এখনও থামছে না পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া
বক্তব্য প্রদানের ৫ দিন পরও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে সরব সিলেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া। নিজ দলের মানুষের প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যাচ্ছেন। আবার কারো প্রতিক্রিয়ায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও চলছে মারাত্বক ভাবে।
চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে অলোচনা কালে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.আবদুল মোমেন বলেন- 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করতে ভারত সরকারকে আমি অনুরোধ করেছি'। এ বক্তব্যের পর ড. মোমেনকে নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। ব্যাপক সমালোচনার পর ড.মোমেন আত্মপক্ষ সমর্থন করে সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের কেউ নয়, সুতরাং তার বক্তব্যেও দায় আওয়ামী লীগের নয়-ব্যক্তিগত'।
রবিবার (২১আগস্ট) সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত গল্প করেন সে দায় আমাদের নয়। দলের পক্ষ থেকে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি'। হাছান মাহমুদ বলেন, 'তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষে কিছু বলার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়নি'।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের কেউ নয়-এমনটি বলেন দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানও। এরপর থেকে সিলেটে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বক্তব্যের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সদস্য এবং নৌকা প্রতীকের হয়েই সংসদ নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়েছেন-এমনটি প্রকাশ করতে শুরু হয় প্রতিযোগীতা।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলীয় প্রতীকে এমপি ও পরে সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি বলেন, ড. এ কে মোমেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এক নাম্বার সদস্য হিসেবে আছেন। এক নাম্বার সদস্য দলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট সিলেট মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই কমিটির এক নাম্বার সদস্য হিসেবে রয়েছেন ড. মোমেন।
দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনও একই অভিমত প্রকাশ করেন। তাদের দাবি- যেহেতু তিনি দলের মহানগর শাখার এক নাম্বার সদস্য পদে আছেন, সেহেতু দলীয় পদে নেই-এমনটি বলার কোনো সুযোগ নেই।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান মহানগর কমিটির সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এ বিষয়ে নিজ ফেসবুক পোস্টে লিখেন, আলোচনা বা সমালোচনা দুটোই গণতান্ত্রিক চর্চারই অংশ । তবে তা হতে হবে গঠনমূলক,বিষয় ভিত্তিক এবং যৌক্তিক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্নজনের প্রতিক্রিয়ার জবাবে তিনি লিখেন, 'মাননীয় মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে আওয়ামী লীগের অনেক নীতিনির্ধারকের বক্তব্যও আমরা শুনেছি, খোদ সাধারন সম্পাদকও এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা যারা আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এ বিষয়টি তাদের ভাবতে হবে । দলের একটা চেইন অব কমান্ড আছে । সুপ্রীম অথরিটি যখন বক্তব্য দেন বা যা বক্তব্য দেন-সেই বক্তব্য আমাদের সবার বক্তব্য হিসেবেই বিবেচিত হয়। আর সেটাই হচ্ছে দলীয় চেইন অব কমাণ্ড'।
তিনি লিখেন, 'আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ও মাননীয় মন্ত্রী সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় জনাব ওবায়দুল কাদেরের স্পষ্ট বক্তব্যের পরে আমরা যারা আওয়ামী ঘড়ানার রাজনীতিতে জড়িত তাদের আর কোন বক্তব্য থাকতে পারেনা । এর পরও যদি কেউ আলোচনা সমালোচনা বা 'পরনিন্দা চর্চা', বা 'ব্যাক্তি বন্দনা' করে থাকেন তবে তা 'দলীয় শৃংখলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের পর্যায়ভূক্ত' বলে বিবেচিত হবে। অতএব গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোর আগে একটু ভাবুন আপনি কোন পর্যায়ভূক্ত হচ্ছেন'।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা বিজিত চৌধুরী এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, দলীয় লোককে প্রথমেই দলীয় আদর্শ এবং চেইন অফ কমান্ড মেনে কাজ করতে হয়। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলীয় লোক হয়েও যে বক্তব্য রেখেছেন, তা নি:সন্দেহে আত্মঘাতি। এই বক্তব্য দলকে নানা বিতর্কের মুখে ফেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের, দলের নয়। তাই তিনি দলকে এমন বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারেন না। তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের স্পষ্ট বক্তব্যের পরে আমাদের এ বিষয়ে আর কোন বক্তব্য থাকতে পারেনা দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ লিখেন- বন্যেরা বনে সুন্দর,শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। রাজনীতি রাজনীতিবিদের হাতেই মানায়। একজনের অপরিপক্কতা একার নয় সবার ক্ষতি'।
এদিকে মন্ত্রীসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকছেন কি না-এ বিষয়েও চলছে নানা আলোচনা। কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগামী মাসের ভারত সফরের আগেই হয়তো এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্বান্ত আসতে পারে। সে সময়ের মধ্যে না হলে হয়তো ডিসেম্বরের মন্ত্রীসভা রদবদল করা হতে পারে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়তো বাদও পড়তে পারেন। আবার কেউ বলছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন দূরদর্শী কুটনৈতিক। অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি ভালোভাবেই জানেন, বলেই ড. এ কে মোমেনকে মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত করেছেন।
এএজেড