হৃদয়ের অন্তরে মাশরাফি!
তৌহিদ হৃদয়ের নামটা বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের অনেকেরই হয়তো মনে নেই। কিন্তু যখনই বলা হবে তার নামটি জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যুবদের সেরা সাফল্যে, তখনই সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ করে উঠে হয়তো বলবেন আরে সে তো আমাদের আকবর বাহিনীর বীর সেনানি ছিল।
তারপর থেকে অনেকটা আড়ালে পড়ে যান হৃদয়। তবে তিনি শুধু একা নন, সেই দলের প্রায় সবাই-ই। এর কারণ অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার ট্রানজেকশন প্রিরিয়ড। এ সময় ঘরোয়া আসর ছাড়া নিজেদের আলোকিত করার আর খুব একটা প্লাটফর্ম থাকে না। তবে সেখানে কিছুটা আলোতে ছিলেন অধিনায়ক আকবর আলী।
এবারের বিপিএলের শুরুতেই আবার নিজেকে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন তৌহিদ হৃদয়। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ফরচুন বরিশালের রানের পাহাড় টপকানোর ম্যাচে ব্যাট হাতে দিয়েছেন সামনে থেকে নেৃতত্ব। ৩৪ বলে ১ ছক্কা আর ৭ চারে ৫৫ রান করে জিতে নিয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। বিপিএলে তৌহিদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চেুরি যেমন প্রথম, তেমনি ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতাও।
বিপিএলে সিলেটই একমাত্র দল যারা এখন পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারেননি। এমন কি ফাইনালেও উঠতে পারেনি। এবার তারা সেই খরা দূর করার মিশনে মাশরাফির নেতৃত্বে গড়েছে শক্তিশালী দল। যার নমুনা তারা রেখেছে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে হৃদয় ব্যাট হাতে কোনো কিছু করার সুযোগ পাননি। কারণ, প্রতিপক্ষকে মাত্র ৮৯ রানে আটকে রেখে সিলেট ম্যাচ জিতেছিল ৮ উইকেটে।হৃদয়কে ব্যাট হাতে নামতেই হয়নি। কিন্তু বরিশালের ১৯৪ রানের পাহাড় টপকাতে তাকে নামতে হয়েছিল এবং প্রথম সুযোগেই দিয়েছেন তার প্রতিদান। এ দিন তিনি ব্যাট করতে নেমেছিলেন তিনে। প্রথম ম্যাচে তিনে ব্যাট করেছিলেন জাকির হাসান।
শিরোপার জন্য সিলেট যে দল গড়েছে সেখানে অনুসরণ করেছে মাশরাফির প্রেসক্রিপশন। মাশরাফির প্রেসক্রিপশনে সামনের দিকে ছিল তৌহিদ হৃদয়ের নাম। এই গল্প হৃদয় শুনেছেন স্বয়ং মাশরাফির কাছ থেকে। সে কথাই তিনি জানান নিজের কন্ঠে, ‘মাশরাফি ভাইয়ের কথা আলাদা করে আর কি বলব। উনি আমাদের সবার অধিনায়ক। তিনি প্রথম থেকে বিশেষ করে আমাকে বলছেন, এখনো বললেন, তার প্রথম টার্গেটে আমি ছিলাম, আমাকে নেবেন।’
মাশরাফি শুধু খেলেন না, দলকেও খেলান। তার পরশে যেন যাদুর কাঠির মতো ক্রিকেটারা জেগে উঠেন। তিন ফরম্যাটের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে তার হাত ধরেই বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পেরেছে। বিপিএলের ৮ আসরে তিনি ৪ বারের শিরোপা জয়ী দলের নেতা ছিলেন। এবার তার পরশে শিরোপার স্বাদ পতে চায় সিলেটও। হৃদয় হতে পারেন সেই সাফল্যের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার অন্যতম কাণ্ডারি। হৃদয়ের অন্তর জুড়ে আছে তাই মাশরাফির নাম। তার স্বপ্ন ছিল মাশরাফি-মুশফিকদের সঙ্গে খেলা। তিনি এখনো জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। এদিকে মাশরাফি আবার জাতীয় দলের তিন ফরম্যাট থেকেই নিয়েছেন বিদায়। মুশফিকও বিদায় নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি থেকে। তাই সিলেট স্ট্রাইকার্সে খেলার মাধ্যমে হৃদয়ের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার অনেক সৌভাগ্য। আমার স্বপ্ন ছিল মাশরাফি ভাই, মুশফিক ভাইদের সঙ্গে খেলার। সেটা এবার পেরেছি এবং ভালো একটা গাইডলাইনের ভেতর আছি। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাধীনতা পেয়েছি ভালোভাবে। চেষ্টা করছি তা কাজে লাগাতে।’
নিজের ৫৫ রানের ইনিংস সর্ম্পকে বলতে গিয়েও হৃদয় উচ্চারণ করেছেন মাশরাফির নাম। সঙ্গে ছিল মুশফিকের নামও।
তিনি বলেন, ‘প্রথম ইনিংস খেলার সময়ই মুশফিক ভাই, মাশরাফি ভাই বলছিলেন যে, উইকেট অনেক ভালো। বল ভালোভাবে ব্যাটে আসছে। ২০০ রান হলেও তাড়া করার মতো। প্রথম ইনিংস শেষে ড্রেসিং রুমেও একটা কথাই হয়েছে যে, শুরুটা ভালো করতে পারলে এই রান আমরা তাড়া করতে পারব। মাশরাফি ভাই, মুশফিক ভাই যে পরিকল্পনা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’
হৃদয় প্রথম ম্যাচে চারে ব্যাট করলেও বরিশালে বিপক্ষে তিনে ব্যাট করাটা জানান দলের প্রয়োজন। মাশরাফি-মুশফিক আগেই তাকে জানিয়ে রেখেছিলেন যে ডান হাতি ব্যাটসম্যান শুরুতেই আউট হলে ডান-বাম কম্বিনেশনের কারণে তাকে যেতে হবে। কলিন অ্যাকারম্যান প্রথম ওভারেই আউট হলে হৃদয়কেই মাঠে যেতে হয়েছিল। সেই ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আগে থেকেই জানতাম যে আমাকে এখানে নামতে হবে। মাশরাফি ভাই, মুশফিক ভাই আমাতে আগে থেকেই বলেছিলেন যে, ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের কারণে প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রথম ইনিংস শেষেও মুশফিক ভাই বলেছেন, তৈরি যেন থাকি, ডানহাতি ওপেনার আউট হলেই আমাকে যেতে হবে।’
এমপি/এমএমএ/