সেন্ট লুসিয়ায় শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে বাংলাদেশ
সেন্ট লুসিয়াতে বাংলাদেশ এর আগে টেস্ট খেলেছে দুইটি। ২০০৪ সালে হাবিবুল বাশার সুমন, খালেদ মাসুদ পাইলট আর মোহাম্মদ রফিকের সেঞ্চুরিতে লারা চন্দ্রপলের দলের বিপক্ষে গর্বিত ড্র করেছিল যখন, তখন বাংলাদেশ টেস্ট পরিবারের শিশু। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগুচ্ছে। এরপর ২০১৪ সালে যখন খেলে তখন কৈশোর। কৈশোরে এসে বাংলাদেশ পারেনি শিশুকালের অর্জিত সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে। হেরেছিল ২৯৬ রানে। এবার যখন বাংলাদেশ খেলতে নামছে, তখন টগবগে যৌবন। কবি হেলাল হাফিজ লিখেছিলেন, ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’
বাংলাদেশের যুবারা যুদ্ধের ময়দানে গিয়েছে ঠিকই। লড়াইও করবে। কিন্তু সেই লড়াই যেন শুধুই লড়াই করার জন্য লড়াই। জয়ের জাগ্রত মনোভাব থাকে শূন্যোর কোটায়। হারতে হারতে জয়ের মনোভাব যে উধাও হয়ে গেছে দূর আকাশে। সেখান থেকে আবার মাটিতে নামিয়ে আনার সাধ্য কী আছে সাকিব বাহিনীর?
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে সাকিব কিন্তু জয়ের কথা বলেননি কখনো। সর্বোচ্চ স্পৃহা দেখিয়েছেন ভালো করার। ধাঁধায় আছেন উইকেটের চরিত্র নিয়ে। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন অ্যান্টিগা টেস্টের চেয়ে ভালো উইকেট হবে ব্যাটিংয়ের জন্য। পেস, বাউন্স একটু থাকবে। কিন্তু ওই রকম সাইডওয়েজ মুভমেন্ট থাকবে বলে মনে হয় না। তবে না খেলা পর্যন্ত বলা সম্ভব না, উইকেট আসলে কেমন হবে। আমরা যখন খেলাটা শুরু করব, এর ১৫-২০ মিনিট পর হয়তো আমরা বুঝতে পারব, উইকেটটা কেমন।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের আবেগ আর ভালোবাসা জড়িয়ে রয়েছে। দল যতোই বাজে খেলুক, সমালোচনায় তীরবিদ্ধ করলেও সমর্থকরা ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন না। আসলে তারা পারেন না। খেলা হলে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে তারা ঠিকই খবর রাখেন। টিভিতে চোখ রাখেন। কিন্তু উইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগাতে প্রথম টেস্ট বাংলাদেশের কোনো টিভি না দেখালে দর্শকদের আগ্রহে পানি ঢেলে দিয়েছিল। সেই টেস্ট বাংলাদেশ হেরেছিল সাত উইকেটে।
বাংলাদেশ যে অ্যান্টিগা টেস্টে শুধু সাত উইকেটে হেরেছে, তা কিন্তু নয়, এটাই বর্তমান চিত্র। এভাবে হারের পেছনে রয়েছে ব্যাটিং ব্যর্থতার দুর্বিসহ দৃশ্য। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে উভয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ৫৩ ও ৮০ রানে। এরপর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও যথারীতি ব্যাটিং ব্যর্থতার করুণ চিত্র। ভাগ্য ভালো শতরানের নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কা জেগে উঠার পরও অলআউট হয়েছিল ১০৩ রানে।
এবার কী অপেক্ষা করছে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া সেন্ট লুসিয়া টেস্টে? আবারও কী ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্রায়ণ? আবারও কী বাজে হার? সমস্যা উত্তোরণে অনেক চিন্ত-ভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু সব সমস্যা একই রকম নয়? বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কখনো ঘায়েল করেছেন পেসাররা, কখনো স্পিনাররা। নতুন করে নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া সাকিবের পর্যবেক্ষণে বের হয়ে এসেছে এ রকমই। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ তিন টেস্ট যদি দেখেন, তাহলে বলতে পারেন, গতিতে আমাদের সমস্যা। তার আগের তিন টেস্ট দেখলে বলবেন স্পিন। সুতরাং কঠিন কন্ডিশনে আমরা কখনোই টিকতে পারিনি। এখানে একটা সুযোগ, চ্যালেঞ্জও।’
দুমড়ে-মুচড়ে যায়া মনোবল নিয়ে বাংলাদেশ দল খেলতে নামবে উইন্ডিজের সেরা উইকেটে। সেন্ট লুসিয়ার উইকেট সাকিবের দৃষ্টিতে সেরা। তিনি বলেন, ‘এটাই ক্যারিবিয়ানের সেরা উইকেট। ফাস্ট বোলারদের জন্য এই উইকেটে অনেক কিছু আছে।’
কিন্তু এমন উইকেটে ব্যাটসম্যানরা কেমন করবেন? কীভাবে খেলবেন? সাকিব বলেন, ‘এমন উইকেটে স্বাভাবিকভাবে রান বেশি হয়। আড়াআড়ি ব্যাটের শটগুলো বেশি কাজে আসে। আমাদের পেস ও বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন নিউজিল্যান্ড কিংবা অন্যান্য দেশে এ ধরনের উইকেটই থাকে। আমাদের খেলোয়াড়েরা যেহেতু এসব ধরনের কন্ডিশনে খেলে অভস্ত খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
এমপি/এসএন