তৌহিদের আরেকটি ‘হৃদয়’ কাড়া হাফ সেঞ্চুরির দিন হাতে ৮ সেলাই
দক্ষিণ আফ্রিকা ও দুবাইয়ে ভারতীয়দের মালিকানায় দুইটি নতুন ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগের আবির্ভাবের কারণে বিপিএল প্রতিযোগিতা শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে টাকার ঝনঝনানিতে। ড্রাফটে পায়নি বিশ্ব মানের ক্রিকেটারদের। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের প্রায় সাবাইকে বিভিন্ন দলে ভেড়ালেও জাতীয় দলের খেলা থাকার কারণে তাদের এখনও পাওয়া যায়নি। কিছু বিদেশি পুরানো ক্রিকেটারদের সঙ্গে অখ্যাত ক্রিকেটার খেলছেন এবারের আসরে। তাই আসর শুরুর আগেই মান হারায় অনেকটা। দর্শকদের আগ্রহে ভাটা পড়ে। সঙ্গে যোগ হয় নানা বিতর্ক। সাকিবের বোমা ফাটানো বক্তব্যের সঙ্গে মাশরাফিও বিপিএল নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করেন। সব মিলিয়ে বিপিএলর নবম আসর শুরু হয়েছিল এক ঝাঁক পাহাড় সমান বিতর্ক আর দায় নিয়ে। এসব অনেকটা আড়াল করে দিয়েছে মাশরাফির নেতৃত্ব সিলেট স্ট্রাইকার্সের উজ্জীবিত নৈপুন্য। হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। সিলেটকে এমন হয়ে উঠতে সামনে থেকে পথ দেখাচ্ছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য তৌহিদ হৃদয়। দলগত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে সিলেট অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেও তৌহিদের আলো ছড়ানো ব্যাটিং সবার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে। নবম বিপিএলের আবিষ্কার বলা যায় তৌহিদ হৃদয়। টানা তিন ম্যাচে করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। এক একটি হাফ সেঞ্চুরি শুধুই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রথম ম্যাচে ৫৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৬ রান করার পর মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে আউট হয়েছেন ৮৪ রানে। তবে তৌহিদ হৃদয়কে দু:সংবাদও পেতে হয়েছে। ফিল্ডিং করার সময় বাম হাতের আঙ্গুলে ব্যাথা পেয়ে ৮টি সেলাই দিতে হয়েছে। ডাক্তাররা তাকে ২ সপ্তাহের বিশ্রাম দিয়েছেন।
তৌহিদ প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চরি করেছিলেন ৩৩ বলে, দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৫ বলে আর তৃতীয় ম্যাচে ৩২ বলে। সর্বশেষ ম্যাচে ৪৬ বলে ৮৪ রানের ইনিংসে ছিল তার ৫টি করে চার ও ছক্কা।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে তৌহিদ হৃদয় ব্যাট করার সুযোগ পাননি। এই ম্যাচ সিলেট জিতেছিল ৮ উইকেটে। কিন্তু ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচ থেকেই তিনি ওয়ান ডাউনে ব্যাট করার সুযোগ পান। আর সেই সুযোগকে তিনি কাজে লাগাচ্ছেন শতভাগ। তাকে ব্যাট করতে নামতে হচ্ছে অনেকটা ওপেনারের মতোই। কারণ এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচেই সিলেটের ওপেনিং জুটি দাঁড়াতে পারেনি। প্রথম দুই ম্যাচে কলিন অ্যাকারম্যান ১ রান করে আউট হন। পরের দুই ম্যাচে তার পরিবর্তে ওপেন করেন মোহাম্মদ হারিস। তিনিও ব্যর্থ হন । দুইটি ম্যাচেই তিনি ৬ রান করে আউট হন। যে কারণে তৌহিদ হৃদয় ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে প্রথম ওভারে, কুমিল্লার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওভারে, ঢাকার বিপক্ষে তৃতীয় ওভারে মাঠে নামেন। উদ্বোধনী জুটির ব্যর্থতা সিলেটের জন্য মঙ্গল বহে আনছে। তৌহিদ হৃদয় নামার পর তার সাবলিল ব্যাটিং শুরুর ব্যর্থতা দূর করে সিলেটকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিচ্ছে।
বরিশালের বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১০১ রান যোগ করেন ১১.২ ওভারে। ব্যটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে ১ উইকেটে ৫৪। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে নাজমুলের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪.১ ওভারে ৪৩ রান এবং তৃতীয় উইকেট জুটিতে জাকির হাসানের সঙ্গে ৩ ওভারে ৩০ ও চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৫.৫ ওভারে ৪২ রান যোগ করেন তিনি। এই ম্যাচে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে ১ উইকেটে ৫২। আজ ঢাকার বিপক্ষে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান উঠে ১ উইকেটে ৫০। নাজমুলের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেচ জুটিতে যোগ করেন ৯.২ ওভারে ৮৮ রান যোগ করেন।
তৌহিদ হৃদয়ের এমন ব্যাটিংয়ের ভুয়সি প্রশংসা করেছেন দলের অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি বলেন, সে ফ্যান্টাস্টিক ব্যাটিং করছে। বিপিএলে ব্যাটিং করে সে বুঝিয়ে দিয়েছে তার লেবেল। সে কোন উচ্চতায় ব্যাটিং করতে পারে। টানা তিন ম্যাচ হাফ সেঞ্চুরি করে ম্যাচ সেরা হওয়া শুধুই সেটি প্রমাণ করে। নাজমুলের সঙ্গে তার দারুণ জুটি গড়ে উঠছে।’
টানা তৃতীয় ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হলেও তৌহিদ হৃদয় সেই পুরস্কার নিতে আসতে পারেননি মঞ্চে। কারণ ফিল্ডিং করার সময় নাসির হোসেনের একটি শট ঠেকাতে গিয়ে বাম হাতের আঙ্গুলে ব্যাথা পান। পরে তিনি চলে যান মাঠের বাইরে। সেখান থেকে চিকিৎসা নিতে পরে ডাক্তারের কাছে। হাতে পড়েছে ৮ সেলাই। ২ সপ্তাহ বিশ্রাম দিয়েছেন ডাক্তাররা। তার মানে সিলেট পর্বের আগে তার আর মাঠে ফেরা হচ্ছে না। এর মাঝে সিলেট চট্টগ্রামে ২টি ও ঢাকায় ১টি ম্যাচ খেলবে। এই তিনটি ম্যাচে তার খেলা হবে না।
ঢাকার ইনিংসের ১১.২ ওভারের সময় তৌহিদ হৃদয় এই ব্যথা পেয়েছিলেন। বোলার ছিলেন পেসার রেজাউর রহমান রাজা। তার বলে নাসির হোসেনের শট পয়েন্টে আটকাতে গিয়ে তৌহিদ হৃদয় এই ব্যথা পেয়েছিলেন।
এমপি/এসআইএইচ