দারুণ সূচনার পরও বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা
ঘুরে-ফিরে সেই একই দৃশ্য। যথারীতি সেই ব্যাটিং ব্যর্থতার পূনরাবৃত্তি। ৬৪.২ ওভারে মাত্র ২৩৪ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। অ্যান্টিগা টেস্টে বাজেভাবে হারের পর সেন্ট লুসিয়া টেস্টে ভালো করার যে প্রত্যয় ছিল বাংলাদেশের, তা কুয়াচ্ছন্ন হয়ে গেল। প্রথম দিনই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। এখন যদি বোলাররা আবার প্রথম ইনিংসের মতো গর্জে উঠতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের খেলায় ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকবে!
বাংলাদেশ যে এভাবে এতো রানে গুটিয়ে যাবে তা কিন্তু ইনিংসের শুরু দেখে বুঝা যায়নি। তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়ের ৪১ রানের জুটির পর দুই উইকেট হারিয়ে ৭৭ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের বড় ইনিংস গড়ার ভীত গড়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু লাঞ্চের পর মড়ক লাগা শুরু হলে, সেই ভীত কেঁপে উঠে। দ্বিতীয় সেশনে চারটি ও শেষ সেশনের প্রথম ঘন্টায় বাকি চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৩৪ রানে। এক পর্যায়ে দলের রান ছিল দুই উইকেটে ১০৫। সেখানে বাকি আট উইকেট হারিয়ে করে মাত্র ১২৯ রান। লিটন দাস ৭০ বলে আট চারে ৫৩ রান করেন। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের চৌদ্দতম হাফ সেঞ্চুরি। নবম উইকটে জুটিতে এবাদত ও শরিফুল ৩৬ রান যোগ করলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দুইশ অতিক্রম করে। এবাদত অপরাজিত ২১ শরিফুল ২৬ রান করেন। এ ছাড়া তামিম ইকবাল ৪৬, নাজমুল হোসেন ২৬ ও এনামুল হক ২৩ রান করেন।
সেন্ট লুসিয়া টেস্ট শুরুর আগে অধিনায়ক সাকিবের ভাবনার কারণ ছিল প্রথম সেশন। যে কারণে তিনি মনে চেয়েছিলেন টস জিতে ফিল্ডিং নিতে। যাতে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসব্যাটারির সামনে পড়ে নাকানু-চুবানি খেতে নায় মনোবল তলানিতে থাকা দলের ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু সাকিব টস জিততে না পারলে তার সে পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু তার ভাবনা দূর করে দিয়েছিলেন দুই ওপেনারসহ টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। দুই ওপেনার মাহমুদুল (১০) ও তামিম ইকবালের (৪৬) উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ স্বস্তিতেই লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছিল। কিন্তু বিধিবাম। চা বিরতির পর সেখানে নেমে আসে আকাশ কালো করে মেঘ। যে মেঘ বৃষ্টিতে পরিণত হয়ে ভাসিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান নাজমুল (২৬), এনামুল (২৩), সাকিব (৮) ও নুরুল হাসান সোহানকে (৭)। চা বিরতির পর সেই বৃষ্টির পানি বন্যায় রূপ নিলে একে একে ভেসে যান মেহেদি হাসান মিরাজ, লিটন দাস, শরিফুল ও খালেদ।
চা বিরতির পরপরই মেহেদি হাসান মিরাজ মাত্র ৯ রান করে মায়ার্সের বলে অতিরিক্ত ফিল্ডার থমাসের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেযার পর লিটন দাস এবাদতকে নিয়ে এগুতে থাকনে। টেল এন্ডারের শেষ তিন ব্যাটসম্যানের উপর ভরসা না থাকাতে লিটন দাস কিছুটা আক্রমণাত্বক হয় উঠেন। ৬৬ বলে আট চারে ক্যারিয়ারের চৌদ্দতম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। হাফ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন বাউন্ডারিতে। আউটও হন আক্রমণাত্বক হয়ে জোসেফের বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ের গড়বড় করে। পয়েন্টে সহজেই ক্যাচ ধরেন বদলি ফিল্ডার থমাস।
লিটন আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের উইকেট তিনটি বাকি থাকলেও সেগুলোতে কোনো ভরসা ছিল না। কারণ এবাদত, শরিফুল আর খালেদ যখন-তখন আউট হওয়ার মতো ব্যাটসম্যান। কিন্তু সেখানেই চমক দেখান এবাদত ও শরিফুল। দুই জনে নবম উইকেট জুটিতে মারমুখি ব্যাটিং করে ৪.৫ ওভারে ৩৬ রান যোগ করেন। শরিফুল ১৭ বরে ৫ বাউন্ডারিতে ২৬ রান করে সিলসের দ্বিতীয় শিকার হন ব্লাকউডের হাতে ক্যাচ দিয়ে। সিলস(১) পরে খালেদকেও আউট করেন বনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
বাংলাদেশের ইনিংসের সব কটি উইকেটই নিয়েছেন উইন্ডিজের পেসাররা। তারা সেরা একাদশে পাঁচ পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছে। প্রথম টেস্টে খেলা একমাত্র স্পিনার গুদাকেশ মোটিকে পরিবর্তন করে অ্যান্ডারসন ফিলিপের অভিষেক ঘটায়। ফিলিপ নেন দুই উইকেট। তিনটি করে উইকেট নেন জোসেফ ও সিলস। দুইটি উইকেট নেন আরেক সেপার কাইল মায়ার্সও। অবাক করার মতো ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে উঠা কেমার রোচ কোনো উইকেটই নিতে পারেননি। পূর্ন করতে পারেননি ২৫০ উইকেট। তার প্রয়োজন ছিল মাত্র এক উইকেটের।
এমপি/এএস