ক্যারিবীয়রা আমাদের শাস্তি দিচ্ছে : ডমিঙ্গো
অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কী এমন অন্যায় করেছেন যে তাদের উইন্ডিজের ক্রিকেটাররা শাস্তি দিচ্ছেন! বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এই অন্যায় হলো ভালো খেলতে না পারা। যে কারণে তাদের শাস্তি পেতে হচ্ছে। সাজার মেয়াদ হচ্ছে উইন্ডিজের বোলাররা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তছনছ করে দিচ্ছেন আবার বাংলাদেশের বোলারদের তছনচ করে দিচ্ছেন তাদের ব্যাটসম্যানরা। আর এটিতেই কোচ রাসেল ডমিঙ্গো দেখছেন উইন্ডিয়ান কর্তৃক বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শাস্তি স্বরূপ। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে এ রকমই উপলদ্ধি ছিল কোচ ডমিঙ্গোর। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে ওরা আমাদের বিপক্ষে ৪০০ (৩৯৪) রান তাড়া করেছিল। মায়ার্স সেদিন ২০০ (২১০*) রান করেছিল । এ ধরনের ইনিংস আমাদের কেউ করতে পারছে না। এটা ছেলেদের জন্য অনেক বড় একটা শিক্ষা। টেস্ট ম্যাচ কঠিন। যখন আপনার লম্বা সময় ব্যাট করা উচিত কিন্তু করতে পারছেন না, তখন ভালো দল আপনাকে শাস্তি দেবে। এখন ওরা আমাদের শাস্তি দিচ্ছে।’
যে পিচে বাংলাদেশ ২৩৪ রানে অলআউট হয়ে গেছে সেই পিচে উইন্ডিজের হয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মায়ার্স। ১২৬ রানে এখনো অপরাজিত। ডমিঙ্গো এই ধরনের পিচে অন্তত ২৩৪ রানে অলআউট হওয়া মানায় না বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে প্রশ্ন তুলার আছে। এই পিচ ২৩০ রানের না। উইন্ডিজ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে কেন ওরা এই সংস্করণে আমাদের চেয়ে ভালো। ওদের একজন ১০০ রান করে অপরাজিত আছে। সামনে ওদের বড় রান করার সুযোগ। কারণ বড় জুটি গড়তে সক্ষম হয়েছে, লম্বা সময় ব্যাটিং করেছে। ওরাই দেখাচ্ছে কী করা উচিত আমাদের।’
মায়ার্সের ব্যাটিংকে উদাহরণ হিসেবে এনে ডমিঙ্গো বলেন, ‘এই টেস্টে খেলা এখনও অনেক বাকি। দেখবেন মায়ার্স ইতিবাচক ব্যাটিং করেছে। লম্বা সময় ব্যাটিং করার সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলছে। এখানে অবশ্যই ভাগ্যও তার সহায়ক ছিল। স্লিপে কিছু মাথার উপর দিয়ে কিছু পাশ দিয়ে চলে গেছে। তারপরও নিজের ভাগ্য কিন্তু নিজেকেই গড়তে হয়। বাজে বলকে শাসন করেছে।’
মায়ার্সের ব্যাটিং থেকে নিজ দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে বলে মনে করেন ডমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক ক্রিকেটার ফর্ম খুঁজচ্ছে, ছুটছে রানের পেছনে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আর বের হয়ে আসার উপায় লম্বা সময় ব্যাটিং করা। ৩০-৪০ রানের ইনিংস হচ্ছে অনেক। কেউ কেউ করছে ৫০ রান। কিন্তু কাইল মায়ার্স যা করছে তা কেউই করতে পারছে না। কারণ এটাই ২৩০ আর ৪০০ রানের মধ্যে পার্থক্য। আমাদের ওর ( মায়ার্স) মতো ১২০ রানের ইনিংস খেলতে হবে।’
ব্যাটিং নিয়ে অনেক কিছু বলার পর ডমিঙ্গো বোলিং নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘দেখুন এই মুহূর্তে আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের গল্পটা এমনই। আমরা এক সেশনে খুব ভালো খেলছি, পরের সেশন খুব বাজে পার করছি। ছেলেরা একটু বেশি অধৈর্য। এক টানা বেশি আটোসাটো বোলিং করতে করতে পারছে না, যা সৃষ্টি করবে প্রতিপক্ষের উপর চাপ। আমরা প্রথম টেস্টে এমন করতে পেরেছিলাম। আজ লাঞ্চের পরে যা হয়েছে এই দৃষ্টিকোন থেকে খুব হতাশ। উইকেটের জন্য অনেক বেশি আলগা বল দিয়েছি। মৌলিক ভুল ছিল যথেষ্ট ধৈর্য দেখাতে পারিনি।
বাংলাদেশের টেস্ট এগুতে না পারার কারণে হিসেবে ডমিঙ্গো মনে করেন, টেস্ট সংস্কৃতিতে বাংলদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এখানে সংস্কৃতি বলতে উইন্ডিজের দীর্ঘ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের কথা বলেছেন। একজন গ্যারি সোবার্স, ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচাডর্স, জর্জ হেডলি, এভারটন উইকস, ব্রায়ান লারার মতো ক্রিকেটারকে বুঝিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা অন্য দলগুলো থেকে অনেক পিছিয়ে। কারণ টেস্ট ম্যাচ আমাদের সংস্কৃতি যেখানে থাকা উচিত সেখানে নেই। টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতি আছে। ৮০/৯০ দশকে তারা বিশ্বের সেরা টেস্ট দল ছিল। কিভাবে টেস্ট খেলতে হবে তারা জানে। তাদের অনেক আইকনিক টেস্ট ক্রিকেটার আছে। ও রকম মানের ক্রিকেটার যতদিন না আসবে, ও রকম সিরিজ হবে না ‘
এমপি/এসআইএইচ