তামিম-মাহমুদুলে ছুটছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি মানেই ধপাস। ইনিংস শুরু হতে না হতেই সাজঘরে একজন, কখনো কখনো দুইজনই। এভাবেই কেটেছে গত পাঁচ বছরে ৬১ ইনিংস। যেখানে একটিও ছিল না শতরানের জুটি। ১৫ জুটি চেষ্টা করেও পারেননি। ২১ বারই সাজঘরে ফিরে যাওয়া হয়েছে দুই অংকের ঘর স্পর্শ করার আগেই। এমনই করুণ অবস্থা ছিল উদ্বোধনী জুটিতে।
সেখানে সেই উদ্বোধনী জুটিই স্বপ্নের মতো সময় পার করছে। আগের দিন শেষ সেশনে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে এসে তামিম-মাহমুদুল জুটি ভালোভাবেই দিনটি পার করে দেওয়ার পর আজ তৃতীয় দিন প্রথম সেশসনটাও তারা নির্বিঘ্নে পার করে দিয়েছেন। আর এর ফলে ভান্ডার হয়েছে বেশ হৃষ্টপুষ্ট। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৫৭ রান। বিনা উইকেটে ৭৩ রান নিয়ে খেলতে নেমে আজ তারা যোগ করেছেন ৮৪ রান। সেঞ্চুরি ঘ্রান পেতে থাকা তামিম ইকবাল ৮৯ ও মাহমুদুল হাসান জয় ৫৮ রান নিয়ে আবার ব্যাট করতে নামবেন। তামিম ইকবাল ইতোমধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে গেছেন। তিনি পেছনে ফেলে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমকে। তামিম খেলতে নেমেছিলেন ৪৮৪৮ রান নিয়ে। তার থেকে ৮৪ রান বেশি ছিল মুশফিকুর রহিমের। তার রান ছিল ৪৯৩২। বর্তমানে তামিমের রান ৪৯৩৭।অবশ্য মুশফিকুর রহিম খেলছেন এই টেস্টে। কে জানে তামিমকে টপকে মুশফিক আবার উপরে উঠে যেতে পারেন?
চট্টগ্রামের পিচ ব্যাটিং বান্ধব। যে কারণে সফরকারী লঙ্কানরা টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিল। টস জিতলে বাংলাদেশও তাই করত। লঙ্কানরা ব্যাটিং বেছে নিলেও বাংলাদেশের বোলারদের ক্ষুরধার বোলিংয়ের কারণে তারা খুব বেশি দূর যেতে পারেনি। একমাত্র ম্যাথিউসের ১৯৯ রানের ইনিংসের সহায়তায় তারা ৩৯৭ রান জমা করেছিল। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি পিচ ব্যাটিং বান্ধব। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সেই দৃশ্য স্পষ্ট প্রতীয়মান। মাহমুদুল টেস্ট মেজাজে খেললেও তামিম ইকবালের ব্যাটে ছিল আগ্রাসন।
শ্রীলঙ্কার রান যেখানে ছিল ওভার প্রতি ২.৫৯ করে, সেখানে বাংলাদেশ আগের দিনই সংগ্রহ করেছিল ওভার প্রতি চারের উপরে। আজও সেই ধারা বজায় ছিল প্রথম ঘণ্টায়। পরের ঘণ্টায় গিয়ে তা চারের নিচে নেমে আসে। ধীরে ধীরে তা নিচে নামার দিকেই আছে। অবশ্য এ সময় লঙ্কান বোলাররা ভালো বোলিংও করছিলেন।
রান সংগ্রহের গতি কিছুটা কমে আসলেও দুই ব্যাটসম্যানের রান সংগ্রহ কিন্তু অব্যাহত আছে। ৩৫ রান নিয়ে খেলতে নামা তামিম ইকবাল ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৭৩ বলে সাত চারে। তখন মাহমুদুলের রান ছিল ৩২। তামিম হাফ সেঞ্চুরি করার পরের ওভারে উদ্বোধনী জুটিতে শতরানও হয়ে যায়। উদ্বোধনী জুটিতে সর্বশেষ শতরান এসেছিল ২০১৭ সালে গল টেস্টে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে ১১৭ রান।
তামিম হাফ সেঞ্চুরি দেখা পেলেও মাহমুদুল হাসান তার মতো করে ধীর লয়ে ব্যাটিং করে দেখা পান হাফ সেঞ্চুরির। আগের টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোড়া শূন্য করার পর মাহমুদুল পাঁচ টেস্টের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ১১০ বলে আট বাউন্ডারিতে। ৪৮ রানে তিনি থেমেছিলেন অনেক সময়। বল খেলেছিলেন ২০টি। হাফ সেঞ্চুরি করার পরপরই তিনি আশিতা ফার্নান্ডোকে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন। ফিল্ডার এম্বুলদেনিয়া সহজ ক্যাচ ফেলে দেন। মাহমুদুল জীবন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারও উপহার পান।
দুই জনের ১৫৭ রানের জুটি প্রথম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান। লাঞ্চের পরপরই হয়ত টপকে যাবেন তামিম ইকবাল ও জুনায়েদ সিদ্দিকীর ২০০৮ সালে ডানেডিনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করা ১৬১ রানের জুটিকেও। যদি এখানে তারা সফল হন, তখন সামনে থাকবে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ১৮৫, ২২৪ ও ৩১২ রানের তিনটি জুটি।
এমপি/আরএ/