শ্রীলঙ্কার পাল্টা জবাব
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাংলাদেশ ৩৬৫ রান করলেও শ্রীলঙ্কা স্বাচ্ছন্দ্যে তার জবাবে তারা করেছে দুই উইকেটে ১৪৩ রান। শেষ সেশনে তারা সংগ্রহ করে ২৪ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ৫৯ রান। বাংলাদেশের চেয়ে তারা এখনো ২২২ রান পিছিয়ে। হাতে আছে আট উইকেট।
শ্রীলঙ্কার ইনিংস এমন হৃষ্টপুষ্ট হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের ফিল্ডারদেরও বেশ অবদান আছে! অধিনায়ক দিমুথ করোনারত্নে একাধিকবার জীবন পেয়ে ৭০ রানে অপরাজিত আছেন। ওশাদা ফার্নান্ডোও একাধিকবার জীবন পেয়ে ৫৭ রানে আউট হন। করোনরত্নের সঙ্গে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে খেলতে নামা কাসুন রাজিথা শূন্য রানে অপরাজিত।
ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম আধঘণ্টাই ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। এরপর ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে আসতে থাকে। কমতে থাকে বোলারদের প্রাধান্য। প্রথম সাত ওভারের মাঝেই যেখানে উইকেট পড়েছিল পাঁচটি, সেখানে পরের ১৫৭ ওভারে উইকেট পড়েছে মাত্র সাতটি। রান সংগ্রহ হয়েছে ৪৮৪। এই সময়ে বাংলাদেশের ইনিংসে মুশফিক (অপরাজিত ১৭৫) ও লিটন (১৪১) সেঞ্চুরি করার পর শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ১৪৩ রানের মাঝে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন দুই জন। ওশাদা ফার্নান্ডো ৫৭ রান করে আউট হলেও দিমুথ করোনারত্নে ৭০ রানে অপরাজিত। বাংলাদেশের ইনিংসে লঙ্কান দুই পেসার কাসুন রাজিথা (৫/৬৪) ও আশিতা ফার্নান্ডো (৪/৯৩) ৯ উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। একটি ছিল রান আউট। লঙ্কানদের ইনিংসের দুই উইকেটের একটি করে পেয়েছেন পেসার খালেদ ও স্পিনার সাকিব।
সময় গড়ানোর সঙ্গে পিচ যে স্পিনারদের হয়ে কথা বলবে, তা এখনো হয়ে ওঠেনি। মিরপুরের পিচের চরিত্র নিয়ে যে পূর্বাভাস ছিল তা অন্তত প্রথম দুই দিন কোনো মিল ছিল না। হয়তো তৃতীয় দিন থেকে ধীরে ধীরে পূর্বাভাসের বাস্তবতা দেখা যেতে পারে। শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি হয়ে দিন শেষে কথা বলতে আসা ইনিংসে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পাওয়া পেসার কাসুন রাজিথা সে রকমটিই ইঙ্গিত করেছেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধ হয়ে আসা সেঞ্চুরিয়ান লিটনও (১৪১) আজকের দিনের উপর নির্ভর করছেন। তিনি চান আজ সকাল সকালই প্রতিপক্ষের দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচকে নিজেদের গ্রিপে নিয়ে নিতে। প্রথম ইনিংসে লিড নিতে চান।
শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নামার পর না পেসার, না স্পিনার বাংলাদেশের কোনো ডিপার্টমেন্টই ত্রাস সৃষ্টি করতে পারেনি। খালেদের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে ওশাদা ফার্নান্ডোকে আম্পায়ার কট বিহাইন্ডের আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে তিনি বেঁচে যান। পরে সাকিবের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে রাজকয়ি ঢংয়ে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি পূর্ণ করেন ওশাদা। যদিও ৪৩ রানে এই সাকিবের বলেই তার হাতে একবার কঠিন ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলন তিনি। আরেকবার আম্পায়ার্স কলের কারণে। পরে আউট হন এবাদতের বলে প্রথম স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ৫৭ রানে। তবে ওশাদা ফেরার আগেই ফিরতে পারতেন দিনশেষে ৭০ রানে অপরাজিত থাকা অধিনায়ক দিমুথ করোনারত্নে। রিপ্লেতে দেখা গেছে ব্যক্তিগত ৩৬ রানে এবাদতের বলে পরিষ্কার এলবিডব্লিউর ছিলেন করোনারত্নে। বাংলাদেশের ফিল্ডাররা আবেদন করলেও আম্পায়ার সাড়া দেননি। কিন্তু স্ট্যাম্প মিস হবে মনে করে আবার রিভিউও নেননি। কারণ ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশ একটি রিভিউ নষ্ট করে ফেলে। আবার বাংলাদেশের রিভিউ নেয়ার সিন্ধান্তও ইদানিং সঠিক হচ্ছিল না। অনেক কিছু ভেবে পরে আর রিভিউ নেয়া হয়নি। এখানে এভাবে করোনারত্নে বেঁচে যাওয়ার পর আরও দুইবার বাঁচেন। ৩৭ রানে তাইজুলের বলে শর্ট লেগে মাহমুদুল হাসান জয় তালুবন্দি করতে পারেননি। এরপর ৬৯ রানে আবারও তাইজুলের বলে মিডউইকেটে ক্যাচ ধরতে পারেননি মুমিনুল। তাই তিনি দিনশেষে ৭০ রানে অপরাজিত। এর আগে ৮৪ বলে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি।
দিমুথ করোনারত্নে ওপেনার ওশাদা ফার্নান্ডোকে নিয়ে ৯৫ রানের জুটি এনে দেওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে কুশাল মেন্ডিসকে নিয়ে ৪৬ রান যোগ করেন। এই দুই জনে যেভাবে খেলছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল তারাই দিনের বাকি সময় পার করে দেবেন। কিন্তু তার হতে দেননি সাকিব। দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়েই তিনি কুশাল মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ফিল্ডিং করার সময় বুকের ব্যথা নিয়ে প্রথম দিন মাঠ ছাড়া কুশাল মেন্ডিস ৪৯ বলে খেলে করেন ১১ রান।
দুই পেসার খালেদ ও এবাদত ৪৬ ওভারের মাঝে করেন ৯ ওভার করে। বাকি ২৮ ওভারের মাঝে সবচেয়ে বেশি ১৭ ওভার করেন তাইজুল। সাকিব করেন ৯ ওভার। ২ ওভার করেন মোসাদ্দেক।
এমপি/এমএমএ/এএজেড