জিম্বাবুয়েতে নতুনের কেতন ওড়েনি বাংলাদেশের
’ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়, তোরা সব জয়োধ্বনী কর।’
না হলো না। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কথাগুলোকে এক সুতোয় গাঁথতে পারলেন না টি-টোয়ন্টি ক্রিকেটে নতুন দিনের সন্ধানে থাকা বাংলাদেশের তরুণরা। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে দুর্বল মনে করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়ক করে এক ঝাঁক তরুণকে সঙ্গী হিসেবে দেওয়া হয়েছিল সফরে।
‘যদি লাইগ্যা যায়’-এর মতো যদি এতে করে কাটে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুর্দশা। কিন্তু না কাটেনি। সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। মুখ থুবড়ে পড়েছে নতুন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে খুবই বাজে সময় পার করতে থাকা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পেরে ওঠেনি সোহান বাহিনী। হার মেনেছে ১৭ রানে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের করা তিন উইকেটে ২০৫ রানের জবাব দিতে গিয়ে বাংলাদেশ করে ছয় উইকেটে ১৮৮ রান। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল রবিবার হারারে স্টেডিয়ামেই।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচ সেরা সিকান্দার রাজার বিস্ফোরক ২৬ বলে অপরাজিত ৬৫ রানের সঙ্গে মাধেভেরের ৪৬ বলে ৬৭ (অবসর) আর শন উইলিয়ামসের ১৯ বলে ৩৩ রানের কার্যকরী ইনিংসে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের সামনে তিন উইকেটে ২০৫ রানের পাহাড় যখন দাঁড় করায়, তখনই এক প্রকার বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। একদিকে জিম্বাবুয়ের এই রান ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের দলগত সর্বোচ্চ। আবার এই রান তাড়া করার মতো বাংলাদেশ দলে নেই কোনো পাওয়ার হিটার। আছে স্কিল ব্যাটসম্যান। কিন্তু তা দিয়েতো আর পাহাড় চপকানো যায় না। পরে হয়েছেও তাই। জয় থেকে ১৮ রান দূরে থাকতে বাংলাদেশ আটকে যায় ১৮৮ রানে।
স্কিল ব্যাটসম্যান আর পাওয়ার হিটারের ব্যবধান যে কি ব্যাপক তা বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুর দিকে দৃষ্টি ফেরালেই সহজেই আন্দাক করে নেওয়া যায়। ইনিংস শুরু হতে না হতেই দুই ম্যাচ পর আবার সেরা একাদশে ফিরেই আট বলে চার রান করেই আউট মুনিম শাহরিয়ার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এনামুল হক বিজয় হাজার রান করে জাতীয় দলে ফিরলেও তাকে ওয়ানডে ম্যাচে কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। খেলানো হয় টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি। দুই জায়গাতেই তিনি ব্যর্থ। আজও আরেকবার ব্যর্থ হলেন ২৭ বলে ২৬ রান করে। তারপরও বাংলাদেশ ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ৬০ রান সংগ্রহ করেছিল। এর যোগানদাতা ছিলেন লিটন দাস। তিনি মাত্র ১৯ বলে ছয় বাউন্ডারিতে ৩২ রান করেন। তিনি হন রান আউট। তার রান আউট ছিল বাংলাদেশের হারের পূর্বাভাস। দারুণ খেলতে থাকা লিটন শন উইলিয়ামসের বলে স্কুপ খেলেছিলেন। শর্ট ফাইন লেগে এনগারাভা ক্যাচ ধরলেও মুঠোতে ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু লিটন আউট হয়েছেন মনে করে ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটা ধরেন। কিন্তু তিনি আউট হননি তা বুঝতে পেরে সতর্ক জিম্বাবুয়ের ফিল্ডাররা। এনগাভারার থ্রো থেকে উইলিয়ামস নন স্ট্রাইকিংয়ের দিকে থাকা লিটনের স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দেন। আসলে তিনি ফিরছিলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। ৩২ রানের ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের ষষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিটন এক হাজার রান পূর্ণ করেন। তার আগে এ কীর্তি গড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার।
লিটন রান আউট হয়ে বিদায় নেওয়ার পরই নুরুল হাসান সোহান আসার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের রানের এই গতি আর বজায় থাকেনি। লিটনের পর এনামুল বিজয়ও আউট হন। এরপর আফিফ হোসেন ধ্রুবও টিকতে পারেননি আট বলে ১০ রান করে ফিরে গিয়ে। চারে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও আগ্রাসী ব্যাটিং করতে পারেননি। ২৫ বলে এক ছক্কা আর তিন চারে তিনি ৩৭ রান করে বিদায় নেন। এ সময় বাংলাদেশের রান চিল পাঁচ উইকেটে ১৬ ওভারে ওভারে ১৪৬। সেখান থেকে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত পরে ছয় উইকেটে ১৮৮ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছিল মূলত অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের আগ্রসাী ব্যাটিংয়ের কারণে। এ সময় মোসাদেদক হোসেন সৈকত তাকে দারুণ সাপোর্ট দিয়ে যান। এই দুই জন ষষ্ট উইকেট জুটিতে তিন ওভারে ৩২ রান যোগ করেন। মোসাদ্দেক ১০ বলে করেন ১৩ রান। কীভাবে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে হয় কিংবা পাওয়ার হিটিং করতে হয় তা দেখিয়েছেন নরুল হাসান সোহান তার ব্যাটিংয়ে। মাত্র ২৬ বলে চারটি ছক্কা আর একটি বাউন্ডারিতে তিনি ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার এ রকম ব্যাটংয়ের কারণেই বাংলাদেশ শোচণীয় হার এড়াতে পেরেছিল।
এমপি/এমএমএ/