রোচের সাকিবে শুরু তামিম পূর্ণতা
উইন্ডিজের এই দলে সবথেকে অভিজ্ঞ ও সেরা বোলার কেমার রোচ। সেন্ট লুসিয়া টেস্টে পাঁচ পেসার নিয়ে খেলছে উইন্ডিজ। যেখানে আবার অ্যান্ডারসন ফিলিপ নামে একজনের অভিষেক হয়েছে। প্রথম ইনিংসে যখন পেসাররা একের পর এক উইকেট নিয়ে উল্লাস করছেন রোচ তখন তাদের বাহবা দিচ্ছেন। কিন্তু তাকে বাহবা দিতে কেউ এগিয়ে আসেননি। কিন্তু আসবেন কী করে? আসার তো উপলক্ষ থাকতে হবে। তিনি যে কোনো উইকেটই পাননি। অথচ তার একটি উইকেট শুধু উইকেটই হতো না, মাইলফলক হয়ে থাকতো। সেই উইকেট হতো তার ২৫০তম। আউট হওয়া ব্যাটসম্যানও রোচের মাইলফলকের সাক্ষী হয়ে থাকতেন। কিন্তু রোচের সেই উপলক্ষ আর আসেনি। কিন্তু রোচ বলে কথা। সতীর্থরা এভাবে একের পর এক উইকেট পেয়ে যাবেন আর তিনি চুপ করে বসে থাকবেন, তাতো হতে পারে না। ধৈর্যকে সঙ্গী করে দ্বিতীয় ইনিংসকে টার্গেট করে রাখলেন। সেই ধৈর্য্যের পরীক্ষার ফল যে এভাবে বাংলাদেশের জৈষ্ঠ্য মাসের পাকা আমের মতো মধুর হয়ে আসবে তা কে জানতো? উইকেট পাওয়ার নেশায় মত্ত হয়ে উঠেন তিনি।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই মরন কামড় দেন রোচ। প্রথম ইনিংসে উইকেট না পাওয়ার আফসোস সুদে-আসলে আদায় করে নিতে পণ করেন। এমনিতেই ব্যাটিং ব্যর্থতার ভারে নিমিজ্জিত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য যা ছিলে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো। রোচ মাথা তুলেই দাঁড়াতেই দেননি ব্যাটসম্যানদের। একের পর এক উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসে মরন কামড় দেন।
কেমার রোচ প্রথম আঘাত হানেন তামিম ইকবালকে আউট করে। এই উইকেটটি ছিল রোচের জন্য ‘বিশেষ’। এক উইকেটে দুই অর্জন। প্রথমত উইন্ডিজের স্বর্ণ যুগের শ্রষ্ঠদের অন্যতম কাণ্ডারি মাইকেল হোল্ডিংয়ের ২৪৯ উইকেট পেছনে ফেলা, পাশাপাশি ২৫০ উইকেটের মাইলফলক র্স্পশ করা। তাই এ এক উইকেটে রোচকে দুই রকম আনন্দ করার উপলক্ষ এনে দেয়। যে কারণে তামিম ইকবালকে আউট করার পর তিনি বল উঁচিয়ে ধরেন। দলের সবার সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠেন।
টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ শিকার হলো মুরালিধরনের ৮০০ উইকেট। এরপর দ্বিতীয় স্থানে আছেন শেন ওয়ান ৭০৮ উইকেট নিয়ে। সেই হিসেবে মাইলফলক বলতে বুঝায় ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০, ৫০০ এমন সংখ্যাকেই। ৫০.১৫০, ২৫০ কিংবা ৩৫০ এ রকম অর্জনকে মাইলফলক হিসেবে দেখা হলেও সেভাবে বড় করে দেখা হয় না। কিন্তু কেমার রোচ তামিম ইকবালকে আউট করার পর ২৫০ উইকেট নিয়ে যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তাতে মনে হবে তার এ অর্জনের পেছনে আরও কিছু মাহাত্ম লুকিয়ে আছে। সেই মাহাত্মই হলো মাইকেল হোল্ডিংয়ের মতো বোলারকে পেছনে ফেলা।
