মাহমুদউল্লাহর মুখস্থ অধিনায়কত্ব নিয়ে লিটন
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে দলগত সর্বোচ্চ রান হলো ইংল্যান্ডের । ২০১০ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে তারা ৫ উইকেটে করেছিল ১৯১ রান। কিন্তু এই মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ১৪৬। ২০১৯ সালে উইন্ডিজের ৬ উইকেটে করা এই রান ভারত অতিক্রম করেছিল ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রান করে।
আবার এই উইন্ডিজ ২০২১ সালে পাকিস্তানের ৬ উইকেটে করা ১৫৭ রান অতিক্রম করতে গিয়ে উইন্ডিজ ৪ উইকেটে করেছিল ১৫০ রান। হেরেছিল ৭ রানে। অর্থ্যাৎ এই মাঠে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান হলো ১৫০। বাংলাদেশ যখন উইন্ডিজ সফরে প্রথমবারের মতো টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৬৩ রান করেছিল, তখন জয়ের পাল্লা বেশ মজবুতই ছিল। সেখানে আরও বেশি পাইলিং তৈরি হয় ৪৩ রানে উইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নেওয়ার পর। কিন্তু তারপরও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে পারেনি। হেরেছে ৫ উইকেটে। বল বাকি ছল তখনো ১০টি। আর এমনটি হয়েছে বাংলাদেশের কাপ্তান মাহমুদউল্লাহর ‘মুখস্থ’ অধিনায়কত্বে।
মাহমুদউল্লাহর মুখস্থ অধিনায়কত্ব কেমন ছিল? প্রথম ওভারেই আবার সেরা একাদশে ফিরে আসা নাসুম ফিরিয়ে দেন ব্রান্ডন কিংকে। নাসুমের সঙ্গে অপরপ্রান্তে শুরু করা মেহেদি হাসান ফিরিয়ে দেন সামরাহ ব্রুকসকে। ফলে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে তাদের রান আসে ২ উইকেটে ৪৩ রান। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারে সাকিব বল হাত তুলে নিয়েই প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন স্মিথকে। কিন্তু সাকিবের ওভার শেষে মাহমুদউল্লাহ তাকে বোলিং আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন। কারণ, সে সময় উইকেটে ছিলেন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মায়ার্স ও অধিনায়ক নিকোলাস পুরান।সাকিবও বাঁহাতি। একই কাজ মাহমুদউল্লাহ করেছিলেন আগের ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত প্রথম ওভারে মেডেন উইকেট নেওয়ার পরও তাকে দিয়ে পরে আর বোলিংই করাননি উইকেটে দুই ডানহাতি ব্যাটার থাকাতে। এবার মাহমুদউল্লাহ সাকিবকে সরিয়ে কী করলেন? তার পরিবর্তে নিয়ে আসলেন মোস্তাফিজকে। তিনিও বাঁহাতি। শুধু পাথর্ক্য সাকিব স্পিনার, মোস্তাফিজ পেসার। তো মোস্তাফিজ কী করলেন? সেই ওভারে তিনি দিলেন ১৩ রান। এরপর মোস্তাফিজকেও সরিয়ে নেওয়া হলো। নিয়ে আসা হলো মোসাদ্দেককে। তিনি দিলেন ৮ রান। এ সময় আরেক বাঁহাতি পেসার শরিফুলকেও আক্রমণে নিয়ে আসা হয়। তিনি দেন ১৩ রান। মোস্তাফিজকে আবার আক্রমণে আনলে তিনি এবার দেন ১৫ রান। এক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয় নাসুমকেও। তিনি দেন ১৯ রান। ওভার তখন ১৫টি শেষ। জয়ের কাছাকাছি উইন্ডিজ। ২৬ বলে প্রয়োজন ৩০ রানের। হাতে ৬ উইকেট। কিন্তু তারপরও মাহমুদউল্লাহ সাকিবকে আক্রমণে নিয়ে আসেননি। তাকে যখন আক্রমণে নিয়ে আসেন,তখন ম্যাচের কোনো কিছু অবশিষ্ঠ নেই। সাকিব আক্রমণে আসেন ১৭তম ওভারে। আগে প্রথম বলেই উইকেট পেয়েছিলেন। এবার প্রথম বলেই চার হজম করেন। রান দেন ৮।
এভাবেই মাহমুদউল্লাহর মুখস্ত অধিনায়কত্বের ‘বলি’ হয় বাংলাদেশ। প্রশ্ন থেকেই যায় মাহমুদউল্লাহ সাকিবকে সরিয়ে যদি ডান হাতি বোলারদের দিয়ে বোলিং করাতেন, তা’হলে কথা ছিল। কিন্তু তিনিতো বাঁহাতি বোলারদের দিয়েও বোলিং করিয়েছেন। তা’হলে সাকিব কেন নয়? ডান হাতি বোলারের সন্ধান করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ মোসাদ্দেককে দিয়ে ৪ ওভারের কোটা পূরণ করিয়েছেন। আফিফ হোসেন ধ্রুবর হাতেও বল তুলে দিয়েছেন। তিন উইকেটও পান একটি ডেঞ্জারম্যান রভম্যান পাওয়ালকে আউট করে। কিন্তু রান দেন ১০টি। মাহমুদউল্লাহ নিজেও বল হাতে তুলে নেন। পরে দেখা যায় দলের সেরা বোলার ওভার প্রতি সবচেয়ে কম রান দেওয়া সাকিব বোলিং করেছেন মাত্র ২ ওভার। রান দিয়েছেন ১০।
মাহমুদউল্লাহর এমন মুখস্থ অধিনায়বত্ব নিয়ে লিটন দাস জানান , তাদের করার কিছুই নেই। তারা শুধু অধিনায়কে নির্দেশনাই পালন করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, মাঠে যদি পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগানো যেত, তাহলে এ প্রশ্নগুলো আসত না। আর সম্পূর্ণ মাঠ চালায় অধিনায়ক। অধিনায়ক যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমাদের প্র্রত্যেক খেলোয়াড়েরই তা পালন করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঠ তো আমি চালাব না বা আর দশটা খেলোয়াড় চালাবে না। আমাদের উচিত ওনার (অধিনাকের) যে সিদ্ধন্ত সে অনুযায়ী কাজ করা।’
তবে লিটন মাহমুদউল্লাহর মুখস্থ অধিনায়কত্ব নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও পরের কথায় বুজিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহর মখস্থ অধিনায়কত্ব ছিল ভুল। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে যদি ডানহাতি বোলারও বল করে, সমস্যা হয় না। তবে সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণ অধিনায়কের।’
এমপি/এমএমএ/