যে গ্রামের নাম শুনলেই ভেঙে যায় বিয়ে, মেলে না চাকরি!
ছবি: সংগৃহীত
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে একটি গ্রামের নাম শুনলেই ভেঙে যাচ্ছে বিয়ে, অভিভাবকরা পড়েছেন বেকায়দায়। জেলার পলাশবাড়ী পৌর শহর থেকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৮নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত গ্রামটির নাম রাইগ্রাম।
কয়েক দশক আগে থেকেই গ্রামটি উত্তরাঞ্চলজুড়ে হিরোইন পল্লী নামে পরিচিত। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু কেউ বন্ধ করতে পারেননি এই এলাকার মাদক বাণিজ্য। ফলে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে এই গ্রামের বাসিন্দাদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েক দশক আগে ওই গ্রামের আব্দুর জব্বারের হাত ধরে মাদক ব্যবসার উৎপত্তি হয়। আব্দুল জব্বার মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরা চালিয়ে যাচ্ছেন এই ব্যবসা। বর্তমানে ওই গ্রামের অনেকই মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ঘটক জানান, এই গ্রামে ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে যায়, শুধু এই মাদকের কারণে। সবাই এই গ্রামটিকে মাদকের গ্রাম বলে জানে। এ জন্য বাইরের কোনো ছেলে এই গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করতে চান না। আবার অন্য গ্রামের বাসিন্দারাও এ গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে চান না। গ্রামের নাম শুনলেই বিয়ে ভেঙে যায়।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্সের কথা জানিয়ে বলেন, এ গ্রামে সভা করে মানুষকে সচেতেন করার কাজ চলছে। অতি দ্রুত গ্রামটিকে মাদকমুক্ত করা হবে।
গ্রামের এসহাক আলীর (৫৫) জীবন চলে রিকশাভ্যান-ইজিবাইক মেরামত করে। চার ছেলে-মেয়ের বাবা তিনি। ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন সম্প্রতি। তার দাবি, আগে বেশ কয়েকবার বিয়ে ভেঙে গেছে শুধুমাত্র গ্রামের নাম শুনে।
তার অভিযোগ, তুলনামূলক কম হলেও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে অন্য সন্তানদের বিয়ের ক্ষেত্রেও। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের কেউ আত্মীয়তা করতে চান না।
এসহাক জানান, তার মেয়ে জামাই গার্মেন্টে চাকরি করেন, বাড়ি জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।
গ্রামের নামের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ইব্রাহিম মিয়াকেও (৩৮)। তিনি একজন গাড়ি চালক। সম্প্রতি চাকরির জন্য তিনি একটি কোম্পানিতে যান, যেখানে তার লাইসেন্সসহ যাবতীয় বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও যখন তার বাড়ি ঠিকানা জানতে পারে, তাকে আর চাকরি দেয় নি। কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, গাড়ি চালানো ফাঁকে তিনি মাদক পরিবহন করতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, কম-বেশি এমন নিয়মিত গ্রামের খ্যাতি পাওয়া এমন নামের কারণে তাদের নানান ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রামবাসী দ্রুত এমন সমস্যা থেকে মুক্তি চান। পাশাপাশি তারা মাদক নিয়ন্ত্রণে সবাই এক হয়ে কাজ করতে চান।
২০১৮ সালের মে মাসে রাইগ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে মাদক সম্রাট রাজু মিয়া র্যাবের সাথে গুলিবিনিময়কালে নিহত হন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযোগে বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি আটক হন।