গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র বিপৎসীমার ৮৮ সেমি ওপরে, পানিবন্দি ৩০ হাজার পরিবার
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেমি ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ফলে এসব নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার পরিবার। তবে কমেছে তিস্তার পানি।
শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল ৩ টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে- গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উচ্চতা ১৪ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেমি ও ঘাঘট নদীর পানি ১৫ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৮ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া নদীর পানি ২১ সেমি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপৎসীমার ১৩৯ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি ১৩ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৫৬ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ মিলিমিটার।
জানা যায়, গত কয়েক দিনের অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বাড়তে শুরু করে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট দোকান-পাট ও ঘর-বাড়ি। এলাকার মচির, ভূট্টাসহ বিভিন্ন ফসলাদি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার পরিবার।
গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা, এই চার উপজেলায় বন্যায় ২৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবৃদ্ধির ফলে এসব এলাকার ঘরবাড়িগুলোতে পানি উঠতে শুরু করেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার পানিবন্দী মানুষরা গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। কয়েকটি এলাকায় ভাঙ্গনও দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন আতঙ্কে লোকজন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। এদিকে তিস্তার পানি কমতে থাকায় সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুরের প্লাবিত এলাকা জেগে উঠতে শুরু করেছে।
সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যাবাজার এলাকায় যমুনার পানির চাপে বাঁধের অন্তত ৩০ ফিট এলাকা ধ্বসে যায়। এতে তিন ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে পড়ায় এসব এলাকার বিস্তৃর্ণ জমির পাট, কাউন, তীল ও শাকসবজিসহ বর্ষাকালীন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যা কবলিতরা।
এদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় সদরসহ সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০টি ও ১০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, অতি বর্ষণ ও উজনের ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বাড়ছে। এরমধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। তবে কমেছে তিস্তার পানি। সব ধরণের ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, শুকনা খাবার, জি আর চাল, ক্যাশ মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পীড বোট প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ইউনিয়ন ভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রচার প্রচারণা চলমান রয়েছে।