নারী কয়েদির সঙ্গে কারারক্ষীর অবৈধ কার্যকলাপ, দেখে ফেলায় হাজতিকে নির্যাতন!
অভিযুক্ত গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতরে অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলায় মহিলা হাজতিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন, শ্লীলতাহানি এবং মহিলা ইউনিটে পুরুষ ঢুকে মারপিট ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ওই হাজতির মায়ের অভিযোগ, তার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানি এবং নারী ইউনিটে পুরুষ ঢুকে মারধর করেছে। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা মোছা. করিমন নেছা।
জানা যায়, ভুক্তভোগী পাঁচ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। তার হাজতি নং ৫০৮। ভুক্তভোগীর মা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ‘আমার মেয়ে পাঁচ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। জেলা কারাগারে কর্মরত সুবেদার মো. আশরাফুল এবং মহিলা কয়েদী (রাইটার) মোছা. মেঘলা খাতুনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। অনৈতিক কার্যকলাপ দেখে ফেলায় আমার মেয়ের উপর সুবেদার ও রাইটার মেঘলা ক্ষিপ্ত হন। দুজনের অনৈতিক সম্পর্কের কথা কাউকে বললে আমার মেয়েকে মেরে ফেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়া হবে।’
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীর মা আরও জানিয়েছেন, ‘সুবেদার আশরাফুল আমার মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে কারাগারের ভিতরে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্যক্তসহ হাত ও পড়নের কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করে একাধিকবার শ্লীলতাহানি ঘটায়। আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতে থাকে। জেল সুপারকে বিচার দেয়ার কথা বললে আমার মেয়েকে প্রকাশ্যে সুবেদার আশরাফুল জানান, জেলার সাহেব তার লোক। সে নিজের টাকা খরচ করে জেলারকে বদলি করে নিয়ে এসেছেন। জেলার তার কোনো বিচার করতে পারবে না বলে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেন।’
ভুক্তভোগীর মা মোছা. করিমননেছা লিখিত অভিযোগে আরও জানান, ‘গত ২০ মার্চ দুপুর বেলা সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদী মেঘলা খাতুন, রেহেনা, আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা, শাবানা গং পরিকল্পিতভাবে কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভিতরের বারান্দায় লাঠি দ্বারা অতর্কিত আমার মেয়ের বুকে, পিঠে, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এক পর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল, সিআইডি আনিছ এবং হাবিলদার মোস্তফা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভিতরে প্রবেশ করে আমার মেয়েকে টেনেহিঁচড়ে মহিলা ইউনিটের বারান্দা থেকে সেলের ভিতর নিয়ে যায়। আমার মেয়ের দুই হাত-পা হ্যান্ডক্যাপ ও রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে দুই উরু ও পায়ের পাতায় বেদম মারপিটসহ পড়নের কাপড় (কামিজ) টেনে ছিঁড়ে ফেলা বিবস্ত্র করা হয়। এ ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি এর সঙ্গে জড়িত না। কারাগারের নারী ওয়ার্ডে কোনো পুরুষ কারারক্ষীর ডিউটিই থাকে না। সেখানে পুরুষদের প্রবেশ কোনোভাবেই সম্ভব না।
গাইবান্ধা কারাগারের জেলসুপার জাভেদ মেহেদী গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এডিসি মহোদয় তদন্তে এসেছিলেন। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, মঙ্গলবার কারাগারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মশিউর রহমানকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।