হবিগঞ্জে দুর্নীতির দায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কারাগারে
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (বর্তমানে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় কর্মকর্তা) মোঃ জাহানকে দূর্নীতির দায়ে আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও মামলার ওপর আসামী বামৈ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন, জাহাঙ্গীর আলম, হাবিবুর রহমান, মোঃ গোলাম কিবরিয়া সহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনার উপসহকারী পরিচালক মোঃ সোহায়েব হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করার পর মোহাম্মদ জাহান উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই মামলার তথ্য প্রদানকারীর আইনজীবী মোঃ সামসুল হক।
জামিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ১২ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ হাসানুল ইসলামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত মোঃ জাহানকে জেল হযরতে প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করেন। একই দিন আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন হবিগঞ্জ জেলা দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক মোঃ এরশাদ মিয়া।
অভিযোগ পত্রে দুর্নীতির দায়ে লাখাই উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহান, ৩ নং বামৈ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন, লাখাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোঃ গোলাম কিবরিয়া ও সাবেক অফিস সসহকারী হাবিবুর রহমান কে দায়ী করা হয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার ৪ নং বামৈ ইউনিয়ন পরিষদ এর ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের কাচা আবুর বাড়ী হতে বামৈ পূর্বগ্রাম কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে মহিলা ইউপি সদস্য লুৎফা চৌধুরীকে রেকর্ডপত্রে দেখানো হয়।
একই ইউনিয়নের ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ভাদিকারা হাড়ি বাড়ি পশ্চিম এর কালভার্ট হতে হাজী আব্দুল বাছির মিয়ার বাড়ী হয়ে ভাদিকারা উত্তর শুয়া মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের ২ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ভাদিকারা জুম্মাহাটি হতে আবুল কালাম মেম্বারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৮ হাজার ৭ শত টাকা প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে মহিলা সদস্য মোছাঃ বিউটি আক্তারকে রেকর্ডপত্রে দেখানো হয়। ওই তিনটি প্রকল্পের কোন রেকর্ডপত্রে ইউপি সদস্য লুৎফা চৌধুরী ও বিউটি আক্তার স্বাক্ষর করেননি এবং কোন বিল নেননি মর্মে দেখা যায়। প্রকল্পগুলোর মাটির কাজসহ উন্নয়নমূলক কাজ ও করা হয়নি।
অফিস সহায়ক মোঃ গোলাম কিবরিয়া, সাবেক অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান, সাবেক অফিস সহকারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহানের নির্দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাস্টার রোল নিজেরা পূরন করতঃ প্রকল্প কমিটির স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের টাকা উত্তোলনে সহায়তা করেন।
৪ নং বামৈ ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন প্রকল্প কমিটির সভাপতিসহ অনান্যদের ভূয়া স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা পিআইও অফিস লাখাই এ দাখিল করেন মর্মেও দেখা যায়।
মূলত ইউপি চেয়ারম্যান জনাব এনামুল হক মামুন এবং সাবেক লাখাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহান এবং তার অফিসের কর্মচারী মোঃ গোলাম কিবরিয়া এবং হাবিবুর রহমান পরস্পর যোগসাজস করে বিভিন্ন প্রকল্পের মাস্টার রোল পূরন করত।
নিজেদের মনোনীত প্রকল্প কমিটির নাম নিজেরা লিখে স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে রাস্তা বা অন্যান্য প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজ না করে বর্ণিত প্রকল্প সমূহের সর্বমোট ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এসব অভিযোগে বামৈ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য ইকবাল মিয়া দুদুকে লিখিত অভিযোগ করেন।
এএজেড