শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

সাতছড়ি উদ্যানের আয়তন বাড়ছে দ্বিগুণ

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সংরক্ষিত প্রাকৃতিক একটি বনাঞ্চল। সাতছড়ি দেশের সবচেয়ে ছোট জাতীয় উদ্যান। তবে ছোট হলেও এই বনকে বলা হয় বন্যপ্রাণীর ‘হটস্পট’। বিশেষ করে পাখির রাজ্য হিসেবে পরিচিত এই বনে আছে অনেক বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী। এই বনে দেখা মিলেছে বন্যককুরের। এটি সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি।

প্রকৃতির আপন মায়ায় সুনিপুণভাবে বেড়ে ওঠা এই বন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের গাঁ ঘেঁষে অবস্থিত। মিশ্র চিরসবুজ এই বন আঁকা-বাঁকা ৭টি পাহাড়ি ছড়া ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলায় পরিবেষ্টিত। বনাঞ্চলটিকে ঘিরে রয়েছে ৯টি চা বাগান। পশ্চিমে সাতছড়ি চা বাগান ও পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান।

বর্তমান সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ২৪২ দশমিক ৯১ হেক্টর সংরক্ষিত বন। তবে এবার বনটির আয়তন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। নতুন করে ৬০০ হেক্টর সংযোজন করে মোট ৮৪২ দশমিক ৯১ হেক্টর জাতীয় উদ্যান করতে চায় বনবিভাগ। এরই মধ্যে এ নিয়ে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেট। প্রস্তাবটি বন অধিদপ্তর থেকে যাচাই বাচাই শেষে প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতছড়িতে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। বড় আকারের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে রয়েছে লেজবিহীন স্তন্যপায়ী উল্লুক। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া এ মহাবিপন্ন উল্লুকের অন্যতম উপযুক্ত আশ্রয়স্থল সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। অন্যান্য বড় আকারের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে রয়েছে চার প্রজাতির বানর। এগুলো হলো- রেসাস বানর, ছোট লেজী বানর, আসামি বানর ও লজ্জাবতী বানর। এ ছাড়া দুই ধরনের হনুমান রয়েছে এখানে। এগুলো হলো- মুখপোড়া হনুমান ও চশমাপরা হনুমান। এ ছাড়া অন্যান্য স্তন্যপায়ীর মধ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির মায়া হরিণ, কালো কাঠবিড়ালী, খরগোশ, বন্যশুকর, শিয়াল, মেছোবিড়াল, বনবিড়াল, গন্ধগোকুল, সজারু, হল্দে-গলা মার্টিন।

সাতছড়িতে বন কুকুর রয়েছে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও মাংসাশী প্রাণীর গবেষক মুনতাসির আকাশ বলেন, এটি খুবই সমৃদ্ধ বন। এখানে অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এই বনের আয়তন বাড়ানোর যে উদ্যোগ বনবিভাগ নিয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে বন্যপ্রাণীদের থাকার জায়গা বাড়বে সেই সঙ্গে এদের সংরক্ষণে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এ উদ্যোগ।

সাতছড়িতে প্রায় ১৪৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিরল প্রজাতির বেশ কিছু পাখির দেখা মিলে এ বনে। এদের মধ্যে রয়েছে বনমোরগ, মথুরা, কাউধনেশ, পাহাড়ি ময়না, লালমাথা টিয়া, হরিয়াল, রাজ ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, বেগুনি পাপিয়া, সিঁদুরে মৌটুসি, লালমাথা কুচকুচি, পাতা বুলবুলি। অন্য পাখির মধ্যে রয়েছে বাংলা বুলবুলি, বউকথাকও, সিপাহি বুলবুলি, নীলকণ্ঠ, কালাঝুটি বুলবুলি, কোকিল, কাঠঠোকরা, দাগি বসন্ত, এশীয় নীলপরি, ঘুঘু, শ্যামা, কাঠ শালিক, সবুজ টিয়া, কমন ময়না, প্যাঁচা, ফটিকজল, ঈগল, বটকল, কমলা দামা, খয়রা মাথা সুইচোরা, মৌটুসি, ফুলঝুরি, গোলাপি সাহেলী, ভিমরাজ, ডুফাজঙ্গল, মুনিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ এর অন্তর্গত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা বলে ঘোষিত।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্য অনুযায়ী, যেকোনো বনে প্রতি এক কিলোমিটারের ভেতর সাধারণত ৫০ প্রজাতির বেশি পাখি বসবাস করে। কিন্তু সাতছড়ি একমাত্র বন যেখানে এক কিলোমিটারের ভেতর প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির পাখিও পাওয়া যায় এখানে। তাই দেশের পাখিপ্রেমী ও ফটোগ্রাফারদের কাছেও এই বন রয়েছে পছন্দের তালিকায় একেবারে শীর্ষে।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি তারেক অনু জানান, দেশের মধ্যে পাখিদের জন্য এমন বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্ভিদ আর বৃক্ষে ভরা বন আর কোথাও নেই। সুন্দরবনের পর একসঙ্গে এত প্রজাতির পাখির দেখা আর কোথাও মেলে না।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পাখিবিদ ড. ইনাম আল হক জানান, এক কিলোমিটার বনে ৫০ প্রজাতির জায়গায় সাতছড়িতে ২০০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এটা মোটেও ভালো খবর নয়। এত বড় দেশ আমাদের। কিন্তু পাখিদের বসবাসের ভালো জায়গা না থাকায় সেগুলো এখানে থেকে যায়। বনটি বড় করা হলে অবশ্যই পাখিদের জন্য ভালো খবর।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বনটি আমার কাছে খুবই প্রিয়। কারণ এখানে এত বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছ, লতাপাতা আছে সেই সঙ্গে আছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ। যা এই বনকে সমৃদ্ধ করেছে। ছোট একটি বনে ২০০ প্রজাতির পাখি তখনই থাকবে যখন তাদের জন্য আলাদা আলাদা খাবার পাওয়া যাবে। এটা একটা ভালো দিক।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রায় ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১০ প্রজাতির উভচর প্রাণীর রয়েছে। এদের মধ্যে সবুজ বোড়া বা পিট ভাইপার, কিং কোবরা, অজগর, মক ভাইপার, খয়ে গোখরা, শঙ্খিনী, লাউডগা, বাদামি গেছো সাপ, তক্ষক, গিরগিটি, চিতি বন আচিল, গুইসাপ, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপসহ রয়েছে নানান সরীসৃপ।

