অনুশীলন ছাড়াই সাকিবের পাঁচ উইকেট!
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড সাকিব পাঁচ উইকেট পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। সাকিব তার সে মনোবাঞ্চনা পুর্ণ করেছেন। ড্রেসিং রুমে বসে ডোনাল্ড নিশ্চয় পুলকিত হয়েছেন। সাকিবের পিট চাপড়ে দিয়েছেন।
সাকিব নিজেও খুশি। ক্যারিয়ারের ১৯তম বার পেলেও সর্বশেষ পেয়েছিলেন চার বছর আগে। লম্বা বিরতির কারণ তার নিয়মিত টেস্ট না খেলা। কিন্তু পাঁচ উইকেট পাওয়ার আনন্দ দিন শেষে অম্লমধুর হয়ে গেছে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায়। তিনি বলেন, ‘পাঁচ উইকেট পেলে সবারই ভাল লাগবে।’
সাকিবক এই সিরিজ খেলছেন করোান থেকে মুক্ত হয়েই। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগের তিনি আধঘন্টার মতো শুধু ব্যাটিং অনুশীলন করেছিলেন। কোনো বোলিং অনুশীলন করেননি। তারপরও তার বোলিং ছিল প্রশংসনীয়। দুই ইনিংস মিলে উইকেট পেয়েছিলেন চারটি। এবার পাঁচটি। ম্যাচও খেলতে নেমেছেন দীর্ঘ বিরতির পর। আবার ম্যাচে বোলিংয়ে অনেক পরিবর্তনও এনেছেন। এ সব তিনি কখন অনুশীলন করেছেন? না কি ম্যাচেই পরিস্থিতি অনুযায়ী করেছেন? এ রকম প্রশ্ন বেশ কয়েকটি ছুটে গিয়েছিল তার দিকে। জবাবে সাকিব বলেন, ‘টেস্ট ম্যাচ খেলতে থাকলে বোলিংয়ের অনেক জিনিস নিয়ে অনুশীলটা করা যায় ম্যাচের ভেতরেই। যেগুলো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে হেল্প করবে। নরমালি ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টি খেলতে থাকলে বোলিংয়ের শেইপ, অ্যাকশন সব বদল হতে থাকে। যখনই টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়, একটা-দুইটা টেস্ট ম্যাচ খেলা হলে ওই জিনিসগুলা আবার ছন্দটা ফিরে আসে। যেটা আমার জন্য ভাল, ওটা আমাকে হেল্প করে টি-টোয়েন্টি ও ওডিআইতে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে দুইটা ইনিংস, আর এখানে এই ইনিংস মিলিয়ে ১০০ ওভারের উপরেই মনে হয় করে ফেলছি (বোলিং)। স্বাভাবিকভাবে এত ওভার যখন বল করা হয় এত কিছু এক্সপেরিমেন্ট, চিন্তা ভাবনা থাকে। বল করতে করতে অ্যাকশন চেঞ্জ হয়ে যাওয়া অনেক কিছুর একটা সুযোগ ছিল। যেটা বললাম অনেকক্ষণ বল করার পর সব বোলারেরই ছন্দটা ভাল হতে থাকে। যদি ওরকম চাপের পরিস্থিতি না থাকে। নরমালি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অনেক বেশি চাপ থাকে। স্পেশালি স্পিনারদের। টেস্ট ম্যাচে সুযোগ থাকে নিজের রিদমকে ভাল অবস্থানে নিয়ে আসার। সেই জায়গা থেকে প্রথম টেস্ট থেকে দ্বিতীয় টেস্ট হেল্প হয়েছে।’
তবে এ সব তিনি আগে থেকে কোনো রকম পরিকল্পনা করে করেন না বলেও জানান। সাকিব বলেন, ‘ওরকম (পরিকল্পনা) কোনো চিন্তা থাকে না। টেস্ট ম্যাচে আমার ধারণা কোনো বোলারই অতো বেশি পরিকল্পনা করে না। বোলারদের কাজই থাকে ভাল জায়গায় বল করা। তারপর উইকেট থেকে যদি কোন সাহায্য পাওয়া যায় সেটা বাড়তি সুবিধা।’
নিজের বোলিং নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে সাকিব দলে আরেকজন বোলের অভাবের কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ সন্তুষ্ট। হয়তো আরেকজন বোলার যদি এই টেস্টে বেটার বল করতো বা প্রপার বোলার থাকত হতো আরেকটু বেটার হতো।’
হাত বেশ উপরে তুলে বোলিং করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওয়ানডেতে একটু জোরে বল করার ইয়ে থাকে, ব্যাটসম্যান যাতে সময় না পায় লক্ষ্য থাকে। টেস্টে স্বাভাবিকভাবে বল ঘোরানোর চেষ্টা বেশি থাকে। সে কারণে হাতটা অনেক উপর থেকে আসে।’
কোনো রকম অনুশীলন ছাড়া এ রকম ভালো বোলিং করা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে সাকিব বলেন, ‘কোচ বলছে না? জানি না এটা বলা মুশকিল। বোলিং একটা জিনিস যেটাতে আমার আত্মবিশ্বাসের লেভেল অনেক ভাল থাকে সব সময়। জীবনে দুএকবার হয়ত হয়েছে আমি বোলিং নিয়ে অতবেশি আত্মবিশ্বাসি ছিলাম না। এরকম খুব কমই হয়েছে যে বোলিং নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করেছে। প্রিমিয়ার লিগে চারটা ম্যাচ যখন খেলেছি ওটাই আমার জন্য এনাফ ছিল। এতদিন একটা খেলার পর ওর ১৫ দিনের ক্যাম্প কিংবা ১০ দিনের কন্ডিশনিং করে আসলে খেলার সময় কোনো কাজে আসে না। এরকম টাইমে একটা প্লেয়ারের তিনটা থেকে পাঁচটা সেশনই পর্যাপ্ত। এই টেস্টের আগে সময় খুবই কম ছিল। নরমালি আমি খেলার ভেতর থাকলে আমার জন্য তিন সেশন এনাফ। খেলার ভেতর যদি না থাকি পাঁচ থেকে ছয়ে সেশন। মেক্সিমাম। এর থেকে বেশি লাগে না যদি ফিটনেস থাকে আসলে। এতদিন খেলার পর ট্রেনিং করা গুরুত্বপূর্ণ না। আমি কতটুকু প্রপার্লিকাজ করছি সেটা ইম্পর্টেন্ট।’
এমপি/এমএমএ/