নতুন বলেই সর্বনাশ বাংলাদেশের!
ক্রিকেট এমনই। এই মেঘ এই রোদের মতোই যখন-তখন রং বদলায়। কাউকে হাসায়, কাউকে ডুবায় হতাশায়। ১০৯ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর যখন বাংলাদেশ ধুকছিল, ইনিংস হার এড়াতে তখনো ৪৭ রানের প্রয়োজন, তখন সাকিব- নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে আসে প্রতিরোধের ডাক। দুই জনে মিলে ৪৭ রানের ব্যবধান কমিয়ে দলকে লিড এনে দেন। পরে বাড়িয়ে নিতে থাকেন সেই লিড। ধীরে ধীরে খেলায় বাংলাদেশ ফিরে আসতে থাকে। মজবুত করতে থাকে অবস্থান। কিন্তু এ সবই শেষ হয়ে যায় ইনিংসে দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। ৮০ ওভার পর নতুন বল নিয়ে অধিনায়ক ব্রেথওয়েট তা তুলে দেন কেমার রোচের হাতে। আর সঙ্গে সঙ্গেই খেলা হয় যা বাংলাদেশের ললাটে দূর্গতি। ১০.৫ ওভারে মাত্র ১৩ রানে পতন ঘটে শেষ চার উইকেটের। ছয় উইকেটে ২৩২ রান থেকে ২৪৫ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। কেমার রোচ চার উইকেটর তিনটিই নেন তিনি। যেখানে ছিল প্রতিরোধের ডাক দেয়া দুই ব্যাটসনম্যান সাকিব ও নুরুল হাসানের উইকেটও। বাংলাদেশ এগিয়ে থাকে মাত্র ৮৩ রানে। আর যাই হোক এই লিড নিয়ে বাংলাদেশ জয়ের আশা করতে পারে না। খুব বেশি হলে কয়েকটি উইকেট নিয়ে লড়াই করতে পারবে। দিনের খেলা বাকি আছে ১৭ ওভার। উইন্ডিজ জয়ের কাছাকাছি চলে গেলে দিনের খেলা আধ ঘন্টা বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
নতুন বলে বাংলাদেশের ভোগান্তি আরেকবার মোটা দাগে বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে নতুন বলের চাকচিক্য কমে আসার আগেই বাংলাদেশ ছয় উইকেট হারিয়েছিল ৪৫ রানে। দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট করতে নেমে ৩৫ রানে হারিয়েছিল দুই উইকেট। আজ দ্বিতীয় ইনিংসেও নতুন বলে ভুগান্তি ফুটে উঠে। কেমার রোচ ৫৩ রান দিয়ে দশমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন। একই সঙ্গে তিনি ২৪৯ উইকেট নিয়ে স্বদেশি গ্রেট মাইকেল হোল্ডিংয়ের সমক্ষকতা অর্জন করেন। আবার একই ভেন্যুতে তিনি ৫০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন। রোচ ছাড়া আলজারি জোসেফ ৫৫ রানে তিনটি ও কাইল মায়ার্স ৩০ রানে নেন দুইটি উইকেট।
সাকিব আল হাসান (৬৩):
১০০ রানে পঞ্চম উইকেট হিসেবে লিটন আউট হয়ে যাওয়ার পর সাকিব এসে হাল ধরেন। কিন্তু আসার পরপরই সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয় ফিরে গেলে বাংলাদেশ অকুল দরিয়ায় ভাসতে থাকে। এমন অবস্থায় নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে সাকিব প্রতিরোধের ডাক দেন। নুরুল হাসান সোহান যোগ্য সাহচর্য দিতে থাকলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে খেলায় ফেরার চেষ্টা করে। ৪৭ রানের ব্যবধান কমিয়ে লিডও নেয়। দুই জনে মিলে চা বিরতি পার করে দেন। সাকিব চা বিরতির আগেই ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৮২ বলে। জুটিতে শতরানও অতিক্রম করে। কিন্তু চা বিরতির চার ওভার পর উইন্ডিজের কাপ্তান ব্রেথওয়েট নতুন বলে নেয়ার পরপরই বাংলাদেশের সর্বনাশ ডেকে আসে। কেমার রোচ তার নতুন বলের দ্বিতীয় ওভারেই সাকিবকে ফিরিয়ে দেন। তবে এখানে সাকিবেরও কিছুটা দায় ছিল। ফুল লেন্থের বলে এক্সটা বাউন্স ছিল। সাকিব জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে এক্সটা কাভারে অধিনায়ক ব্রেথওয়েটের হাতে ধরা পড়েন। ৯৯ বল খেলে ছয় চারে তিনি ৬৩ রান করেন। প্রথম ইনিংসে তিনি করেছিলেন ৫১ রান। উভয় ইনিংসে পঞ্চশ বা ততোর্ধ রানের ইনিংস এটি ছিল সাকিবের চতুর্থবার। সপ্তম উইকেট জুটিতে যোগ হয় ১২৩ রান।
নুরুল হাসান সোহান (৬৪):
সাকিব বিদায় হওয়ার পর নুরুল হাসান সোহানও বেশি সময় টিকতে পারেননি। তাকেও সাজ ঘর দেখিয়ে দেন কেমার রোচ। উইকেটর পেছনে তার ক্যাচ ধরেন ডি সিলভা। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে সঠিকভাবে সংযোগ করতে ব্যর্থ হন নুরুল হাসান সোহান। ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে চলে যায়। তখন তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ৬৪ রান। এটি ছিল বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান। এর আগে তিনি ১১০ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন।
মোস্তাফিজ (৭):
মোস্তাফিজ এসে টিকে থাকার কোনো চেষ্টাই করেননি। দুর্ধষ কেমার রোচের প্রথম বল খেলেই ছক্কা হাকান থার্ড ম্যান দিয়ে। তবে তাকে রোচ আউট করতে পারেননি। জোসেফের বলে বোল্ড হয়ে যান ৭ রানে।
এবাদত (১):
এবাদত এসে টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। সাকিব আউট হওয়ার পর ক্রিজে এসে প্রথম ১১ বলে কোনো রানই নিতে পারেননি। ১২ নম্বার বলে প্রথম রান নেন। পরে আরও ১২ বল খেললেও কোনো রান নিতে পারেননি। কেমার রোচের বলে বোল্ড হয়ে যান।
এমপি/এএস