ভয় পেয়েছিলেন ইয়াসির আলী
একেই বলে মন্দ কপাল। সেই কবে থেকে জাতীয় দলের সাথে আছেন। হোক টি-টোয়েন্টি, কিংবা ওয়ানডে অথবা টেস্ট স্কোয়াড। কিন্তু সেরা একাদশে আর সুযোগ পাওয়া হয়নি। তিনি হলেন ইয়াসির আলী। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কেটে গিয়ে তার আকাশে নতুন সূর্যোদয় উঠেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। কিন্তু কথায় আছে না অভাগা যেদিক তাকায়, সেদিকে সাগর শুকিয়ে যায়! ইয়াসির আলীর অবস্থাও হয়েছিল অনেকটা সে রকমই।
সেরা একাদশে সুযোগ পেয়ে ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন ইয়াসির আলী। প্রথম ইনিংসে(৪) সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিকই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যান তিনি। তাও দলের বিপর্যয়ে ৪৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর। ব্যাটিংয়েও এক ধাপ উন্নতি ঘটে। প্রথম ইনিংসে নেমে ছিলেন সাত নাম্বারে। দ্বিতীয় ইনিংসে এক ধাপ উন্নতি পেয়ে ছয়ে। ক্রান্তিকালে পাকিস্তানের বোলিং তোপ উপেক্ষা করে নামের পাশে রান যোগ করেই যেতে থাকেন তিনি। একে একে যোগ করেন ৩৬। তখনই ঘটে বিপত্তি। ৭২ বলে ছয় বাউন্ডারিতে তার সাজানো ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।
শাহীন শাহ আফ্রিদির বল মাথায় লাগলে মাঠ ছেড়ে আসেতে বাধ্য হন ইয়াসির আলী। পরে তাকে নিয়ে যাওযা হয় সিটি স্ক্যান করানোর জন্য হাসপাতালে। তার ইনুজরিতে কনকাশন বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। এমনিতেই দলের সাথে থেকে না খেলতে খেলতে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ছিলেন তিনি। সেখানে খেলতে নেমে পেলেন ভয়ংকর আঘাত। এ যেন এক মিশ্র অনুভূতি। তবে ভাগ্য সহায়ক থাকায় তার আঘাত মারাত্বক হয়নি। ফলে দ্রুতই সেরে উঠেন। তাই তাকে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ঘোষিতে দলেও রাখা হয়।
মাথায় বল লাগাতে সেদিনের ঘটনায় ইয়াসির আলী অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময়কার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে একটু ভয় পেয়েছিলাম। কারণ মাথায় বল লেগেছিল। সেই সাথে কষ্টও পাচ্ছিলাম যে আমার অভিষেক ম্যাচ। দলকে একটু ভালো জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ করতে পারিনি। এটা আসলে মিশ্র অভিজ্ঞতা ছিল, ভয় ও কষ্টের।’
কিন্তু ভয় লাগার আগের অনুভূতি ছিল আনন্দদায়ক। এই আনন্দ ছিল দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম আর্ন্তজাতিক ম্যাচ খেলার। সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ইয়াসির আলী বলেন,
‘আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম টেস্ট খেলেছি। এর আগে ফিল্ডিং করেছি কিন্তু কখনও একাদশে থাকা হয়নি। এটা দারুণ অভিজ্ঞতা আমার জন্য।’
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ডোমিস্টিকে যতই ব্যাটিং করি না কেন, আন্তর্জাতিক লেভেলটা অন্যরকম। চাপের ভেতর ব্যাটিং করাটা অন্যরকম। এটা নতুন চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ দলকে এমন একটা পরিস্থিতি থেকে তুলে আনা। যখন আমি কাজটা করতে পেরেছি। এটা খুব ভালো অনুভূতি।’
আহত হয়ে ব্যাটিং করতে না পারা নিয়ে ইয়াসির বলেন, ‘এটা অনেক হতাশাজনক ছিল। আমি যেভাবে ব্যাট করছিলাম, এভাবে যদি করে যেতে পারতাম। তাহলে দল আরেকটু ভালো অবস্থায় থাকত। একজন নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে এসে ব্যাটিং করাটা সহজ নয় সবসময়। একটু তো কষ্ট লেগেছেই যখন দেখেছি আমি আউট হওয়ার পর ওভাবে কেউ ব্যাটিং করতে পারেনি।’
দলের সাথে থাকতে থাকতে খেলতে না পারলেও মনোবল হারায়নি ইয়াসির। এ সময় দলের সবার কাছ থেকেই পেয়েছেন অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, ‘এটা চ্যালেঞ্জিং কারণ অনেকদিন ধরে দলের সঙ্গে থাকা হচ্ছিল কিন্তু ম্যাচ খেলা হচ্ছিল না। আমি আগেও বলেছি আমি যে জায়গায় ছিলাম ওটা স্বপ্নের মতো অনেকের কাছে। টিম মেট, কোচ, ফ্রেন্ডস সবাই আমাকে মোটিভেট করত। তারা বলতেন যখনই সুযোগ পাবা কাজে লাগাবা।’
৪ ডিসেম্বর শুরু হবে ঢাকা টেস্ট। প্রথম টেস্ট লড়াই করে হার মেনেছে বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টের ব্যাপারে দলের নবীন সদস্য বলেন, ‘উইকেট কেমন থাকবে জানি না। মূল বিষয় হচ্ছে আমাদের যে প্রসেসটা আছে, সেটা মেইন্টেইন করতে হবে। উইকেট যেমন চায় তেমন ব্যাটিং করা।’
এমপি/এসআইএইচ