শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

কাজ শেষের আগেই ২৭ কোটি টাকার সেতুর পিলারে ফাটল

রংপুরের পীরগঞ্জে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই নুনদহ সেতুর নিচে পিলার ব্যাচে বড় ধরনের ফাটল দেখা গেছে। সেতুটি করতোয়া নদীর উপর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির স্থায়িত্ব ও কাজ সমাপ্তি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেশ কিছুদিন ধরে নির্মাণ কাজ স্থগিত রেখেছে। এরই মাঝে সেতুর মূল পিলার ব্যাচে ফাটল দেখা দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার, রংপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বহীনতা ও লুটপাটের কারণে সেতুর নিচে পিলারে ফাটল ধরেছে। সেতুর নির্মাণ কাজে কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে করতোয়া নদীর নুনদহ ঘাটে ৩০১ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিপি এল জেভি ৫২ ছাত্তার ম্যানসন ও প্যান্স লাইন্স। শর্তানুযায়ী ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত নুনদহ ব্রিজের মাত্র ৭০ শতাংশ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ২ বছর ধরে নির্মাণ কাজ স্থগিত রেখেছে। সম্প্রতি নদীর পানি শুকিয়ে গেলে সেতুটির ৫ নম্বর পিলারটির বেজমেন্ট ফেটে মাটির নিচে ধসে পড়ে যায়। সেতুর নিচে হঠাৎ পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। পরে এলজিইডির পীরগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তাদের টনক নড়তে শুরু করে। এ ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা থেকে তিন সদস্যদের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি সেতুটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন সেতুর কাজের গুণগত মান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে রংপুর এলজিইডি জড়িত বলে জানায়। তবে ফাটল দেখা দেওয়া অংশের কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা বা এর ভবিষ্যৎ কি তা স্পষ্ট করেন পরিদর্শনে আসা তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

এলজিইডি সূত্রে আরও জানা গেছে, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পীরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল এবং দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার মানুষের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করতোয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেন। নির্দেশের আলোকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) আওতায় সিআইবি প্রজেক্টের মাধ্যমে করতোয়া নদীর উপর চতরা জিসি গিলাবাড়ী ঘাট ভায়া নিশ্চিন্তবাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কে নুনদহ ঘাট পর্যন্ত করতোয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য ২৬ কোটি ৮২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর মজিবর রহমান জানান, ২০১৯ সালে সেতুটির পিলার ক্যাপের কাজ হয়। ওই সময়ে করা ৫ নম্বর পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনা দেখতে গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা থেকে এলজিইডির ৩ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম ঘটনা তদন্ত করতে আসে। টিমের সঙ্গে রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলীও ছিলেন। তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সেতুটির জন্য ৫ একর ৩৩ শতাংশ জমি এখনো অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। কাজ করতে গিয়ে বারবার জমির মালিকদের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

আলী জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে রংপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান জানান,জেলা প্রকৌশল বিভাগের অনুমোদন ও ঢাকার প্রধান প্রকৌশল দপ্তরের অনুমোদনপত্র নিয়ে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। জেলা ভূমি কার্যালয় থেকে অনুমোদন এলেই জমির মালিকরা জমি অধিগ্রহণের টাকা পাবে এবং সেতুর নির্মাণ কাজেরও গতি বাড়বে। গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত দল সেতু পরিদর্শন করেছে । তদন্ত করতে আসা প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদন দেওয়ার পর ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে করতোয়া নদী। আর এই নদীর কারণে প্রতি বছর বন্যায় ভেঙে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় অসংখ্য গ্রাম করতোয়ার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ জন্য দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সিংড়া ইউনিয়নের মারনুপাড়া এবং পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের গিলাবাড়ী করতোয়া নদীর নুনদহ ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। আর এই সেতুটি নির্মিত হলে পীরগঞ্জের সঙ্গে ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলাসহ হিলি, জয়পুরহাট এবং বিন্দগঞ্জ-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে যোগাযোগও সহজ হবে।

এসআইএইচ

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত