পাসিং ফুটবলের নান্দনিকতায় মালয়েশিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়
পাসিং ফুটবলের অপরূপ পসরা মেলে ধরলেন সাবিনা-মারিয়া-স্বপ্না-আঁখি-কৃষ্ণা-ঋতু-মনিকারা। তাদের নান্দনিক নৈপুণ্যের কাছে ম্লান হয়ে পড়ে র্যাঙ্কিংয়ে ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়া।
তাদের নিয়ে রীতিমতো ছেলে খেলায় মেতে উঠেন বাংলারা বাঘিনিরা। গুণে গুণে দেন ছয় গোল। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে মালয়েশিয়াকে পর্যুদস্ত করে এভাবেই ছয় ছয়বার গোলের উৎসবে মেতে উঠেন গোলাম রব্বানির শিষ্যরা। দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৬ জুন।
ফুটবলে বাংলাদেশের আগের সেই রমরমা অবস্থা নেই। এই না থাকাটা ছেলেদের ফুটবলকে ঘিরে বলা হয়ে থাকে। আসলেই জামাল ভুঁইয়ারা নিজেদের মেলে ধরতেই পারছেন না। সেখানে সাবিনারা দেখালেন দৃষ্টিনন্দন খেলা। জামাল ভুঁইয়ারা যেখানে গোল খরায় ভুগে থাকেন। সেখানে সাবিনারা গোলের উৎসবে মেতে উঠেন। যে মালয়েশিয়াকে আজ কমলাপুরে সাবিনারা অর্ধ ডজন গোলে হারিয়েছেন, সেই মালয়েশিয়ার পুরুষ দলের কাছে এশিয়ান ফুটবলের বাছাইপর্বে কুয়ালালামপুরে জামাল ভুঁইয়ারা হেরেছিলেন ১-৪ গোলে। জামাল ভুঁইয়াদের হারের প্রতিশোধ যেন নিলেন সাবিনারা। তবে এর আগে এটি সাবিনাদের নিজেদেরও প্রতিশোধ। ২০১৭ সালে তারা হেরেছিলেন ২-১ গোলে।
খেলায় বাংলাদেশথ আরও বেশি গোলে জয়ী হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। ৯ মিনিটে প্রথম গোলের আগেই দুইটি সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া পোষ্টে লাগাসহ আরও বেশ কয়েকটি সুযোগ হাত ছাড়া হয়েছে। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ৪-০ গোলে এগিয়ে ছিল। আঁখি খাতুন দুইটি এবং সাবিনা, স্বপ্না, মনিকা ও কৃষ্ণা গোল করেন।
বাংলাদেশের গোলগুলো ছিল হৃদয়ের মনি কোঠায় ধরে রাখার মতো। ৯ মিনিটে মারিয়া মান্ডার কর্নার থেকে মালয়েশিয়ার গোলরক্ষক বল গ্রিপে নিতে ব্যর্থ হলে ফাঁকায় দাঁড়ানো আঁখি খাতুন আলতু টোকায় বল জালে জড়িয়ে দেন। ২৬ মিনিটে সাবিনার করা গোলটি ছিল মনে রাখার মতো। মাঝমাঠ থেকে গড়ে উঠা আক্রমণ থেকে সানজিদা-স্বপ্না হয়ে বক্সে সাবিনার কাছ যায়। অরক্ষিত সাবিনা মালয়েশিয়ার গোলরক্ষককে কাটিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল জালে জড়িয়ে দেন। ৩১ মিনিটে আসে তৃতীয় গোল। সাবিনা সরাসরি কর্নার না নিয়ে সামনে দাঁড়ানো মারিয়া মান্ডাকে দেন। মারিয়া আবার সাবিনাকে দিয়ে, সাবিনা সেই বল গোলপোস্টে ক্রস করেন। প্রথমে বাংলাদেশের, পরে মালয়েশিয়ার একজন খেলোয়াড় হেড করার জন্য লাফিয়ে উঠেও না পারলে সেই বল পেয়ে যান আবারো ফাঁকায় দাঁড়ানো আঁখি খাতুন। প্রথম গোলের মতো একইভাবে টোকা দিয়ে নিজের দ্বিতীয় আর দলের তৃতীয় গোল করেন আঁখি। ৪২ সাবিনার শট পোস্টে লেগে হতাশ করলেও ৪৩ মিনিটে চতুর্থ গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। গোলটি স্বপ্না করলেও সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অধিনায়ক সাবিনার। বল নিয়ে ভেতরে ডুকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও তিনি না মেরে আরও অরক্ষিত থাকা স্বপ্নাকে দেন। সেই বল জালে পৌঁছাতে কোনো কষ্টই করতে হয়নি স্বপ্নাকে।
প্রথমার্ধে চার গোল দিলেও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের খেলায় কোনো আয়েশিভাব দেখা যায়নি। একইতালে খেলতে থাকে। গোলও আদায় করে আরও দুইটি।
৬৭ মিনিটে বক্সের ভেতর জটলা থেকে মনিকা চাকমা ডান পায়ের জোড়ালো শটে নিজের প্রথম ও দলের পঞ্চম গোল করেন। ৭৩ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে ঋতু পর্নার কৃষ্ণা রানী হেড করে দলর ষষ্ট গোল করেন।
এমপি/এমএমএ/