‘ঠিকাদারের হাতে রমেকের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেছেন, ঠিকাদারের হাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এ হাসপাতালে মধ্যস্বত্ব ভোগীর কোনো স্থান নেই। হাসপাতালের যে সমস্ত বিভাগে টেকনোলজিস্ট, আয়া, ক্লিনার নেই সেখানে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। মাস্টারস-ডিগ্রি পাস শার্ট-প্যান্ট পরে দালালি করবে এমন লোক নিয়োগ করার দরকার নেই।
বুধবার (১২ অক্টোবর) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে কলেজ মিলনায়তনে তিনি এসব কথা বলেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, কর্মচারীদের বেতন সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে দিতে হবে। তাহলে কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য পাবে এবং তারা দালালি কিংবা অন্য কোনো অনৈতিক কাজে ঝুঁকবে না। এজন্য যেকোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমি দিতে প্রস্তুত। দু-এক জনকে সুবিধা দিতে গিয়ে ব্যাপক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে এটা হতে দেওয়া হবে না। ডাক্তারেরা সঠিকভাবে কাজ করেন না বলে আপনাদের মানুষ গালি দেয়। যেসব প্রাইভেট হাসপাতালের লাইসেন্স নেই, যেখানে ওয়ার্ডবয় অপারেশন করে, অ্যানেসথেসিয়া দেয় সেখানে আমার চিকিৎসক যায় কেন। তাদের দায়-দায়িত্ব কোথায়। অনিবন্ধিত ক্লিনিকগুলোকে তো তারাই বাঁচিয়ে রেখেছে। অথচ সৃষ্টিকর্তার দূত হিসেবে ডাক্তারকে সম্মান করা হয়। অন্য পেশার চেয়ে ডাক্তারী পেশায় সৎ পথে থেকে অনেক উপার্জন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেসব ডিপার্টমেন্টে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে তা চালু করতে হবে। কার্ডিওলজি বিভাগে এখন কয়টা ইকো হয় তা আমি জানি না। হেপাটোলজি উইং আছে অথচ অ্যান্ডোসকপি হয় না। এখানে কেন এসব সেবা দেওয়া হবে না, সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে আসতে হবে। এ হাসপাতালে সব ধরনের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। তাহলে কেন রোগীদের ঢাকায় যেতে হয়। কেন তারা কার্ডিয়াক এমারজেন্সি সার্ভিস পাবে না। কেন রোগী ঢাকায় যেতে রাস্তায় মারা যাবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের প্রতিজ্ঞা করতে হবে কোনো রোগী এখন থেকে ঢাকায় যাবে না। হাসপাতালেই তাদের উন্নতমানের চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এই হাসপাতাল নিয়ে সারাদেশে উপহাস আছে। এখানে চিকিৎসক জিম্মি, নার্সরা জিম্মি, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কাজ করে না। এখন থেকে হাসপাতালের বাহিরে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতে দেওয়া যাবে না। হাসপাতালে রোগীদের শতভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, লাইন্সেসবিহীন ক্লিনিকে ভুল রোগ নির্ণয়ের ফলে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। অপরদিকে ভুল চিকিৎসার সংবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে পার্শ্ববর্তী দেশের দালালরা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার নেতিবাচক দিক তুলে ধরে রোগীদের অন্য দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি রেগুলেটেড প্রাইভেট হাসপাতাল থাকুক। যেখানে সঠিক ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা হবে। এটি করলে প্রতি বছর বিদেশে চিকিৎসা নিতে দেশের মানুষ যে ৪৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে, তা দেশেই থেকে যাবে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ কলেজ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. বিমল রায়ের সভাপতিত্বে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উন্নয়ন সংক্রান্ত এ সভায় বক্তব্য রাখেন, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসানসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কর্মচারী নেতারা।
এসএন