চা শিল্পের সংকট নিরসনে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বুধবার
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে সৃষ্ট চা শিল্পের সংকট নিরসনে ত্রিপক্ষীয় সভা ডেকেছে শ্রম অধিদপ্তর। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সরকার, চা বাগানের মালিকপক্ষ ও চা শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তিনি বলেন, আগামীকাল বিকালে শ্রম অধিদপ্তর, মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ এবং শ্রমিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নকে নিয়ে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের ডিজি আমাদের ঢাকায় বৈঠকে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা সেই সভায় যোগদান করব। তবে আমাদের চলমান যে ধর্মঘট আছে সেটি বহাল থাকবে। মজুরি বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত করব না।
চা বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ এর চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান, আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যাপারটি জেনেছি। আগামীকাল বৈঠকে আমরা অংশ নিব।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান শ্রমিক ধর্মঘট নিরসনের জন্য সরকারের শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু কোনো প্রকার সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে এই বৈঠক।
সভায় চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছি। কিন্তু মজুরি বৃদ্ধির সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করব না।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, আমরা সরকারের ডাকে বৈঠকে এসেছিলাম কিন্তু চলমান সমস্যা সমাধানের জন্য শুধু শ্রমিক পক্ষ বা সরকারের বসলে হবে না। এখানে মালিক-শ্রমিক দু'পক্ষকে বসতে হবে এবং সরকারকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকতে হবে। এভাবে আমাদের বন্ধ করা যাবে না, মজুরি বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়ব না।
বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খাইরুন আক্তার বলেন, আমরা চা শ্রমিকরা আজ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা আলোচনায় এসেছি। শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাদের দাবি শুনেছেন এবং তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি আন্দোলন স্থগিতের অনুরোধ জানান তিনি। কিন্তু আমরা চা শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তে অটল আছি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তো এসেছেন আন্দোলন থামাতে। তিনি কোনো সমাধানের কথা বলতে পারেননি।
এদিকে সমঝোতা বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, যেহেতু আজকের বৈঠকে কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত আসেনি তাই আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণ হওয়ার আগ পর্যন্ত চলমান ধর্মঘট কর্মসূচি চলবে। পাশাপাশি প্রতিটি বাগানে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ এবং পূর্বনির্ধারিত মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচিও বহাল থাকবে।
শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী বলেন, আমরা তাদের (চা শ্রমিকদের) ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য জোর করতে পারি না। তবে চলমান সমস্যা সমাধানে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
মৌলভীবাজারের বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যৎ তহবিলের নিয়ন্ত্রক শেখ কামরুল ইসলাম, শ্রম পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সিলেট বিভাগীয় যুগ্ম পরিচালক বজলুর রহমান, উপ-পরিচালক মুহা. দাদন মুন্সী, এএসপি (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) সার্কেল মো. শহিদুল হক মুন্সী, মৌলভীবাজার শ্রম কর্মকর্তা মো: মোসাহিদ চৌধুরী।
এদিকে দেশের প্রতিটি চা বাগানে টানা চতুর্থ দিনের মতো ধর্মঘট কর্মসূচি চলছে। দেশের ২৩১টি চা বাগানে বন্ধ রয়েছে পাতা তোলা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ। সরেজমিনে মৌলভীবাজারের কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা বাগানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জড়ো হয়ে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মিছিল সমাবেশ করছেন। এসময় শ্রমিকরা মালিকপক্ষকে তাদের দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
এসজি/