সেমিফাইনাল নয়, বাংলাদেশের ভাবনা শুধু পাকিস্তানকে হারানো
যেন যাদুর কাঠির পরশে বদলে গেছে বাংলাদেশ দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে ছিল এক বাংলাদেশ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরেক বাংলাদেশ। এ জন্য আকাশ থেকে মাটিতে নয়, মাটি থেকে আকাশে বাংলাদেশ দল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে খুবই নাজুক অবস্থা ছিল বাংলাদেশ দলের। কূল নাই, কিনার নাই, ভেসেছে অথৈ সাগরে। এক একটি ম্যাচ খেলতে নামছে। হারছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বড় ব্যবধানে। সমালোচনার তির বিদ্ধ হতে হতে আর জায়গা ছিল না। তখন প্রয়োজন ছিল সেই ঘা শুকানোর। ঘা শুকানোর মলম হিসেবে কিছুটা কাজে আসতে শুরু করে নিউজিল্যান্ডে তিন জাতির আসর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এসে পুরো অন্য এক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ এখনো স্বপ্ন দেখছে সেমিফাইনালে যাওয়ার।
শনিবার (৫ নভেম্বর) জুম মিটিংয়ে দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম এবারের আসরকে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য বলে চিহ্নিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারের আগে বাংলাদেশ আর কখনোই সুপার টোয়েলভে দুটি ম্যাচ জিততে পারেনি। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। ছেলেরা কৃতিত্বের দাবিদার। এ নিয়ে গর্ব করাই যায়।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে আগামীকাল রবিবার আ্যডিলেডে বাংলাদেশ খেলবে নিজেদের গ্রুপের শেষ ম্যাচ। শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়। এই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে বাংলাদেশ দল নিজেদের কাজটি করে রাখবে। তখন তাদের চেয়ে থাকতে হবে গ্রুপের অন্য দুটি ম্যাচের দিকে। এই দুইটি ম্যাচের একটিও যদি বাংলাদেশের অনুকূলে আসে, তবেই বাংলাদেশের খেলার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
শ্রীধরন বলেন, ‘আমরা ম্যাচ ভাই ম্যাচ ম্যাচ পরিকল্পনা করে এগোচ্ছি। পাকিস্তান কী রকম দল আমরা তা নিউজিল্যান্ডে তিন জাতির টুর্নামেন্টে বুঝেছি। আমরা জানি তারা কী রকম চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে আমাদের। পাকিস্তানকে হারাতে হলে আমাদের সেরাটা দিয়ে খেলতে হবে। আমরা শেষটা ভালোভাবে করতে চাই।’
বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারাতে পারলে, তখন নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা জিম্বাবুয়ের কাছে ভারতকে হারতে হবে। ভারত হারলে বড় ব্যবধানে হারতে হবে অথবা বাংলাদেশকে জিততে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে।
সেমিফাইনালে যাওয়ার এই যে সমীকরণ, সেটা কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে কেউ ভুলেও ভাবেননি। এমনকি টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে খেলোয়াড় কেউই না ।কারণ, তখন বাংলাদেশ যে অবস্থায় ছিল, সেখানে একটি জয় পায় কি না তা নিয়ে শঙ্কিত লোকের সংখ্যা ছিল ১০০ তে ১০০। সেমিফাইনালে লড়াইয়ে থাকাটা তো ছিল যেন পাগলের প্রলাপের মতোই। এই সমীকরণে শুধু জানান দেয় বাংলাদেশ দল কী পরিমাণ নিজেদের উন্নতি ঘটিয়েছে। এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তাই সাবধানী বাংলাদেশ দল।
সেমিফাইনালের বিষয়টা তারা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে। তাদের ভাবনা শুধু শেষটা করতে চায় ভালোভাবে পাকিস্তানকে হারিয়ে, জয় দিয়ে। তারপর সেমিফাইনালে সমীকরণ কি হয় পরে দেখা যাবে।
বাংলাদেশের মতো একই সমীকরণে দাঁড়িয়ে পাকিস্থান। তবে তারা বাংলাদেশের চেয়ে একটু সুবিধাজনক অবস্থানে, নেট রান রেটে। পাকিস্তানের নেট রান রেট + ১.১১৭ বাংলাদেশের নেট টার্গেট -১.২৭৬ ভারতের + ০.৭৩০। বাংলাদেশকে হারাতে পারলে আর অপর দুই ম্যাচের যেকোনো একটি তাদের অনুকূলে আসলে পাকিস্তান চলে যাবে সেমিফাইনালে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত নিজ নিজ খেলায় জয়ী হলে তখন বাংলাদেশ পাকিস্তান যে দল জিতুক না কেন, জয়টা তখন শুধুই সান্ত্বনা হয়ে থাকবে।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের যেমন সেমিফাইনালে লড়াইয়ে থাকার কোনো আশাই ছিল না, ঠিক তেমনি পাকিস্তান ছিল সেমিফাইনালে যাওয়ার জোর দাবিদার। কিন্তু দুই দলের শুরুটা হয়েছে বিপরীত। বাংলাদেশ জয় দিয়ে শুরু করে পরের ম্যাচে হারে। তৃতীয় ম্যাচে জিতে আবার চতুর্থ ম্যাচে হেরে যায়। পাকিস্তান প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালে লড়াই থেকে অনেকটা ছিটকেই গিয়েছিল। কিন্তু পরের দুই ম্যাচ জিতে তারা আবার ‘যদি’ নির্ভর সেমিফাইনালে লড়াইয়ে শামিল।
দুই দলই যেমন একই সমীকরণে দাঁড়িয়ে, তেমনি পরস্পরের বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়ার আগে শেষ ম্যাচে খেলেছে এবারের আসরে নিজেদের সেরা খেলা। পক্ষপাত দুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের কবলে না পড়লে বাংলাদেশতো ভারতকে হারিয়ে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তুমুল লড়াই করে হেরেছে ৫ রানে। অপরদিকে, যে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারেনি, হেরেছিল ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে আবার পাকিস্তান উড়িয়ে দিয়েছে ৩৩ রানে। দুই দলই তাই মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে পরস্পরের বিপক্ষে ময়দানে নামবে।
দুই দল সমান্তরাল থেকে মাঠে নামলেও আগের লড়াইয়ে কিন্তু পাকিস্তান বেশ এগিয়ে। ১৭ বারের মোকাবেলায় পাকিস্তানের জয়ের পাল্লা খুবই ভারি। জিতেছে ১৫ বার। বাংলাদেশের জয় দুটি। দুটি জয়ই ছিল পরপর। ২০১৫ সালে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে, পরের বছর এশিয়া কাপে। দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়েছিল শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
বাংলাদেশের জন্য সুখবর লিটন দাস কালকের ম্যাচে খেলবেন সমস্যা ছিল তা তিনি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছেন বলে দল জানানো হয়েছে। সেরা একাদশে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। ইয়াসির আলী পরিবর্তে সৌম্য সরকারকে আবার সেরা একাদশে ফিরিয়ে আনা হবে।
আজ বাংলাদেশ দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল। নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলী, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত এই চার ক্রিকেটার এসেছিলেন অনুশীলনে।
এমপি/এমএমএ/