সিলেট অঞ্চলে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ, শীর্ষে হবিগঞ্জ
সিলেট অঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। বন্যা পরবর্তী এবারের পানিবাহিত রোগ গত বছরের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। পানিবাহিত রোগের মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, আর টি আই, চর্মরোগ ও চোখের প্রদাহ। শুক্রবার (৫ জুলাই) পর্যন্ত সিলেট বিভাগে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজার ৪১৮ জন। এদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান হবিগঞ্জ জেলার। এই জেলায় পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৮৫৭ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৮ জন। এ ছাড়াও সিলেট জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭২ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৯৩১ জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৪৫ জন। এর মধ্যে ১৫৬ জন ডায়রিয়া ও বাকীরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সিলেট জেলার ৫৯ জনের মধ্যে ২৯ জন ডায়রিয়া ও ৩০ জন অন্যান্য রোগে, সুনামগঞ্জের ৫৬ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। হবিগঞ্জের ১১৫ জনের মধ্যে ৪১ জন ডায়রিয়া ও ৭৪ জন অন্যান্য রোগে এবং মৌলভীবাজারে ১১৫ জনের মধ্যে ৩০ জন ডায়রিয়া ও ৮৫ জন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডায়রিার প্রকোপ কিছুটা কমলেও পানিবাহিত অন্যান্য রোগের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে ৩৪৫ জন পানিবাহিত নতুন রোগীর মধ্যে ১৫৬ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাকী ১৮৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন অন্যান্য রোগে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের দাবি, সিলেটে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি হচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগের ওষুধ।
নগরীর বস্তি-কলোনী এলাকার কয়েকটি ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ফার্মেসীতে পানিবাহিত নানা রোগের ওষুধ নিচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যে চর্মরোগ, জ্বর, সর্দি-কাশি এবং ডায়রিয়া-আমাশয়ের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বেশি।
সাম্প্রতিককালে সিলেট অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিভাগের ৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৩৩টি উপজেলা প্লাবিত হয়। বন্যা দূর্গত এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪২৭টি মেডিকেল টিম শুরু থেকে কাজ করে আসছে। বর্তমানেও এসব মেডিকেল টিম পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে মাঠে কাজ করছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৩৯টি, সুনামগঞ্জে ১২৩টি, হবিগঞ্জে ৯১টি ও মৌলভীবাজারে ৭৪টি মেডিকেল টিম এখনো সক্রিয় রয়েছে।
এদিকে গত ১ সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮১ জন। আর গত ১ মাসে পানিবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৭৭ জন। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি থেকে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৮০৮ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলায়।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা: হিমাংশু লাল রায় জানান, সিলেটে পানিবাহিত রোগের সংখ্যা বাড়লেও তা আশঙ্কাজনক নয়। আমাদের মেডিকেল টিম শহর থেকে শুরু করে গ্রামে-গঞ্জে কাজ করছে। আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ সামগ্রী রয়েছে। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
এসআইএইচ