হারের বৃত্ত ভাঙ্গার পালা বাংলাদেশের
বাতাসে হারের গন্ধ! এই বাতাস উইন্ডিজের বাতাস। এই গন্ধ উইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশের হারের গন্ধ। হারে হারে জর্জরিত বাংলাদেশ। যে হারগুলো বাতাসে মিশে গিয়ে বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিকর এক পরিবেশ তৈরি করেছে। হার-জিত খেলারই অংশ কিন্তু বাংলাদেশের এক একটি হারে কোনো শ্রী ছিল না। না টেস্ট ক্রিকেটে, না টি-টোয়েন্টিতে। এবার ওয়ানডে সিরিজ। তিন ম্যাচের সিরিজ শুরু হবে আজ রবিবার (১০ জুলাই) থেকে। সবগুলো খেলার ভেন্যুই গায়ানা। এবার হারের বৃত্ত ভাঙ্গার পালা। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার পালা। কারণ তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে এই একটি জায়গাতেই বাংলাদেশের শির উঁচু করা বিচরণ। বাংলাদেশকে রুখতে এক একটি দলকে দিতে হয় কঠিন পথ পাড়ি। সেখানে কোন দল সফল হয়, কোন দল পা পিছলে পড়ে।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এইতো এ বছরই মার্চ মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজে নাস্তানাবুদ হলেও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল। এবার উইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশের অবস্থা একটু বেশিই কাহিল। কারণ শক্তিতে উইন্ডিজ দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আবার সেখানে টেস্টের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশের করুণ অবস্থা। তাই আজ শুরু হওয়া ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই হবে।
পরিসংখ্যানে চোখ বুলালে শুধুই দেখা যায়, পায়ের নিচে মাটি অনেক বেশি শক্ত। যেখানে দাঁড়িয়ে যেকোনা দলকেই দেওয়া যায় হুংকার। সর্বশেষ ১০ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় সাতটিতে। হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে। আর উইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ১০ ম্যাচে বাংলাদেশর এই অবস্থা আরো বেশি পোক্ত। মাত্র একটিতে হার। এর মাঝে আবার শেষ আট ম্যাচেই বাংলাদেশের জয়।
ঘরে-বাইরে-নিরপেক্ষ ভেন্যু সব খানেই বাংলাদেশ জিতেছে। তাইতো ওয়ানডে কাপ্তান তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘এই একটা সংস্করণে আমরা খুব স্বস্বিতে থাকি। এই সংস্করণ নিয়ে আমরা গর্বিত। এখানে আমরা খুব ভালো দল।’
তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চান না তামিম ইকবাল। মাঠের খেলাই আসল। জিততে হলে সেখানে ভালো খেলতে হবে। তিনি বলেন, ‘যতই ভালো খেলি না কেন নির্দিষ্ট দিনে আসল কাজটা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আমরা ওয়ানডে সিরিজে ভালো শুরু করব।‘
ওয়ানেডতে বাংলাদেশ যতোই ভালো খেলুক না কেন এবার খেলতে নামবে হারের বৃত্তে থেকে। একে তো হারের মাঝে সেখানে আবার সিরিজের শেষ বেলা। এ সময় হোম সিকনেসটাও ক্রিকেটারদের মাঝে কাজ করে। তামিম ইকবাল বলেন, ‘একটা সিরিজে যখন আপনি কোনো ম্যাচই জিততে পারছেন না তখন কাজটা সবসময়ই কঠিন। আমরা টেস্টে, টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলতে পারিনি। এমন নয় যে যারা টেস্ট বা টি–টোয়েন্টিতে ছিল তারা চেষ্টা করেনি। তারা অবশ্যই চেষ্টা করেছে। আবার এটাও সত্যি যে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি।’ তাই বলা যায় জিততে হলে বাংলাদেশকে কঠিন সময় পাড়ি দিতে হবে।
ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের যে শক্ত ভিত্তি, সেই ভিত্তির দুই খুটি সাকিব ও মুশফিকুর রহিম নেই এই সিরিজে। মুশফিক পবিত্র হজ পালনের জন্য এবং সাকিব ছুটি নেওয়াতে নেই দলে। মুশফিকের বিকল্প হিসেবে অনেকটা নুরুল হাসান সোহান পুষিয়ে দিলেও সাকিবের বিকল্প নেই। এক সাকিব নেই মানে দুজনকে দিয়ে পূরণ। আবার ইনজুরির কারণে নেই ইয়াসির আলীও। এই তিনজনই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন। তাই আজকের ম্যাচে ৩টি পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ সেরা একাদশ সাজাবে। শূন্য স্থান পূরণ করা হবে এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও নুরুল হাসান সোহানকে দিয়ে। এনামুল সর্বশেষ খেলেছিলেন ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। মোসাদ্দেক ও নুরুল হাসান সোহান সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ২০২১ সালের ২০ মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
গায়ানার এই মাঠ বাংলাদেশের অনেক সুখ স্মৃতি আছে। তিন ম্যাচের দুইটিতেই পেয়েছে জয়। আজ আরেকটি জয়ের সন্ধান পেতে তিন পেসার তাসকিন-মোস্তাফিজ-শরিফুলকে নিয়ে একাদশ সাজনোর সম্ভাবনা বেশি। স্পিনের দায়িত্ব পালন করবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বাকি এক বোলারের কাজ সারতে হবে মোসাদ্দেক, আফিফ এমনকি প্রয়োজনে মাহমুদউল্লাহকে দিয়েও।
গায়ানার এই উইকেটে ব্যাটিং সহায়ক হলেও শুরুতে পেসাররা সুবিধা পেয়ে থাকেন একটু বেশি। টস জিতলে তাই বোলিংই বেছে নিতে চাইবেন যেকোনো অধিনায়ক।
এমপি/এসআইএইচ