বছরের শুরুটা ফিরিয়ে আনার লড়াই বাংলাদেশের
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বছরটা বাংলাদেশের শুরু হয়েছিল দারুনভাবে। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে অধার হয়ে থাকা জয় এসে ধরা দিয়েছিল সাদা পোশাকের মাধ্যমে। এই জয়ে কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এই শেষ। পরের টেস্টেই আবার বাংলাদেশ ফিরে গিয়েছিল চিরচেনা রূপে। যেখানে হারই নিত্য সঙ্গি। হেরেছিল ইনিংস ও ১২৭ রানের ব্যবধানে। এরপর ব্যর্থতা পিছু ছাড়েনি। সঙ্গে যোগ হয়েছিল ইনজুরির মিছিলও। এক দুই জন নয়, চার চারজন। সবাই আবার বোলার। দুইজন স্পিনার, দুইজন পেসার। এ রকম ঘাটতি নিয়েই বাংলাদেশ দল আগামীকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামবে। এ রকম ঘাটতি থাকার পরও বাংলাদেশ জেতার আশা করছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের অতীত রকের্ড মলীন। ধুসর। ১৭ টেস্ট খেলে জয় পেতে অনুবীক্ষন যন্ত্র খুঁজতে হয়। ২০১৭ সালে কলম্বোর পি সারা ওভালে জয় পেয়েছিল চার উইকেটে। ১৭ টেস্টে জয় এই একটি হলেও এই এক জয়ের কিন্তু বেশ মাহাত্ব্য আছে। কারণ ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে শততম। এরপর বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোন টেস্ট জিততে না পারলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠে। পরে খেলা পাঁচ টেস্টের দুইটিতে হারলেও ড্র করেছে তিনটিতে। সর্বশেষ চট্টগ্রামে। এই ড্রতে ছিল আগাগোড়া বাংলাদেশের দাপট। এক পর্যায়ে জেতার সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিল। হয়তো সেখান থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাসই মুমিনুলকে মিরপুর টেস্টে জেতার ব্যাপারে সাহসী করে তুলেছে। যেখানে সেরা একাদেশের দুই মূল বোলার ছিটকে যাওয়ার পরও তিনি ‘ক্রাইসিস’ বলে মনে করছেন না। এ রকম সমস্যা থাকবেই জানিয়ে মুমিনুল এগিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর। পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জয়ও তুলে নিতে চান।
চট্টগ্রাম টেস্টের পিচ ব্যাটিং সহায়াক হলেও দুই দলই সেভাবে রান সংগ্রহ করতে পারেনি। এক ঘণ্টার কম প্রায় পুরো পাঁচদিনই খেলা হয়েছে। সেখানে মোট রান উঠেছে ১১২২। উইকেট পড়েছে ২৬টি। ৪৫০ ওভারের মাঝে খেলা হয়েছে ৪১৩ দশমিক ২ ওভার। ওভার প্রতি রান ২ দশমিক৭১। ব্যাটিং বান্ধব পিচে ওভার প্রতি এই রকম সংগ্রহ অবাক করার মতোই। আবার শ্রীলঙ্কার ইনিংসে বাংলাদেশের স্পিনাররা সাফল্য পেয়েছেন। ১৬ উইকেটের ১৫টিই নিয়েছেন তিন স্পিনার নাঈম-সাকিব-তাইজুল। একটি ছিল রান আউট। বাংলাদেশের ইনিংসে ১০ উইকেটের সাতটিই গিয়েছে লঙ্কান পেসারদের পেটে। স্পিনাররা পেয়েছেন মাত্র দুইটি। পিচের চরিত্র ছিল এমনই ত্রিমুখি। কিন্তু মিরপুরের উইকেট স্পোর্টিং হয়ে থাকে। কারণ এখানে খেলা ২৩ টেস্টের ১৯টিতেই ফলাফল এসেছে। যেখানে বাংলাদেশের জয় ছয়টিতে, হার ১৩টিতে।
