ফিরেই প্রথম বলে মোস্তাফিজের উইকেট
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের অরুচি নতুন কিছু নয়। ‘বিপদমুক্ত দূরত্ব বজায় রাখুন’র মতো করেই মোস্তাফিজও যেন এখান থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে চান। যে কারণে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর আর সাদা পোশাকের ক্রিকেটই খেলেননি। কিন্তু পেস বোলারদের ইনজুরির কারণে অনেকটা নিজের মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই মোস্তাাফিজ উইন্ডিজ সফরে টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন। ১৬ জুন অ্যান্টিগাতে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। তার আগে গা গরমের তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের মাধ্যমে আবার প্রত্যাবর্তন করেন মোস্তাফিজ। আর ফিরেই প্রথম বলে তুলে নেন উইকেট। সেই ওভারেই আরও এক উইকেট। পরে নেন আরও এক উইকেট। তিনি ৬ ওভার বোলিং করে ৩৪ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। এভাবেই নিজের প্রত্যাবর্তনকে সাদা পোশাকে রঙিন করে তুলেন কাটার মাস্টার।
মোস্তাফিজ যখন প্রথম বলে উইকেট, আর প্রথম ওভারে দুই উইকেট নেন, মাঠের বাইরে বসে তখন সে খেলা দেখছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে আবার নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া সাকিব। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে কালই তিনি দলের সঙ্গে যোগ দেন। যে কারণে তার আর প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হয়নি। কিন্তু নিজে না খেললে কী হবে। মাঠের বাইরে বসে কার্টার মাস্টারের এমন যাদুকরি প্রত্যাবর্তন অধিনায়ক হিসেবে সাকিবকে উচ্ছ্বাসিত করে তুলে।
মোস্তাফিজের মতো সাকিবেরও নেতৃত্বে প্রত্যাবর্তন হতে যাচ্ছে এ সিরিজ দিয়ে। তিনি নেতৃত্ব হারিয়েছিলেন ২০১৯ সালে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন রাখার কারণে। নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তনে মোস্তাফিজের মতো এমন একজন যোদ্ধাকে যেকোনো নেতারই কাম্য। আর তা যদি চোখের সামনে এমন নৈপুণ্যের ঝলক দেখেন, তখন তো নেতা হিসেবে গর্বে বুকটা ভরে উঠবেই। তাইতো মাঠের বাইরে বসে মোস্তাফিজের এমন নৈপুণ্য দেখার পর সাকিব চিৎকার করে বলছিলেন, মোস্তাফিজ দুই টেস্টই খেলবে। আর তার জবাবে মোস্তাফিজ পিচ দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে ক্ষমা চাইছিলেন। মনোভাব ছিল এমন না না আমাকে দিয়ে দুই টেস্ট খেলানোর কথা চিন্তা করো না।
২০২১ সালে ঘরের মাঠে উইন্ডিজের বিপক্ষেই মোস্তাফিজ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন। এরপর সাদা পোশাকে তিনি আর বলই হাতে তুলে নেননি। এমনকি ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচেও তিনি বোলিং করেননি। এবার যখন তাকে উইন্ডিজ সফরে টেস্ট দলে ডাকা হয়, তারপরও তিনি যে কয়দিন দেশে ছিলেন একটিবারও লাল বলে অনুশীলন করেননি। উইন্ডিজ সফরে গিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো পেস বোলিং কোচ অ্যালান্ড ডোনাল্ডের কাছে তালিম নেন। এদিকে আবার উইন্ডিজ প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দুই দিন তিনি মাঠেই ছিলেন না। তৃতীয় দিন তিনি প্রথম মাঠে নামেন। আর নেমেই প্রথম বলে উইকেট তুলে নেন। তার প্রথম শিকার ছিলেন সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা সোলোজানো। ৯২ রানে তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। এক বল পর আউট করেন লুইসকে কোনো রান না করতে দিয়েই। এরপর তিনি নিজের পঞ্চম ওভারে আউট করেন আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান কারিয়াকে। ৫৬ রানে তার ক্যাচ ধরেন মাহমুদুল হাসান জয়।
প্রত্যাবর্তনে মোস্তাফিজের এমন চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যে ম্যাচে তিন উইকেট পাওয়া আরেক পেসার এবাদত হোসেন দারুণ খুশি হয়েছেন। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন,‘ বোলিংয়ের দিক থেকে আমরা সবাই ভালো বোলিং করেছি। ভালো শুরু হয়েছে। মোস্তাফিজ আজকে যোগ দিয়েছে। প্রথম ওভারে দুই উইকেট। শেষ পযন্ত তিন উইকেট পেয়েছে। প্রস্তুতি হিসেবে এ তিন দিনের ম্যাচটা আমরা খুব উপভোগ করেছি।’
এমপি/এসএন