এমসি কলেজে ম্যুরাল স্থাপনে সিলেটে প্রতিক্রিয়া
একজন রাজা গিরিশ চন্দ্র রায় এবং অপরজন খান বাহাদুর আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়া। দুটি নামই সিলেটের শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগণ্য এবং পথিকৃত। সিলেটের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেছনে এই দুই জনের রয়েছে ঘামঝড়ানো পরিশ্রম। বিশেষ করে সিলেটের বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজে নির্মাণে ভূমিদাতা ছিলেন রাজা গিরিশচন্দ্র রায় এবং সেই কলেজকে টিলাগড় এলাকায় স্থানান্তর প্রক্রিয়াসহ ডিগ্রি কলেজে উন্নীত করেন খানবাহাদুর আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়া।
বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়ার আবক্ষ ম্যুরাল স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যে ম্যুরাল নির্মানের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি সিসিকের। কলেজ কতৃপক্ষের সাথে এর আগে সিটি করপোরেশেনের আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। সিসিক বলছে শীঘ্রই ম্যুরালটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হবে।
কলেজ অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ এলপিআর এ যাচ্ছেন ২৪ আগষ্ট। এর আগেই তিনি ম্যুরাল নির্মাণ অনুমোদন করেছেন। ফলে অধ্যক্ষ এবং মেয়রের সম্মতিক্রমে দৃষ্টিনন্দন এই আবক্ষ ম্যুরালটি শোভা পাচ্ছে কলেজ ক্যাম্পাসে। এদিকে এই ভাস্কর্য্য নির্মাণকে একপেশে এবং একগুয়েমি উল্লেখ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মুরারীচাঁদ (এমসি কলেজ) কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি- কলেজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় একজনকে সম্মান দেখাতে গিয়ে এর মাধ্যমে এমসি কলেজের মূল উদ্যোক্তা ও ভূমিদাতাকে অসম্মান করা হবে।
এর আগে ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কলেজের এইচএসসি ৯১' ব্যাচ এর পক্ষ থেকে নিজস্ব অর্থায়নে কলেজ প্রাঙ্গণে কলেজের তিনটি ভবনের সংযোগস্থলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরই লক্ষ্যে কলেজ অধ্যক্ষ বরাবরে ৯১ ব্যাচ এর আহবায়ক ও সদস্য সচিব সাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন দেওয়া হয়।
আবেদনে বলা হয় বিগত ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ইংরেজি তারিখে তৎকালীন অধ্যক্ষ,অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বিভিন্ন বিভাগের সম্মানিত সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকমন্ডলী ও কলেজ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে এমসি এইচএসসি ৯১ ব্যাচ সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় সফলতার সাথে পূনর্মিলনী উদযাপন করা হয়।
সে সময়কালীন সিদ্বান্ত হিসেবে কলেজ প্রাঙ্গণে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ও জীববিদ্যা ভবনের সংযোগস্থলে নিজস্য অর্থায়নে এবং নির্মাণ শিল্পী নিযুক্ত করে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার কাজ শুরু করতে চাই। স্মৃতিস্তম্ভটি যে যে তাৎপর্য বহন করবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভার্তৃত্ব, সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও একতার বন্ধন। তাছাড়া দণ্ডায়মান আয়তকার ফলকে থাকবে কলেজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। আবেদনে সাক্ষর করেন এমসি, এইচএসসি ৯১ ব্যাচ এর আহবায়ক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বিপিএম,পিএসসি ও সদস্য সচিব আব্দুল আহাদ।
এ বিষয়ে এমসি, এইচএসসি ৯১ ব্যাচ এর সদস্য সচিব আবদুল আহাদ বলেন, 'বর্তমানে আমাদের বিষয়টি অনুমোদনের অপেক্ষায়। অনুমোদন পেলে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুত কাজের বাস্তবায়ন করতে চাই। আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়া এবং রাজা গিরীশচন্দ্র রায় দুই জনই সিলেটের শিক্ষা বিস্তারে আলোকবর্তিকা হিসেবে স্মরণীয় এবং শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে থাকবেন। তিনি বলেন,আমাদের আবেদন অনুমোদন হলে আমরা সেখানে রাজা গিরীশচন্দ্র রায়ের ম্যুরাল স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের আহবায়ক আবদুল করিম কিম বলেন, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের সাথে রাজা গিরীশচন্দ্র রায় এবং আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়া দুই জনেরই অবদান অনস্বীকার্য। সুতরাং প্রধান ফটকের সামনে কাপ্তান মিয়া এবং রাজা গিরীশচন্দ্র দুই জনের ম্যুরাল স্থাপন করা হলে, প্রতিষ্ঠানের সুনাম বাড়বে বৈ কমবে না। উপরন্তু শিক্ষার্থীরা কলেজে প্রবেশ করার সাথে সাথে এই দুই জনের অবদানের বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হবে।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু বলেন,বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশেনের পূর্বেই ভাবা উচিত ছিল। কারণ একজনকে সম্মান করতে গিয়ে অপরজনের অবদান চাপা পড়ে যায়। এমনটি হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দায়িত্ব গ্রহণকারী নতুন অধ্যক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশেনের নিজস্ব অর্থায়নে ম্যুরালটি নির্মিত হচ্ছে। তবে এর স্থপতি এবং নির্মাণ ব্যয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সিসিকের ইঞ্জিনিয়ার সেলিম উদ্দিনের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান।
ইঞ্জিনিয়ার সেলিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয়নি। একই সাথে কলেজ অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও ফোন রিসিভ না করায় তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয় নি।
এএজেড