সোহানের ইনজুরিতে টালমাটাল অবস্থা!
এক নুরুল হাসান সোহান ইনজুরিতে পড়ায় তার তার শূন্য স্থান পূরণ করতে হচ্ছে তিনজন ক্রিকেটারকে দিয়ে, সেখানে আবার বাংলাদেশের টিম ম্যানেজম্যান্ট, নির্বাচক কমিটি আর বিসিবিকে অগণিত প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দূর্দশা কাটাতে জিম্বাবুয়ে সফরে বিসিবিরর ‘থিম’ সংগীত ছিল তারুণ্যের ঝান্ডা হাতে কেতন উড়ানোর। দল থেকে এক যোগে বিশ্রামে পাঠানো হয়েছিল মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকুর রহিমকে। আগে থেকেই এই সিরিজে ছুটিতে ছিলেন সাকিব। তামিম ইকবাল মাত্রই নিয়েছেন অবসর। যে কারণে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট একেবারে সিনিয়র শূন্য হয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষ হিসেবে জিম্বাবুয়ে দুর্বল হওয়াতে বিসিবিও এই সুযোগটা লুফে নিয়ে কাজে লাগতে চেয়েছিল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সরিয়ে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া নুরুল হাসান সোহানের ইনজুরিতে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। আসলে এলেমেলো নয়, টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে বিসিবি যে পথে হেঁটেছে, সেখানে তৈরি হয়েছে অগণিত প্রশ্ন।
নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে মোসদ্দেক হোসেন সৈকতকে। কিপিং করবেন লিটন, নতুবা এনামুল হক বিজয়। এ পর্যন্ত কম-বেশি ঠিকই আছে। কিন্তু বিপত্তি বেঁধেছে ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানের পরিবর্তে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশ্রাম থেকে দলে ফিরিয়ে আনা নিয়ে। ।
প্রশ্ন ১: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেতৃত্ব ভালো দিতে না পারার পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও সময় ভালো যাচ্ছিল না। তাই তার দুইটি সুযোগই হরণ করে বিসিবি তাকে বিশ্রামে পাঠিয়েছিল। সেই বিশ্রাম কী তাহলে দুই ম্যাচেই শেষ?
প্রশ্ন ২: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুর্দশা কাটাতে তরুণদের উপর ভরসা রেখে নতুন করে তরি ভাসানোর পরিকল্পনা করে বিসিবির। মাহমুদউল্লাহকে দলে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে দুই ম্যাচ না যেতেই তারা নিজেদের সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
প্রশ্ন ৩: নুরুল হাসান সোহান হার্ড হিটার। তার পরিবর্তে যখন মাহমুদউল্লাহকে দল নেওয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায় তিনিও হার্ড হিটার। তাহলে তাকে বাদ দেওয়া যৌক্তিক ছিল না।
প্রশ্ন ৪: টি-টোয়েন্টি দল ছিল ১৫ জনের। নির্বাচকরা কি এমন দল দিলেন, যেখানে একজন মাত্র ক্রিকেটারে ইনজুরিতে পড়ায় তার বিকল্প দলে ছিল না। বাইরে থেকে আনা হলো। তাহলে দল গঠনেই গলদ ছিল?
এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় ক্রিকেট কথা বলার জন্য সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুুর পর্যন্ত নির্বাচক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন ও আব্দুর রাজ্জাকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। কিন্তু কথা হয় অপারশেনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর সঙ্গে।
এ সব প্রশ্নের জবাবে জালাল ইউনুস বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহকে অধিনায়ক থেকে সরানো হলেও কখনো বলা হয়নি সে দল থেকে বাদ।তাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছিল। টিম ম্যানেজমেন্ট চাওয়াতে তাকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নুরুল হাসান সোহান যেখানে ব্যাটিং করত, টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করেছে এখানে সিনিয়র ক্রিকেটার প্রয়োজন। তাই রিয়াদকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু গাজী আশরাফ হোসেন লিপু আবার তা মনে করেন না।
তিনি বলেন,‘বিসিবি তরুণদের উপর যে ভরসা রেখেছিল, তাদের সেই অবস্থানে থাকা প্রয়োজন ছিল। এত দ্রুত সরে আসা ঠিক হয়নি। সোহানের বিকল্প যদি রিয়াদ হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সোহানের মতো হার্ড হিটার রিয়াদও! তাহলে তাকে কেন আগে বাদ দেওয়া হলো।’
১৫ জনের দল নিয়ে জালাল ইউনুস বলেন, ‘দল গঠন ঠিকই ছিল। সোহান যে এ রকম ইনজুরিতে পড়বে তা কেউ ভাবেননি। মাহমুদউল্লাহকে না নেওয়া হলে পারভেজ ইমন বা মেহেদি হাসানর মিরাজ খেলত। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট দলে একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের প্রয়োজন বোধ করাতেই রিয়াদকে নেওয়া হয়েছে’ কিন্তু গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মনে করেন এভাবে মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘রিয়াদকে যে কারণে বিশ্রামে দেওয়া হয়েছিল, তাতে এ সিরিজ পর্যন্ত দেখা যেত। সে শুধু একজন খেলোয়াড় না, অধিনায়কও ছিল। এভাবে তাকে ফিরিয়ে এনে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি। একজন খেলোয়াড়কে যখন বিশ্রমে পাঠানো হবে, তার মানে সে ফিরে আসে আবার নিজের জায়গা পাবে? কিন্তু সে তো তার আগের জায়গা পায়নি?’
এমপি/এমএমএ/