তৃতীয় জয়ের সন্ধানে সিলেটের সামনে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা
বিপিএলের নবম আসরের চমক সিলেট স্ট্রাইকার্স। বিপিএলে ইতিহাসে একমাত্র দল যারা এখন পর্যন্ত ফাইনালেই উঠতে পারেনি। আগের আট আসরে ৫ বারই হয়েছে মালিকানা বদল। বদল হয়েছে নামেরও। কিন্তু ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এবার সেখানে বদ্ধ পরিকর নতুন মালিকরা। সেই লক্ষ্যে তারা শুরুতেই মাশরাফির মতো বিপিএলের সফল অধিনায়ককে দলে ভেড়ায়। পরে তার প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে তরুণ ও অভিজ্ঞ মিলে দল গড়ে শক্তিশালী। সঙ্গে ভালো মানের বিদেশি। এদের সমন্বয় সিলেট বেশ ভালোভাবেই তাদের শিরোপা জয়ের কথা জানান দিয়েছে।
প্রথম দুই ম্যাচেই তারা প্রতিপক্ষকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছে। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৮ উইকেটে মাত্র ৮৯ রানে আটকে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় ৮ উইকেটে। ওভার খেলেছিল ১২.৩টি। পরের ম্যাচে তারা পড়েছিল বরিশালের বিশাল বড় এক চ্যালেঞ্জের মুখে। ১৯৪ রান করতে হবে তাড়া। সেই রানও উদ্যোমী মাশরাফি বাহিনী ১ ওভার হাতে রেখেই ৪ উইকেট হারিয়ে অতিক্রম করে যায়। এবার তাদের সামনে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। খেলা শুরু হবে দুপুর দেড়টায়।
কুমিল্লা নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরেছিল রংপুর রাইডার্সের কাছে ৩৪ রানে। রংপুর রাইডার্স আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৭৫ রান করে সেই রান কুমিল্লাকে টপকে যেতে দেয়নি। কুমিল্লা ৫ বল হাতে রেখে ১৪২ রানে অলআউট হয়েছিল। প্রথম দুই দিনের ৪ ম্যাচে কুমিল্লাই একমাত্র অলআউট হয়েছিল। কুমিল্লা আজ সোমবার (৯ জানুয়ারি) চাইবে সিলেটের জয় রথ থামিয়ে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিতে।
কুমিল্লাকে প্রথম জয় তুলে নিতে সিলেটের বেশ শক্ত প্রতিরোধের সামনেই পড়তে হবে। প্রথম ম্যাচে তারা নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি। দেশি-বিদেশি মিলে তাদের দলে তারকায় ঠাসা। রংপুরের বিপক্ষে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেনি লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, মোসাদ্দেক হোসেন, সৈকত আলী, মোহাম্মদ নবী ডেবিড মালানরা। এদের সবার সম্মিলিত রান ছিল মাত্র ৯৮। একইভাবে বল হাতে জ্বলে উঠতে না পারাতে রংপুরের রান নিজেদের গণ্ডির ভেতর আটকে রাখতে পারেননি মোস্তাফিজ, ফজলহক ফারকী, মোহাম্মদ নবী, খুশদিল শাহ, আশিকুর জামানরা। এরা ১৮ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছিলেন ১৬১। ডট বল দিয়েছিলেন ৩০টি।
অপরদিকে টানা দুই ম্যাচ জিতে সিলেটের খেলোয়াড়রা আছেন দারুণ ফর্মে। শৈত্যপ্রবাহের মাঝে তাদের মাঝে আছে উত্তাপ। সেই উত্তাপের আরেকটি প্রদশর্নী হতে পারে আজ কুমিল্লার বিপক্ষে। দুইটি ম্যাচেই সিলেটের একমাত্র ব্যর্থ ক্রিকেটারে হলেন নেদারল্যান্ডসের কলিন অ্যাকারম্যান। উভয় ম্যাচেই তিনি ১ রান করে আউট হয়ে যান। দুইটি ম্যাচেই অপরবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলতে নামা সিলেট আজকের ম্যাচে একটি পরিবর্তন আনতে পারে এই কলিনকে একাদশের বাইরে রেখে।
দুইটি ম্যাচেই কলিনের ব্যর্থতার পরও সিলেট জয়ী হয়েছে পরবর্তি ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যের কারণে। নাজমুল চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকার পর বরিশালের বিপক্ষে করেছিচলেন ৪৮ রান। জাকির হাসান দুইটি ম্যাচেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। বিশেষ করে বরিশালের বিপক্ষে ছিলেন একটু বেশিই। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে মাত্র ১৮ বলে করেছিলেন ৪৩ রান। চট্টগ্রামের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ তার ব্যাট থেকে এসেছিল ২১ বলে ২৭ রান। মুশফিকুর রহিম দুইটি ম্যাচে অপরাজিত থাকেন অপরাজিত ৬ (বল ৮) ও ২৩ (বল ১১) রান করে। তবে নজর কাড়ের বরিশালের বিপক্ষে এবারের আসরে প্রথমবারের মতো ব্যাট করতে নেমে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য তৌহিদ হৃদয়। প্রথম ওভারেই ক্রিজে এসে নাজমুলের সঙ্গে তিনি দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১১.২ ওভারে ১০০ রান যোগ করে দলের জয়ের রাস্তা তরান্বিত করার পাশাপাশি নিজে করের ৩৪ বলে ৫৫ রান। জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। বল হাতে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তরুন পেসার রেজাউর রহমান রাজা। পরের ম্যাচে মাশরাফি নেন ৪৮ রানে ৩ উইকেট। তবে দুই ম্যাচে ২ উইকটে পেলেও মোহাম্মদ আমিরের বোলিং সিলেটের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছিলেন ২টি। বরিশালের রান ফোয়ারার মাঝে তিনি কোনও উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে রান দিয়েছিলেন ৩১। একইভাবে বাঁহাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমের নামও বলতে হয়। চট্টগ্রামের বিপক্ষে ২ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়েছিলেন। পরের ম্যাচে ৪ ওভারে রান দিয়েছিলেন ২৭। উইকেট নিয়েছিলেন ১টি।
এমপি/এসএন