সুনামগঞ্জে শ্রমিকলীগ সভাপতিকে আটকের ঘটনায় তোলপাড়, নিন্দা
সুনামগঞ্জে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদ। গত ২২ জুলাই তাহিরপুর থানায় ৭ নম্বর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়ার পরেও অজ্ঞাতনামার আওতায় তাকে আটক করে
জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্ঠি হয়েছে। সেলিম আহমদকে আটকের পর ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। সেইসঙ্গে নানা কারণে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব বেরিয়ে আসছে। জোরালো হচ্ছে মুক্তির দাবি।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ভোরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাসননগরের নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে বিকালে সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সেলিমকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। একইসঙ্গে সেলিমের পক্ষেও জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। বিচারক বুধবার (১৭ আগস্ট) তার রিমান্ড ও জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।
জানা যায়, গত ৯ জুলাই রাত ১১টায় বিআইডাব্লিউটিএ’র ইজারাপ্রাপ্ত রনির জেটিতে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি অলিউর রহমান। এ সময় বাদাঘাট ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান জালাল মিয়ার ছেলে তারেক, মোর্শেদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ অফিসে এসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে হুমকি প্রদর্শন করেন তারা। এ ঘটনার পরদিন ১০ জুলাই মামলার বাদীসহ তিনজনকে অফিস থেকে তুলে নিয়ে বিবাদীদের গ্রাম মোদেরগাঁওয়ে নিয়ে আব্দুল লতিফের বাড়িতে নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় ২২ জুলাই তাহিরপুর থানায় যুবদল নেতা অলিউর রহমান বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ৭/৮ জনকে মামলার আসামি করা হয়। এ মামলায় জেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি ও বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী সেলিম আহমদকে মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেসে আটক করা হয়।
এলাকার স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনার সঙ্গে শ্রমিকলীগ সভাপতি সেলিম আহমদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের জানা মতে, গত ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র শাহাদাৎ বার্ষিকী ও শোক দিবস উপলক্ষে শ্রমিকলীগের সভাপতি সেলিম আহমদের নেতৃত্বে তাহিরপুর বাজারে বিশাল এক শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়। পৃথক আরেকটি শোক সভায় গণ জমায়েত ছিল না। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে প্রভাবশালী নেতারা। সেলিমের জনপ্রিয়তায় ঈর্শ্বান্বিত হয়ে যুবদুল নেতার মামলাকে কাজে লাগিয়ে তাকে অজ্ঞাতনামার তালিকায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
অন্য একটি সূত্র জানায়, বিআইডাব্লিউটিএ’র কাছ থেকে ইজারাপ্রাপ্ত দাবি পাঠলাই নদীতে বেপরোয়া চাঁদাবাজী করে আসছে মামলার বাদী পক্ষ। চাঁদাবাজীর ঘটনায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেলিম আহমদ সেই চাঁদাবাজী বন্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতেন। এই প্রতিবাদই কাল হলো সেলিমের জন্য।
এদিকে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আটকের খবরে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এর পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে মুক্তির দাবি জানানো হয়।
শামিম আহমেদ বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা যুবদল নেতার মামলার অভিযোগপত্রে ৭ আসামির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭-৮জনের প্রসঙ্গ আছে। তবে মামলার অভিযোগপত্রে কোথাও জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সেলিম আহমেদের নাম বা রাজনৈতিক ক্ষমতার ইঙ্গিত ছিল না। ঘটনার ৬ দিন পর এই মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। তবে এর আগের দিন তাহিরপুরে স্মরণকালের শোক সমাবেশ করে অনেকের ‘বদ নজরে’ পড়েন তিনি।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেখছি করোনাকালে সহায়তা, হাওরের ফসলহারা কৃষকদের সহায়তা, হাওরের বাঁধ নির্মাণে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সহায়তা, অসহায় শত শত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো সহায়তা, এমনকি সাম্প্রতিক বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। ৩০ কোটি টাকা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে নেওয়া যাদুকাটা ইজারার বিনা পয়সার ভাগিদার না করায় নিজ দলের কয়েকজনও ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাছাড়া সম্প্রতি সীমান্তে নদীতে নামে বেনামে চাঁদাবাজির ঘটনায় তিনি প্রতিবাদী ছিলেন। এ কারণে ‘দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, জনপ্রতিনিধিদের ষড়যন্ত্র’ আজ তাকে কারাগারে নিয়েছে। যুবদল নেতার সঙ্গে তার চাচাতো ভাইদের ব্যবসায়িক বিরোধের জেরের সুযোগ নিয়েছে বিভিন্ন মহল। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় ষড়যন্ত্র জয় করে ফিরবেন এই কামনা করি।
সুনামগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতির দায়ের করা মামলায় তালিকাভুক্ত আসামি না হওয়ার পরও সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদ ভাইকে আটক করে কোর্টে চালান করেছে পুলিশ। 'অজ্ঞাতনামা'র সুযোগ নিয়ে তাকে মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক এই মামলায় সেলিম আহমদ ভাইকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাই।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা কোর্ট ইন্সপেক্টর বোরহান উদ্দিন জানান, পুলিশ সেলিম আহমদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায়। সেলিমের আইনজীবীরাও তার জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক রিমান্ড ও জামিন শুনানির জন্য বুধবার (১৭ আগস্ট) দিন ধার্য করেন।
সেলিম আহমদের বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ভাই সম্পূর্ণ নির্দোষ। কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এ ঘটনায় সেলিম কোনোভাবেই জড়িত নন। আমাদের পরিবারের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করতেই এই নাটক সাজানো হয়েছে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে আমার ভাইয়ের নাম ছিল না। সোমবারও তাহিরপুর উপজেলা সদরে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছে। তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আটক করে আমাদের পরিবারকে হেয়-প্রতিপন্ন করতে চাচ্ছে একটি পক্ষ। ঘটনার কয়েকদিন পর হঠাৎ তাকে আটক করার বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এসআইএইচ