তামিমের সাহসী সিদ্ধান্তে আছে আরও চমক!
উইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুই পিঠই দেখে ফেলেছে। এক পিঠ যদি হয় আধারে ঘেরা, অপর পিঠ আলোকিত। টেস্টের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুদ্রার এ পিঠ ছিল বাংলাদেশের আধারে ঢাকা। ওয়ানডে সিরিজে এসে অপরপিঠে সূর্যের উজ্জ্বল রশ্মির বিচ্ছুরণ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে উইন্ডিজ বাংলাদেশকে যেভাবে কাবু করেছিল একইভাবে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ‘বধ’ করেছে উইন্ডিজকে। টেস্টে সাকিব আল হাসান পারেননি, টি-টোয়েন্টিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ওয়ানডেতে এসে তামিম ইকবাল ঠিকই নিজের কাজটি করে দেখিয়েছেন। এখানে ক্রিকেটার তামিম ইকবালের চেয়ে নেতা তামিম ইকবালের অবদান অনেক বেশি।
ক্রিকেট দলগত খেলা। সবার সম্মিলিত অবদানেই আসে সাফল্য। কিন্তু ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অর্জনে নেতা তামিম ইকবালের বৈশিষ্ঠ্যকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করাই যায়। দুইটি ম্যাচেই একাদশ নির্বাচনে তার সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল প্রশংনীয় । তবে প্রথম ম্যাচের তুলনায় দ্বিতীয় ম্যাচের সেরা একাদশ নির্বাচনে তার সিদ্ধান্ত ছিল অতিমাত্রায় সাহসী। যেখানে তিনি প্রথম ম্যাচের মতোই সফল। নেতা হতে হয় এমনই।
প্রথম ম্যাচে তামিম ইকবালের সাহসী সিদ্ধান্ত সবারই জানা। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করা এনামুল হক বিজয়কে সেরা একাদশে না রেখে এক বছরেরও বেশি সময় পর ফিরিয়ে আনেন নাজমুল হক শান্তকে। আবার খেলেছিলেন ছয় ব্যাটসম্যান নিয়ে। যেখানে বাংলাদেশ সাত থেকে আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেও ব্যাটিং ব্যর্থতার মহামারি দূর করতে পারে না। ওয়ান ডাউনে নামা নাজমুলের ৩৭ রান ও ছয় উইকেটে ম্যাচ জেতার মাধ্যমে তামিম ইকবালের সাহসী সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে তাসকিনের মতো পেসারকে তামিম ইকবাল বাদ দিতে পেরেছেন বুকের পাঠার জোরে। তিনি নিজেও বলেছেন, তাসকিনকে বাদ দেওয়া ছিল কঠিন সিদ্ধান্ত।
কেন তিনি তাসকিনকে বাদ দিলেন? কখন বাদ দিলেন? তাসকিন এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে গতি সম্পন্ন পেসার। তিন ফরম্যাটেই ‘অটোচয়েস’। প্রথম ম্যাচও তিনি খেলেছেন। উইকেট না পেলেও রান দেওয়ার ক্ষেত্রে ছিলেন কৃপন। ৮ ওভারে রান দিয়েছিলেন মাত্র ২৫। ইনিংসে তার ইকোনমি রেট ছিল দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সব থেকে কম ছিল অভিষিক্ত নাসুম আহমেদের ২.০০।
আরেকটু পেছনে ফিরে দেখা যাক। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের কোনো ফরম্যাটেই জয় ছিল না। সেখানে বাংলাদেশ গত মার্চে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজ জিতে আসে ২-১ ব্যবধানে। ইনজুরি কাটিয়ে আবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরা তাসকিন ছিলেন সেই সাফল্যের কান্ডারি। হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। প্রথম ম্যাচে ৩৬ রানে তিনটি ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৫ রানে পাঁচটি উইকেট নিয়েছিলেন। এই দুইটি ম্যাচই বাংলাদেশ জিতেছিল যথাক্রমে ৩৮ ও ৯ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচে তাসকিন হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। পরে সিরিজ সেরার পুরস্কারও জিতেছিলেন। এরপর তিনি ইনজুরিতে পড়েন। আবার ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে ফিরে আসেন। এমন একজন খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া সহজ কথা নয়। সেই কঠিন কাজটিই করে দেখিয়েছেন তামিম ইকবাল এবং আবারো তিনি বিজয়ী।
কন্ডিশনের কথা বিবেচনা করে তামিম ইকবাল তাসকিনের পরিবর্তে খেলান মোসাদ্দেককে। নাজমুল হক শান্তর মতো মোসাদ্দেকও সেরা একাদশে ফিরেছিলেন গত বছর জুলাইয়ের পর। এখানে তামিম ইকবালের যুক্তি ছিল, কন্ডিশনের কারণে স্পিনার বাড়ানো আবার ব্যাটিং লাইন লম্বা করা। মোসাদ্দেক ব্যাট হাতে কিছু করে দেখানোর সুযোগ পাননি কিন্তু বল হাতে ১০ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে উইকেট তুলে নেন একটি। তার এই উইকেটটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম উইকেট। মোসাদ্দেক প্রথম দুই ওভারে ১২ রান দিয়ে ভালো করতে পারেননি। পরে দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসে প্রথম ওভারেই উইকেট পেয়ে যান। পরে তাকে দিয়ে তামিম ইকবাল টানা ৮ ওভার বোলিং করিয়ে ১০ ওভারের কোটা শেষ করেন।
দেখার বিষয় তামিম ইকবাল ১৬ জুলাই শেষ একদিনের ম্যাচে নতুন করে কি রকম সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন? তারও ইঙ্গিত তিনি দিয়ে রেখেছেন। নিজেকেও সরিয়ে রাখার আভাস দিয়ে রেখেছেন। সিরিজ জয় নিশ্চিত করার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় যেটা এখন আমাদের সময় এসেছে বেঞ্চের শক্তি দেখার। সাধারণত যখন পয়েন্টের খেলা থাকে, তখন এ রকম সুযোগ থাকে না। কিন্তু যখন এ রকম একটা সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে যান তখন যারা খেলেনি বা যাদের নিয়ে আমরা অনেক দিন ঘুরছি তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এটার জন্য যদি আমাকে একটা ম্যাচ মিস করতে হয় তাও ঠিক আছে। এই জায়গায় যদি আমরা বেঞ্চের শক্তিগুলো না দেখি তাহলে দেখব কখন? কারণ হঠাৎ করে যদি সেরা একাদশের খেলেয়াড় ইনজুড়ি হয়ে যায় তখন একটা ছেলেকে হঠাৎ করে ম্যাচ ছাড়াও যদি খেলে তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাই পরের ম্যাচেও খুব সম্ভবত দেখতে পারেন, অনেকেই যারা খেলেনি তারা খেলবে।’
এমপি/এসআইএইচ