিএলের নবম আসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশেলে সিলেট হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। সিলেটের এমন সাফল্যে দেশীয় ক্রিকেটারদের অবদান থাকলেও তাদেরকে এক সুতোয় গেঁথেছেন অভিজ্ঞ মাশরাফি। যার হাত ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থানকে বেশ মজবুত করে তুলেছিল। টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলতে তিনি দলের ক্রিকেটারদের দিয়েছেন অবাধ স্বাধীনতা। যার সুফল সিলেট পেয়েছে টানা ৪ ম্যাচ জিতে।
সিলেটের সাফল্য নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের দলের তরুণ ক্রিকেটারদের এই স্বাধীনতা দেওয়া আছে যে, ওরা যেভাবে চায় নিজেদের মেলে ধরতে পারে। এটাও সত্যি যে ওরা বেশ কিছুদিন ধরে খেলছে। ‘এ’ দলে খেলেছে, এইচপিতে খেলেছে, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছে ওরা সবাই। তাই এই ধারণা ওদের আছে যে কীভাবে খেলতে হবে। ওদেরকে যেটা বলা হয়েছে যে, উইকেট বুঝে টি-টোয়েন্টি যেভাবে খেলা উচিত, সেভাবে যেন খেলে। ওই স্বাধীনতা ওদের শুরু থেকেই দিয়েছি। আমাদের থেকে ওদের উপর কোনো চাপ নেই।’
ব্যাট হাতে সিলেটের হয়ে সাফল্য দেখিয়ে চলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয় আর জাকির হাসান। শেষ দুইজন আবার সিলেটেরই সন্তান। তাদের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে মাশরাফি তুলে ধরেন নিজের বিশ্লেষণ।
হৃদয়কে নিয়ে তিনি বলেন, ‘হৃদয়কে আমরা ওর মতো ছেড়ে দিয়েছি খেলার জন্য। আগের ম্যাচে উইকেটে গিয়ে প্রথম বলে ছক্কা মেরেছে। ওই শটে যদি আউট হতো, আমরা ওকে কিছুই বলতাম না। এভাবে পাশে থাকা প্রয়োজন। আমাদের দল থেকে, বিশেষ করে আমি যতক্ষণ আছি, ওই সুযোগটা দিয়েছি যে, ও যেন যেভাবে চায়, সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারে।’
মাশরাফি জানান, একজন ক্রিকেটার প্রতিদিন ভালো খেলতে পারবে না।
জাকিরকে নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘জাকিরকে আগের দিন আমরা বলেছি জুটি গড়তে। কিন্তু ও উইকেটে গিয়ে একটি চার মারল, ছয় মারল। ওর কাছে মনে হয়েছে উইকেট ভালো, চান্স নিতে পারবে, আমরাও ব্যাকআপ করছি। উইকেট খারাপ হলে যদি ১০ বলে ১০ করে, তাহলেও সমস্যা নেই। আমার কথা হচ্ছে, এই জায়গাটা তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
তারুণ্যের মিছিলে আছে মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও। মুশফিক সাধারণত চারে ব্যাট করে থাকেন। প্রথম ম্যাচে তিনি চারেই নেমেছিলেন। এরপর থেকে তিনি নেমে গেছেন পাঁচে। এ নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এখানে মুশফিকের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। মুশফিক সাধারণত চারে খেলে। কিন্তু সে ফ্লেক্সিবল ছিল। নাহলে আসলে এটা কঠিন হতো। সিদ্ধান্তটি নিতে সে নিজেই সহজ করে দিয়েছিল। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন রাখার পরামর্শও মুশফিকই দিয়েছিল। এবার পাশের উইকেটগুলোতে বেশি খেলা হচ্ছে, মাঝের উইকেটে হচ্ছে না। বেশিরভাগ ম্যাচেই এক পাশে সীমানা ছোট থাকছে। ডান-বাঁ কম্বিনেশন উইকেটে থাকলে সুবিধা হয়। এটা মুশফিকের জন্যই সম্ভব হয়েছে এবং সে-ই এখানে নেতৃত্ব দিয়েছে সত্যি কথা বলতে।’
এমপি/এসজি
