ভুলের খেসারত দিল বাংলাদেশর বড় হারে
তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল ২-১ গোলে হারলেও যে উজ্জবিত খেলা উপহার দিয়ে সবার মন জয় করেছিল, সেই খেলা কিন্তু আর ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিক মালয়েশিয়ার বিপক্ষে। যে কারণে এশিয়ান কাপ বাছাই ফুটবলে টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দলের কাছে হারের ব্যবধানও বেশ বড় ৪-১।
প্রথমারর্ধে বাংলাদেশ ২-১ গোলে পিছিয়ে ছিল। এক পর্যায়ে খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। এই জয়ে ‘ই’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে সেরা পাঁচ রানার্সআপের এক দল হয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে। আর বাংলাদেশ ফিরছে রিক্ত হস্তে। প্রাপ্ত শুধু দুইটি গোল।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের দর্শক পরিপূর্ণ বুকেত জলিল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের হজম করা চারটি গোলের তিনটিই ছিল রক্ষণভাগের ব্যর্থতায়। বাফুফের প্রেরিস সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দর্শক উপস্তিতি ছিল প্রায় ৫৩ হাজার, যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি সমর্থক ছিলেন ছয় থেকে সাত হাজারের মতো।
বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে খেলা সেরা একাদশ নিয়েই বাংলাদেশ খেলতে নামে। র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৩৪ ধাপ এগিয়ে মালয়েশিয়া। মুখোমুখি মোলাকাতেও মালয়েশিয়া এগিয়ে ছিল। ৯ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় একটিতে, হার ছিল ছয়টিতে। বাকি দুইটি ছিল ড্র। আজকের ম্যাচে প্রথম দুই ম্যাচের বাংলাদেশকে খোঁজেই পাওয়া যায়নি। মনে হয়েছে সেই আগের বাংলাদেশ। রক্ষণ টালমাটাল। আক্রমণে ভাগ ছন্নছাড়া। পাসিং ফুটবল অনুপস্থিত। যে কারণে খেলা শুরুর পর থেকেই স্বাগতিক মালয়েশিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে থাকে। এ সময় আনিসুর রহমান জিকো একটি নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন। কিন্তু ১৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সাফাই রশিদের গোলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। আতিকুর রহমান ফাহাদ বক্সের ভেতর বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে মালয়েশিয়ার হালিমকে ফাউল করলে রেফারি পেনাল্টি নির্দেশ দেন। সাফাই রশিদের নেওয়া সেই শটে জিকো বলের কাছকাছি চলে গিয়েছিলেন ড্রাইভ দিয়ে। বল তার হাতেও লাগে। কিন্তু বলে গতি বেশি থাকায় তিনি আর ঠেকাতে পারেননি।
২৬ মিনিটে বাংলাদেশ গোল পরিশোধ করতে পারত। জামাল ভুইয়ার কাছ থেকে বল পেয়ে সাজ্জাদ হোসেন বক্সের ভেতন থেকে শট নিতে ব্যর্থ হন। স্বাগতিক দলের একজন খেলোয়াড় সেই বল ক্লিয়ার করলেও বক্সের বাইরে পেয়ে যান রাকিব। কিন্তু চলন্ত বলে তার শট বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। ৩২ মিনিটে গোল পরিশোধ করে বাংলাদেশ। বিশ্বনাথ ঘোষের লম্বা থ্রো থেকে বক্সের ভেতর রাকিবের হেডের পর গোলপোষ্টের সামনে মালয়েশিয়ার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় থাকার পরও ইব্রাহিম চোখের পলকে হেড করে জালে জড়িয়ে দেন। তিনি নিজেও ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে পড়ে যান। এ সময় কিছুটা আহতও হন তিনি। এই একই রকম গোল বাংলাদেশ করেছিল তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষেও।
৩৭ মিনিটে রক্ষণের ব্যর্থতায় ও চলতি আসরে দারুণ খেলা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর ভুলে গোল হজম করে। বক্সের বাইরে থেকে মালয়েশিয়ার একজন খেলোয়াড়ের বাম পায়ের ভলি শট বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে বক্সে উঠে যায়। সেখান থেকে মালয়েশিয়ার একজন খেলোয়াড় হেড দিয়ে বক্সের আরো ভেতরে ঠেলে দেন। সেই বল বাংলাদেশের রক্ষণের খেলোয়াড়দের ফাঁকি দিয়ে বাম প্রান্ত চলে যায় ডিয়ন কোলসের কাছে। তিনি বাম পায়ে সাইড বার লক্ষ করে যে শট নেন, সেই শট জিকো বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল তার হাতের নিচ দিয়ে গিয়ে জালে প্রবেশ করে। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে মালয়েশিয়ার শরিফের হেড গোল লাইন থেকে জিকো অসম্ভব তৎপরতায় নিশ্চিত একটি গোল রক্ষা করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতেই বাংলাদেশ আরেকটি গোল হজম করে। এই গোলটিও ছিল দ্বিতীয় গোল হজম করার মতো রক্ষণের ভুলে। কর্ণার শট সরাসরি না নিয়ে আড়াআড়ি পাস থেকে দুই জন খেলোয়াড়ের পা ছুঁয়ে বাংলাদেশের রক্ষণে যখন বলটি ভেসে আসে, তখন সেখানে মালয়েশিয়ার তিনজন খেলোয়াড়ের বিপরীতে বাংলাদেশের ছিলেন মাত্র একজন খেলোয়াড়। যে কারণে শফিক আহমেদ বিনা বাঁধায় হেড করে দলের তৃতীয় গোল করেন। তৃতীয় গোল হজমের পর বাংলাদেশ একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে। ফহিম গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। ডান প্রান্ত দিয়ে সাজ্জাদ থেকে বিপুলের ক্রস থেকে ফাহিম এই সুযোগটি পেয়েছিলেন। ৭২ মিনিটে বাংলাদেশের চতুর্থ গোল হজমও ছিল রক্ষণের ব্যর্থতায়। ডান প্রান্ত দিয়ে তিন জনের পা ছুঁয়ে বাংলাদেশের বক্সে ক্রস আসে। সেখানে বাংলাদেশের তিনজন খেলোয়াড় ছিলেন। মালয়েশিয়ার ছিলেন বদলি খেলোয়াড় ডারেন লক। গোলরক্ষক জিকো ক্রস ঠেকাতে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বল তিনি গ্রিপে নিতে পারেননি। হাত থেকে বের হয়ে গেলে সামনে থাকা ডারেন সহজেই গোল করেন। এই গোলে মালয়েশিয়ার এশিয়ান কাপ খেলা নিশ্চিত করে। ৭৮ মিনিটে পোষ্টে লেগে বল ফিরে আসলে বাংলাদেশ পঞ্চম গোল হজম করা থেকে বেঁচে যায়।
এমপি/এমএমএ/