উইন্ডিজের স্বর্ণ যুগে মার্শাল-গার্নার-হোল্ডিং-রবার্টস মিলে ব্যাটসম্যানদের পিশে মারতেন। এখনকার মতো সে সময় এতো বেশি বেশি টেস্ট খেলা হতো না। তারপরও তাদের সময়ে এই চার বোলারই দুইশ উইকেটের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন। এই চারজনের মাঝে সবার নিচে আছেন রবাটর্স। ৯ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৩ টেস্ট খেলে তিনি উইকেট নিয়েছিলেন ২০২টি। হোল্ডিং ১২ বছরের ক্যারিয়ারে ৬০ টেস্টে উইকেট নিয়েছিলেন ২৪৯টি। জুযেল গার্নার ১০ বছরে ৫৮ টেস্টে খেলে ভাণ্ডারে উইকেট ছিল ২৫৯টি। খুব সহসাই রোচ গার্নারকেও পেছনে ফেলে দেবেন। এখনই তার উইকেট সংখ্যা ২৫২। এই চারজনের মাঝে সবার থেকে ক্যারিয়ার, ম্যাচ আর উইকেট প্রাপ্তির দিক দিয়ে এগিয়ে ম্যালকম মার্শাল। ১৩ বছরে ম্যাচ খেলেছিলেন ৮১টি। নামের পাশে উইকেট জমা করেছিলেন ৩৭৬টি। মার্শালকে অতিক্রম করতে হলে রোচকে দিতে হবে অনেক রাস্তা পাড়ি। কিন্তু তা হয়তো ৩৪ বছর বয়সী রোচের পক্ষে সম্ভব হবে না। তবে চেষ্টা করলে হয়তো ল্যান্স গিবসের ৩০৯ উইকেট ছাড়িয়ে যেতে পারবেন। আর মার্শালের উপরে থাকা অ্যামব্রোসের ৪০৫ কিংবা সবার উপরে থাকা কোটর্নি ওয়ালসের ৫১৯ উইকেট অধরাই থেকে যাবে।
কেমার রোচের চলার পথে বাংলাদেশ নামটি বেশ অঙ্গাঅঙ্গিভাবেই জড়িয়ে আছে। সাকিবকে দিয়ে শুরু করে তামিমকে দিয়ে পূর্ণতা এনেছেন।২০০৯ সালে কিংস্টনে তার অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। তার প্রথম শিকার ছিলেন সাকিব আল হাসান। তার গতির কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন সাকিব। গ্লাভসে লেগে গালিতে রিচার্ডসের হাতে ধরা পড়ে রোচকে অভিষেক উইকেট দিয়েছিলেন। সাকিব যেভাবে আউট হয়েছিলেন, তাতে করে তার করার কিছুই ছিল না। কিন্তু তামিম ইকবাল তাকে উইকেট উপহারই দিয়ে আসেন। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল অহেতুক খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ডি সিলভার হাতে ধরা পড়েন।
রোচরে পঞ্চাশতম শিকার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং। ২০১২ সালে পোর্ট অব স্পেনে তিনি এই অর্জন পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ব্রিজটাউনে নিউজিল্যান্ডের বিজে ওয়েটলিংকে আউট করে তিনি শততম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। দেড়শ উইকেট পূর্ণ করেন এই সেন্ট লুসিয়াতেই (আগে ছিল গ্রোস আইলেট) ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার কুশাল পেরেরাকে আউট করে। কেমার রোচের এ পর্যন্ত তিনটি অর্জন ছিল দেশের মাটিতেই। কিন্তু দুইশতম উইকেটের মাইলফলক র্স্পশ করেন দেশের বাইরে। ২০২০ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ডের ক্রিস ওকস ছিলেন তার সেই শিকার। এরপর আবার ঘরের মাঠে অর্জন করেন আড়াইশ উইকেট তার চেয়েও বড় হোল্ডিংকে পেছনে ফেলার কীর্তি।
এমপি/এসএন