দুদকের মামলার চার্জশীট থেকে ৮ জনের নাম কর্তনের সুপারিশ,দুদক কমিশন গ্রহণ না করেই রিপোর্ট ফেরত
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার খয়রাতির চালের ২২ কোটি টাকা আত্নসাতের মামলায় দুদকের চার্জশীট থেকে ৮ জনের নাম কেটে নিতে কোটি টাকা খরচের অভিযোগ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুকূলে জিআর চাল ৫,৮২৩ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেয়া হয়। যার তৎকালীন বাজার মূল্য ২২ কোটি টাকার অধিক। এই পুরো অর্থ আত্মসাতের ফলে প্রথমে অভিযোগ যায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুরে। স্মারক নং- গাইবান্ধা/অনুঃ (তদন্ত-১)/৩০৮২৮, তারিখ-১২/১০/২০১৭। এই স্মারকের ফরওয়ার্ডিংটি পরিসমাপ্তির (দায়মুক্তি) জন্য সুপারিশ করে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে, (স্মারক নং-০০.০১.৩২০০.৭২১.০১.০২৯, তারিখ-১৭/০৫/২০১৭)। কিন্তু দুদক কমিশন সভায় দায়মুক্তির কোন উপযুক্ত ব্যাখ্যা না পেয়ে (পুনঃ) তদন্ত করার জন্য দুদক প্রধান কার্যালয় হতে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুরে দুই সদস্যের কমিটি অনুমোদন করেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন সহকারী পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও অপর সদস্য হলেন উপ সহকারী পরিচালক মোঃ নুর আলম। এই কমিটি দন্ডবিধির ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ এবং ১৯৪৭ সালের ৫(২) ধারায় ১৯টি পৃথক মামলা করার জন্য সুপারিশ করেন। যার মধ্যে ১৬জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ১ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ১ জন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। পরবর্তীতে সহকারী পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের বদলি হওয়ার কারণে ২০২১ সালের ৩০শে আগষ্ট সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে ১টি মামলা করেন। মামলার পরবর্তী তদন্তের দায়িত্ব আবারও দেওয়া হয় সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফকে। এরপর সকল আসামি হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নিলেও পরবর্তীতে আর নিম্নকোর্টে আর সেলেন্ডার করে নাই। এর মধ্যে সকল আসামি নাম কেটে নেওয়ার তদবির শুরু করেন। অনেক আসামি চার্জশীট থেকে নাম কেটে নিতে সক্ষম হলেও অনেকেই পারি নাই।
এই মামলার অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঢাকা প্রকাশ জানতে পারে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুর হতে চার্জশীট থেকে যে ৮ জনের নাম কর্তন বা অবমুক্তির জন্য ঢাকায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে তারা হলেন, (১) জনাব মোঃ মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান ১ নং কামদিয়া ইউপি (২) জনাব মোঃ রেজাউল করিম (রফিক), সাবেক চেয়ারম্যান ২ নং কাটাবাড়ি ইউপি (৩) জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান ৩ নং সাখাহার ইউপি (৪) জনাব মোঃ আব্দুল লতিফ সরকার, সাবেক চেয়ারম্যান ৪ নং রাজাহার ইউপি (৫) জনাব মোঃ শাহদাত হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান ১০ নং রাখালবুরুজ ইউপি (৬) জনাব মোঃ মোশারফ হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান ১৪ নং কোচাশহর ইউপি (৭) জনাব মোঃ আমির হোসেন শামীম, সাবেক চেয়ারম্যান ১৭ নং শালমারা ইউপি (৮) মোছাঃ গোলাপী বেগম, সাবেক কাউন্সিলর গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে, গোবিন্দগঞ্জের পেশাজীবী সংগঠনের এক নেতা বলেছেন, শুনেছি দুদকের চার্জশীট থেকে ৮ জনের নাম কেটে নিতে ২ কোটি টাকার অধিক খরচ হইছে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক আসামী এই ২২ কোটি টাকার ভাগ খেয়েছে, কেউ কম আর কেউ বেশি। কোন আইনে চার্জশীট থেকে নাম কাটা হইছে তা আমার বোধগম্য নয়। অপরাধীরা মাফ পেলে দুদকের উপর থেকে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে দুদকের প্রধান কার্যালয়, এই চার্জশীটের রিপোর্ট গ্রহণ না করে কয়েকটি কোয়ারী দিয়ে পুনরায় রিপোর্ট দেয়ার জন্য সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুরে প্রেরণ করেন।
এই বিষয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুরের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, হেড অফিস থেকে কিছু কোয়ারী দিয়েছে সেগুলোর জবাব দিয়ে আমরা কিছু দিনের ভিতর পুনরায় রিপোর্ট হেড অফিসে প্রেরণ করবো। নাম কর্তনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এছাড়াও সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুরের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমানকে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।