ফসলরক্ষা বাঁধের গোড়ার মাটি কেটে বাঁধেই দেওয়া হচ্ছে!
সুনামগঞ্জে প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেখা দেয় অকাল বন্যা। মার্চের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যায় জেলার হাওরের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাই ধান রক্ষায় প্রতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ। ধান রক্ষায় এ বছরেও ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। তবে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় এবার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার স্থানীয় কৃষক ও লোকজনের অভিযোগ, বাঁধের গোড়া থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বাঁধে মাটি দেওয়া হচ্ছে। অনেক বাঁধে এখনও কাজই শুরু করা হয়নি। সঠিক সময়ের মধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে না পারলে পাহাড়ি ঢলে বোরো ফসলের ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা।
এবছর হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। গত বছরে বাঁধের কাজে মোট বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এবার দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১১০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে তা দ্বিগুণ করে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
গত বছর ছিল ৫০ টি প্রকল্প এবার ৭২টি প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬২টি বাঁধ অনুমোদিত হয়েছে। গেল ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার দেখার হাওরে ৪টি প্রকল্পের বাঁধে মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। ৬২টি বাঁধের অনুমোদন পেলেও বাকী প্রকল্পগুলোতে এখনও কাজ শুরুই হয়নি।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেখার হাওরে ফসল রক্ষাবাঁধের যে ৪টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এতে বিধিবহির্ভূত বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। এবছর শুরুতেই বাঁধের গোড়া থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে, আবার সেই মাটি বাঁধে দেওয়া হচ্ছে। একেবারে দায়সা কাজ এবং বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। ওই হাওরে গত দুই বছর যে সকল অপ্রয়োজনীয় বাঁধ বাতিল করা হয়েছিল এবার পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা আবার প্রস্তাবনায় আনা হয়েছে। এমনকি অপ্রয়োজনীয় বাঁধের কাজই এখন শুরু করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রতিবছরই সরকার কৃষকদের স্বার্থে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে হাওরে ফসল রক্ষাবাঁধ দেয় কিন্তু এর উপকার কৃষকরা পায় না। বছর ঘুরলেই বরাদ্দ দ্বিগুণ বেড়ে যায়, কিন্তু কাজের কাজ হয় না কিছুই। ব্যবসা বাণিজ্য হয় নেতা, জনপ্রতিনিধি, পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এমন অনেক বাঁধ রয়েছে যা অপ্রয়োজনীয়। প্রয়োজনীয় বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি অথচ অপ্রয়োজনীয়গুলোর কাজ চলমান।
দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা দবির আহমদ বলেন, ফসল রক্ষাবাঁধে কাজে বাঁধের গোড়া থেকেই মাটি কেটে বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে এগুলার জন্যে বাধ ভেঙে আমাদের এলাকার ধান ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা এখনই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আর যারা অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ যেনো হয়।
পাউবোর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েম মোঃ সাফিউল ইসলাম বলেন, এ বছর আমরা ৭২ টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। ইতোমধ্যে ৬২ টি প্রকল্পের অনুমোদন হয়ে গেছে। কয়েকটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, কাজে যদি কোনো ধরণের অনিয়ম পাওয়া যায়, সেই অনিয়মের ক্ষেত্রে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। বাঁধের ক্ষেত্রে কোনো কাজে অনিয়ম পাওয়া গেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে শনিবার (৭ জানুয়ারি) দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের নদীর তীরে দেখার হাওরের পিআইসির কাজ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী। তিনি অপ্রয়োজনীয় বাঁধে কাজ না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, কারো স্বার্থের জন্য অপ্রয়োজনীয় বাঁধ তৈরি করতে দেওয়া হবে না। ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হবে তাই হয়তো দেরি হচ্ছে, তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এএজেড