বাজে ব্যাটিংয়ের কোনো অজুহাত দেবেন না তামিম
শুক্রবার রাতটা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ঘুমাতে গিয়েছেন অন্য রকম এক অনুভূতি নিয়ে। রাত পোহালেই যে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। এ আনন্দে অনেকেই হয়তো রাতে ঘুমাতেই পারেননি। বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে যখন পদ্মা সেতুর ঢেউ বইছে, তখন উইন্ডিজের সেন্ট লুসিয়ায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বাজে খেলার প্রদর্শনী করে চলেছেন।
বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ২৩৪ রানে। কিন্তু যখন দেখা যায় এই ২৩৪ রানের ১৫৬ রানই এসেছে না দৌড়ে ৩৯ বাউন্ডারি থেকে, তখন চোখ কপালেই উঠার কথা। যে পিচে এ রকম স্ট্রোক খেলা যায়, সে পিচে এভাবে ২৩৪ রানে অলআউট হওয়া কিছুতেই মানায় না। এটাকে স্রেফ আত্মহত্যা বা গলাটিপে হত্যাই বলা যায়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আসলেই করেছেন সে রকমই। কেউ ছটফট করে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে এসেছেন, কেউ বাউন্সারে পরাজিত হয়ে অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেছেন। তাই তো এক সময় যেখানে রান ছিল দুই উইকেটে ১০৫, সেখানে ২৩৪ রানে অলআউট। অর্থাৎ ১২৯ রানে শেষ বাকি আট উইকেট।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কীভাবে আত্মাহুতি দিয়েছেন তার একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে তামিম ইকবালের ইনিংস। চমৎকার খেলছিলেন। চলে গিয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি। ৪৬ রানে ব্যাট করছিলেন। তখনই অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল খেলার কোনো প্রয়োজনই নেই। কিন্তু তিনি ব্যাট চালিয়ে দিলেন। ফলাফল পয়েন্টে ব্ল্যাকউডের হাতে ক্যাচ। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তামিম নিজেও স্বীকার করেছেন তার এ শট খেলাটা ঠিক হয়নি। ইচ্ছে করলেই ছেড়ে দিতে পারতেন।
তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে এরকম শুরু পেয়ে গেলে সাধারণত আমার ইনিংসগুলো বড় হয়। দুর্ভাগ্যজনক যে বড় করতে পারিনি। আজকের বলটি আমি ছেড়ে দিতে পারতাম। তবে বলটি যতটা ওঠার কথা নয়, তার চেয়ে বেশি উঠেছে। এজন্য ব্যাটের স্টিকারে লাগে।’
এভাবে আউট হওয়ার জন্য তিনি কোনো অজুহাত দেখাবেন না। তামিম বলেন, আমি এমন একজন যে এখানে এসে বলব এ কারণে হয়নি, ও কারণে হয়নি। আমার কাছে মনে হয়, যখন আমি শুরুটা পাচ্ছি, দলের সিনিয়র সদস্য হিসেবে, বড় করা উচিত ছিল। এখানে কোনো অজুহাত নেই।'
বাংলাদেশের ইচ্ছে ছিল টস জিতে বোলিং আগে নেওয়া। কিন্তু টস জেতা না হওয়াতে তার আর সম্ভব হয়নি। অগত্যা ব্যাটিং করতেই নামতে হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে শুরু হয়েছিল তাতে করে এভাবে ২৩৪ রানে অলআউট হওয়ার মতো ছিল না। তামিম ইকবাল মনে করেন ৩০০-৩২০ রান হলে ভালো হতো।
তিনি বলেন, ‘দেখুন, জুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যদি বড় জুটি হয়, তখনই বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। আজ আমরা ভালো শুরু করেছি। কিন্তু বড় রান হয়নি। তবু একটা পর্যায়ে আমরা ১২০ রানে (হবে ১০৫ রান) ২ উইকেট ছিলাম। সেখান থেকে মিডল অর্ডারে ধস নামে। এরপর লোয়ার অর্ডারে শরীফুল, ইবাদত কিছু রান করেছে। অবশ্যই লিটন ভালো খেলেছে। তবে আমাদের আজ ওই মঞ্চটা তৈরি ছিল বড় করার। টেস্টের প্রথম দিন ১২০ (হবে ১০৫ রানে) রানে ২ উইকেট, এমন শুরু যেকোনো দিনই নিতে চাইবেন। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারিনি। ৩০০-৩২০ রান যদি করতাম, তাহলে এই উইকেটে সেটা ভালো রান হতো।’
এভাবে ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য তামিম ইকবাল নির্দিষ্ট করে কাউকে বা কোনো বিভাগকে দায় দিতে চান না। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, ওই অবস্থা থেকে এই অবস্থায় চলে এসেছি। মূলত ব্যাপারটা হচ্ছে, হয় প্রথমে হচ্ছে না, না হলে মাঝে হচ্ছে না। এটিই সমস্যা। আমি এমন কেউ নই যে বলব, অমুকের কারণে হচ্ছে না বা তমুকের কারণে হচ্ছে না। ব্যাটিং বিভাগ হিসেবেই হচ্ছে না। আমি ভালো করি না করি, ছয় নম্বর ভালো করুক বা না করুক, টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডারের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই।’
ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বোলাররাও ভালো করতে পারেননি। তামিম মনে করেন ২০-২৫ রান বেশি দেওয়া হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘বোলিংয়েও আমরা ২০-২৫ রান বেশি দিয়ে ফেলেছি, এই রানটা কম দিলে আরও ভালো হতো। কারণ ওরা যে ধরনের ব্যাটিং করে স্বাভাবিকভাবে এত দ্রুত রান তোলে না। আমার কাছে মনে হয় ২০-২৫ রান দিয়ে দিয়েছি।’
তামিম এখন তাকিয়ে আছেন দ্বিতীয় দিনের দিকে। বোলারদের ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (দ্বিতীয় দিন) সকালের সেশনটা গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে খুব বেশি সুইং নেই। যেটা লাস্ট টেস্টে ছিল। আমাদের ধৈর্য্যের খেলা খেলতে হবে। রান কম দিয়ে যতদ্রুত উইকেট নেওয়ায় সম্ভব হয় আর কী। দেখতে হবে কাল উইকেট কেমন আচরণ করে।'
এমপি/এসএন