‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে হবে’
জাতীয় সংসদের দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে নিজেদের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে অনেক পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সব শ্রেণিপেশার, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও সম্প্রদায়ের মানুষদের একসঙ্গে নিয়ে দেশকে স্বনির্ভর উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে চান। এজন্য নিজেদেরকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
সোমবার (১০ অক্টোবর) সকালে রংপুর পর্যটন মোটেলে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতায় আয়োজিত ‘দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, দরিদ্র বিমোচন, মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হোক’ শীর্ষক গণশুনানি শেষে সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের (এপিপিজি) প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্পর্কিত এপিপিজি গ্রুপের সভাপতি মনোরঞ্জন শীল গোপাল, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, এপিপিজি গ্রুপের সদস্য বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন, পানিসম্পদ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য নুরন্নবী চৌধুরী, এপিপিজি গ্রুপের সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, আরমা দত্ত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম রুমানা আলী, এপিপিজি গ্রুপের কো-চেয়ার গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এবং সেক্রেটারি জেনারেল শিশির শীল।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, রংপুর স্থানীয় সরকার পরিচালক ফজলুল কবীর, অ্যাডভোকেসি রাইটস বেজড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম হেকস/ইপার বাংলাদেশের ম্যানেজার সাইবুন নেসা।
এসময় দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গাঁরো, সাঁওতাল, মুন্ডাসহ বিভিন্ন ও সম্প্রদায়ের নেতা, এনএনএমসি ফাউন্ডেশন, জেলা অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্মসহ সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
গণশুনানিতে বক্তারা বলেন, আমরা যখন কাউকে পিছিয়ে রেখে নয় বলে টেকসই উন্নয়নের কথা বলছি, তখন এই জনগোষ্ঠীর অধিকার শতভাগ নিশ্চিত করাই হবে আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এসডিজি বাস্তবায়ন এবং দেশকে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে পিছিয়ে পড়া সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও দলিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই জাতীয় সংসদের দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্পর্কিত সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি করে দিয়েছেন।
রবিবার (৯ অক্টোবর) বিকালে এপিপিজির একটি প্রতিনিধি দল রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের শিমুলঝুড়ি গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানে দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও নেচে-গেয়ে এপিপিজির প্রতিনিধি দলকে বরণ করে নেন।
এসময় দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতারা তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে প্রতিনিধি দলের সদস্যদেরকে বলেন, ভাষা, ধর্মাচার, পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা সবকিছুতেই ভিন্নতা নিয়ে বসবাসকারী এ জনগোষ্ঠী আজও বাংলাদেশে ভূমির মালিকানা পায়নি। ভূমি উন্নয়নের নামে তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তারা দিন দিন ভূমিহীন হয়ে পড়ছে। সরকারি সুবিধাবঞ্চিত এ জনগোষ্ঠী বহুকাল ধরে স্থায়ী আবাসভূমি থেকে বঞ্চিত। এখন তারা প্রতিনিয়ত শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এদেশে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে নয় বরং সাংবিধানিকভাবে সমান নাগরিক অধিকারের দাবি জানান তারা।
এসজি