উভয়চের মধ্যে চিত্রিত আঁচিল ব্যাঙ, ভেনপু ব্যাঙ, মুরগি ডাকা ব্যাঙসহ রয়েছে ঝিঁঝিঁ ব্যাঙ, সোনা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, দুই দাগী বাঁশি ব্যাঙসহ নানা প্রজাতির ব্যাঙ।

সরিসৃপ গবেষক শাহারিয়ার সিজার জানান, আয়তন বাড়ানো ভালো উদ্যোগ তবে এই বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া পাহাড়ি ছড়াগুলো অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। ছড়া খনন ও দখলমুক্ত করা সেই সঙ্গে বনকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারলে সরিসৃপ ও উভয়চর প্রাণীর জন্য উপকারে আসবে।

এই বনের অন্যতম সুন্দর প্রজাপতি। প্রায় ১৯০ প্রজাতির রংবেরঙের প্রজাপতির আবাসস্থল এ সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। বর্ণিল রঙিন ডানা, আকার-আকৃতি, বসার স্থান, খাদ্যাভাস ও উড়ার ধরনে একটি অন্যটির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বিরল প্রজাতির বেশ কিছু উদ্ভিদসহ প্রায় ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে সেগুন, চাপালিশ, চালমুগরা, তেলসুর, আউয়াল, চিকরাশি, গামার, গর্জন, রাতা, উদাল, আগর, ছাতিম, লোহাকাঠ, ডেউয়া, বেলপাই, মালাকানা, মেহগনি, জিগা, জারুল, করই, ডুমুর, বট, পাকুরসহ রয়েছে নানান প্রজাতির উদ্ভিদ।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বনাঞ্চলটিকে বর্ধিতকরণের যৌক্তিকতা হিসেবে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য এই বনের আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব আমরা বন অধিদপ্তরে দিয়েছিলাম এই বছরের শুরুতে। এরপর অধিদপ্তর থেকে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হলে আমরা আবার তা পাঠাই। বর্তমানে এটি অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে আছে।

বাংলাদেশের অত্যন্ত সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি হিসেবে খ্যাত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। দেশের অন্যান্য প্রাকৃতিক বনের তুলনায় এটি উদ্ভিদ ও প্রাণিবৈচিত্র্যে অত্যন্ত পরিপূর্ণ। ইতোমধ্যেই পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া মহাবিপন্ন বন্যপ্রাণীর একটু অংশ এখানে আছে। তাই এইসব বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণের জন্য জাতীয় উদ্যানের আয়তন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বিচরণের জন্য আবাসস্থল সংরক্ষণের গুরুত্ব অত্যাধিক।বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র যথেষ্ট নয়। বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও এদের অবাদ বিচরণের জন্য বন্যপ্রাণীর স্থায়ী অভয়াশ্রম সৃষ্টি করা জরুরি। বিভিন্ন ধরনের ফলজ ও বনজ বৃক্ষ অর্থাৎ বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও খাদ্যাপযোগী বনায়ন সৃজন করে বন্যপ্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। সেজন্য বনাঞ্চলের আয়তন বর্ধিতকরণ জরুীর।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে যে আয়তন তার বাইরে জাতীয় উদ্যানের বর্তমান এলাকার বাইরের অঞ্চলেও বিভিন্ন ধরনের বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এসব উদ্ভিদের মধ্যে চালমুগরা, তেলসুর, আউয়াল, চিকরাশি, গামার, রাতা, উদাল, আগর, ছাতিম, লোহাকাঠ, ডেউয়া, বেলপাই, মালাকানা, জিগা, জারুল, করই, ডুমুর, বট, পাকুর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উদ্যানের আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে এসব উদ্ভিদের রক্ষণাবেক্ষণ আরও সহজতর হবে। পাশাপাশি জাতীয় উদ্যানটিও হবে সমৃদ্ধ।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানা জানান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আয়তন বর্তমানে খুবই ছোট। এত কম জায়গাতে দীর্ঘদিন বন্যপ্রাণী টিকিয়ে রাখা কঠিন তাই আয়তন বাড়ানো জরুরি। এই বনের আশেপাশের অনেক এলাকা বন্যপ্রাণীদের জন্য সমৃদ্ধ। সেই সব জায়গাকে সংরক্ষিত বনের আয়তায় আনার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা বন্যপ্রাণীর জন্য উপকারে আসবে। কারণ জায়গা বাড়লে প্রাণীদের আবাস্থল বাড়বে এবং এই জায়গাটা সংরক্ষিত হবে। এদের তাদের প্রজনন ও চলাচলের জন্য নিরাপদ জায়গা বৃদ্ধি পাবে।

এসএন

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত