সোহানের পরিবর্তে লিটন অধিনায়ক!
ইদানিং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) একটচা কালচার হয়ে গেছে অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হলেও সহ অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয় না। এতে করে হঠাৎ করে কোনো কারণে নিয়মিত অধিনায়ক না খেললে তখন নতুন অধিনায়ক বেছে নিতে বিসিবি বা টিম ম্যানেজমেন্টকে বৈঠকে বসতে হয়। অথচ এখানে যদি সহ-অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হতো তা’হলে এ রকম বৈঠক বা ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজনই পড়তো না। এটি একটি মধুর সমস্যা। এই সমস্যায় পড়েছে এবার বিসিবি। জিম্বাবুয়ে সফরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হঠাৎ করে ইনজুরিতে পড়ে গোটা সিরিজ থেকেই ছিটকে গেছেন নুরুল হাসান সোহান। এতে ওয়ানডে সিরিজে সমস্যা না হলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে আগামীকাল সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচ বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব নিয়ে। কে হবেন নুরুল হাসান সোহানের বিকল্প?
এবারের জিম্বাবুয়ে সফরেই নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়কত্ব করে পাঠানো হয়। সঙ্গে ছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এক ঝাক তরুন সেনানি। হার দিয়ে নেতৃত্ব শুরু করার পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা নিয়ে আসেন নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু সেই ম্যাচ চলাকালীন তিনি পেসার হাসান মাহমুদের একটি বল গ্লাভসবন্দি করতে গিয়ে বাঁহাতের তর্জনিতে ব্যথা পান। পরে এক্সরে রিপোর্টে চড় ধরা পড়লে দলের ফিজিও মোজাদ্দেদ আলফা সানি জানান সোহানকে সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরে আসতে তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। উল্লেখ্য নুরুল হাসান সোহান ব্যথা নিয়েও কিপিং করে যান। যে কারণে মাঠে তার পরিবর্তে কাউকে আর নেতৃত্ব দিতে হয়নি। এমন কি বাংলাদেশ সাত উইকেটে জিতে যাওয়াতে তাকে ব্যাট করতেও নামতে হয়নি।
আগামীকাল সিরিজ নির্ধারনী অলিখিত ফাইনাল ম্যাচ হওয়াতে ম্যাচটির গুরুত্ব দুই দলের জন্যই সমান। এমন একটি ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলে এক সোহানের অনুপস্থিতি দুই রকমের শূন্যতা দেখা দিয়েছে। নেতৃত্বের পাশাপাশি কিপিং কে করবেন।
সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেয়াতে টি-টোয়েন্টি দলে তারুণ্যের সমাহার। সিনিয়ররা দলে থাকলে সহজেই অধিনায়ক বেছে নেয়া যেতো। এখন না থাকাতে এ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। তরুণদের মাঝে যারা সিনিয়র তাদের মাঝ থেকেই বেছে নেয়া হবে একজনকে। দুইটি নাম ঘুরছে। একটি লিটন দাস, অপরটি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। লিটন দাস দলে নিয়মিত হলেও মোসাদ্দেক নিয়মিত নন। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচ তার ক্যারিয়ার সেরা (৪-০-২০-৫) বোলিংয়ে বাংলাদেশ সাত উইকেটে ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা নিয়ে এসেছে। এখন এই দুই জন থেকেই একজন দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। কার কাঁধে যাবে নেতৃত্বের ঝাণ্ডা, তা ঠিক করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। বিসিবি থেকে কোনো রকমের দিক নির্দেশনা দেয়া হবে না বলে ঢাকাপ্রকাশকে জানিয়েছেন ক্রিকেট অপারেশনসকমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। তিনি বলেন, ‘অধিনায়কের ব্যাপারে আমরা এখান থেকে কোনো কিছু বলে দেবো না। টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা ভালো মনে করবে,সেই সিন্ধান্ত নেবে।’
লিটন-মোসাদ্দেক দুই জনেরই অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে। লিটন টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক। পাশাপাশি তিনি ২০২১ সালে নিউ জিল্যান্ড সফরে অকল্যান্ডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে। সেই ম্যাচে মোসাদ্দেকও খেলেছিলেন। দলে পঞ্চপান্ডব বা আর কোনো সিনিয়র ক্রিকেটার না থাকায় মোসাদ্দেককেই বেছে নেয়া হয়েছিল। ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৬৫ রানে। টস জিতে লিটন বোলিং বেছে নিয়েছিলেন। নিউ জিল্যান্ডের চার উইকেটে ১৪১ রানের জবাবে বাংলাদেশ মাত্র ৯.৩ ওভারে ৭৬ রানে অলআউট হয়েছিল। এদিকে জাতীয় দলে অনিয়মিত মুখ মোসাদ্দেকের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা হলো ঘরোয়া ক্রিকেট। তার ঝুড়িতে আছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বিসিএলের শিরোপা জেতার অভিজ্ঞতা। এই হিসেবে পাল্লা ভারী লিটন দাসেরই। শুধু নেতৃত্বই নয়, পাশাপাশি কিপিং গ্লাভসও পড়বেন তিনি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও তিনি অধিনায়কত্বের পাশাপাশি কিপিংও করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত লিটন দাসকে দিয়েই নুরুল হাসান সোহানের দুই শূন্যতা পূরণ করার সম্ভাবনা বেশি। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির সঙ্গে জড়িত একজন বলেন, ‘লিটন টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক। পারফরমার। আবার সিনিয়রও। জাতীয় দলকে আগেও একবার নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই তারই সম্ভাবনা বেশি।’ তবে লিটনকে অধিনায়কত্ব দেয়া হলেও কিপিং নাও করতে পারেন বলে জানান তিনি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দলে ব্যাটসম্যান বেশি না থাকাতে মুনিম-বিজয় দুই জনেরই বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম। যেহেতু ওপেনার হিসেবে ইমন (পারভেজ হোসেন ইমন) আছে, তাকে খেলালে মুনিমই বাদ পড়বে। আর বিজয় আগে ফিল্ডিং ভালো করলেও এখন ভালো করতে পারছে না। তাকেই হয়তো কিপিং গ্লাভস দেওয়া হবে।
এমপি