মিরপুরের শেষ ১০ টেস্টের আটটিতেই ফলাফল এসেছে। এই আট জয়ে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা বেশ ভারি। জিতেছিল পাঁচটিতে। হার ছিল তিনটিতে। একটি হয়েছিল ড্র। অপরটি পরিত্যক্ত। হয়তো সে কারণেই মুমিনুল এই টেস্টে ফালফল দেখছেন আর দেখছেন নিজেদের জয়।
ইনজুরিতে দলের মূল বোলারাদের হারানোর পরও জয় পেতে মুমিনুল বিদ্যমান শক্তির উপরই ভরসা রাখছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে খেলা আগের টেস্টের দুই পেসার সিলেটের এবাদত ও খালেদের উপরই ভরসা থাকছে পেস আক্রমণের। পাকিস্তানের এক ইনিংস বোলিং করার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের পতন হওয়া চার উইকেটের একটি করে পেয়েছিলেন এই দুই পেসার। পেস আক্রমণে ঘাটতির মতো স্পিনেও আছে একই রকম সমস্যা। মেহেদি হাসার মিরাজতো আগে থেকেই নেই। তার পরিবর্তে চট্টগ্রাম টেস্টে সুযোগ পেয়েই ছয় উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করা আরেক অফ স্পিনার নাঈম হাসানও নেই। অফ স্পিনারের ঘাটতি এতোটাই প্রকট যে নাঈমের পরিবর্তে স্পিনাররা কোনো বিকল্পই নেননি। তা’হলে কী বাংলাদেশ চার বোলার নিয়ে খেলবে? ফলাফল আনতে পাঁচ বোলার নিয়েই খেলবে বাংলাদেশ। দুই পেসার আর তিন স্পিনার। তাইজুল ও সাকিবের সঙ্গে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে খেলানো হবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতেকে। সৈকত অলরাউন্ডার হলেও তার মূল পরিচয় ব্যাটিং। বোলিং তিনি খুব একটা সফলও নন। তারপরও তার উপরই মুমিনুল ভরসা রাখতে যাচ্ছেন। এ জন্য ছকও করে ফেলেছেন। তার ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা মুমিনুলের। এক সাংবাদিকের মোসাদ্দেকের খেলার বিষয়ে জানতে চাইলে মুমিনুল পাল্ট প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তার খেলার ব্যাপারে বলেন, ‘আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন মোসাদ্দেকই খেলবে? এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। হয়ত ওর খেলার সম্ভাবনাই বেশি। স্পিন বিভাগ দেখুন-তাইজুল গত এক-দুই বছর ধরে খুব ভালো বল করছে। সাকিব ভাই তো গত ম্যাচে খুব ভালো করেছেন। মোসাদ্দেক খেললে ওর ভূমিকা হয়ত একটু ভিন্ন হবে। মাঝেমধ্যে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। এভাবেই এই পরিস্থিতি থেকে কাটিয়ে উঠতে হবে। মোসাদ্দেক যদি খেলে ওকে ভালোভাবে, বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টানা ১০ দিন খেলার মানসিকতা নেই-বিদেশি কোচিং স্টাফদের সঙ্গে বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বৈঠকের পর তাদের বরাত দিয়ে বিসিবির সভাপতি জানিয়েছিলেন এই কথা। কিন্তু মুমিনুল এই কথার দ্বিমত করে জানান তার কাছে মনে হয় না ১০ দিন খেলা কঠিন। তিনি বলেন, ‘ আমার তো মনে হয় না এরকম কোনো কিছু হয়। এভাবে চিন্তা করলে কঠিন। আমার কাছে মনে হয় আগামী ৫ দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ৫ দিনে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটা দিন মাঠে কেমন এটিচ্যুড থাকে, কীভাবে পজিটিভ থাকি এটা গুরুত্বপূর্ণ। ১০ দিন খেলা কঠিন আমার মনে হয় না।’
এমপি